বেড়েছে কিউলেক্স মশার উপদ্রব ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম বাড়াতে হবে

20

 

নগরীতে এখন কোথাও বসা যাচ্ছেনা, হাঁটা যাচ্ছেনা- সেই বাসা হোক কিংবা অফিস। এমনকি মাঠেঘাটেও বসা দায়। এরমধ্যে বেড়ে চলছে মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। কোথাও কোথাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে কিছুদিন আগে। কিন্তু মশা মারার কামান দাগাতে তেমন দৃষ্টিতে পড়ছেনা নগর কর্তৃপক্ষের। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নগরবাসী। এমনিতে সারা বছর নগরীতে মশার উপদ্রবের বিষয়টি বহুল আলোচিত। জনমনে মশার বৃদ্ধিতেই আতঙ্ক বেড়ে যায়, কারণ মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু বা চিকনগুণিয়া মানুষের জীবন মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়। সুতরাং শীতকালের এ মশা এডিস প্রজাতির হলে, আতঙ্কিত হবার অনেক কারণে রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র গত দুইমাস আগে মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলেছিলেন, মশার ওষুধের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার কথা বলেছিলেন। চবির একদল গবেষক এ নিয়ে কাজও করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে সব কথার কার্যকারিতা কতটুকু হল-সেই ব্যাপারে জানা যায় নি। তবে সম্প্রতি জানা গেছে, গবেষকদের সুপারিশকৃত মশার ওষুধের খোঁজ পেয়েছে চসিক। আমরা আশা করি, চসিক কর্তৃপক্ষ নগরবাসীকে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষায় ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম জোরদার করবেন। আমরা দেখেছি, করোনাভাইরাস মোকাবিলা এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশন বেশ উদ্যোগী ছিলেন। তবে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে অবহেলা মেলেরিয়াসহ অন্য রোগ ছড়াতে পারে, বিধায় এদিকেও চসিক কর্তৃপক্ষের নজর রাখা জরুরি। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকায় প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন ৮০ থেকে ৯০ জন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিউলেক্স মশার উৎপাত। অপরদিকেব চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও আক্রান্তের সংখ্যা ১০ থেকে ২০ জন। বাস্তবতা হচ্ছে, একজন নাগরিকের পক্ষে কোনটি এডিস আর কোনটি কিউলেক্স মশা তা শনাক্ত করা সম্ভব নয়। ফলে যে কোনো মশার অতিরিক্ত উপদ্রবে মানুষ ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন হবে, এটাই স্বাভাবিক। কাজেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বস্তুত নগরবাসী করোনা মহামারি, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, শীতকালীন ধুলাবালুর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। এর সঙ্গে কিউলেক্স মশার উপদ্রব নগরবাসীর কাছে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। গত বছর কিউলেক্স মশার প্রজনন মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মশা জন্মেছিল। এবার এটা আরও বেশি হতে পারে, এমনই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। এ পরিস্থিতিতে সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা থেকেই যায়।
বর্তমানে নগরবাসী বাসা বা কর্মস্থল কোথাও কিউলেক্স মশার উপদ্রব থেকে নিস্তার পাচ্ছে না। কয়েল জ্বালিয়ে, ইলেক্ট্রিক কয়েল বা গুডনাইট জ্বালিয়ে, ওষুধ স্প্রে করেও মশার হাত থেকে নিস্তার মিলছে না। এ অবস্থায় কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে জলাশয়, নর্দমা ও আবর্জনা পরিষ্কার করার পাশাপাশি লার্ভা নিধন গুরুত্বপূর্ণ। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কার্যক্রম জোরদারভাবে চালানো হচ্ছে দাবি করা হলেও ভুক্তভোগীরা বলছেন, সিটি করপোরেশনের কাজ লোক দেখানো। প্রধান সড়কের পাশ ধরে ওষুধ স্প্রে করা হলেও ভেতরের গলিতে মশক নিধন কর্মীদের খুব একটা দেখা মেলে না। অভিযোগ রয়েছে, অভিজাত এলাকাকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়, অন্য এলাকাকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
জলাশয়সহ মশার প্রজননের জায়গাগুলো সারা বছর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা না হলে মশার উৎপাত নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। বদ্ধ জলাশয়, কাভার্ড ড্রেন, বক্স-কালভার্ট, প্লাস্টিক বর্জ্য ও টায়ার, ডাবের খোসায় জমে থাকা পানিতে মশার বংশবিস্তার ঘটে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ-বাসাবাড়ি, অফিস, বাজার, উন্মুক্ত স্থান, সড়ক, পার্ক, খেলার মাঠ, সর্বত্রই এখন মশার রাজত্ব। সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্য বছর জানুয়ারিতে কিউলেক্স মশার প্রাদুর্ভাব দেখা যেত। এবার নভেম্বরে সেটা লক্ষ করা যাচ্ছে। বিষয়টিকে সিটি কর্তৃপক্ষকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। সিটি কর্পোরেশন এতোদিন ওষুধের মান নিয়ে নানা কথা বললেও এখনও ভালো মানের ওষুধের পাওয়া যাচ্ছে বিধায় মশা মারার ওষুধের মান নিয়ে বিতর্ক শুনতে চায় না। এ মুহূর্তে নগরবাসী মশার উৎপাত থেকে রেহাই চায়। মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসীকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নেবে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।