বেড়েছে ওষুধের দামও সাধারণ মানুষের আর্থিক দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা শেষ হবে কবে ?

10

দাম বাড়েনি এমন কোন পণ্য দেশের বাজারে নেই। ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যমূল্য, শিক্ষা সামগ্রি, নির্মাণ সামগ্রিসহ সবকিছু। করোনাকালে অন্য সব কিছুর দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও সেই সময়ের প্রয়োজনীয় সব ওষুধের দাম হয়ে উঠেছিল আকাশছোঁয়া। এবার দামবাড়ার প্রতিযোগিতায় ওষুধও স্থান করে নিল। সেই সাথে দুর্ভাগা মানুষের জীবনে দূর্ভোগ আর বিড়ম্বনার আরেকটি ধাক্কা সয়ে নিতে হচ্ছে। নি¤œ আয়ের সাধারণ রোগীরা এতে চরম বিপাকে পড়েছে। তারা কি বাজার সামলাবে, নাকি ওষুধ কিনে কোনরকম বেঁচে থাকার উপায় খুঁজবে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, না ছাল না কূল-কোনটিই ঠিকমত টিকিয়ে রাখা দায় হয়ে পড়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সম্প্রতি ৫৩টি ওষুধ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বিষয়টিকে মূল্য বৃদ্ধি বলতে নারাজ। তাদের দাবি, ওষুধে ব্যবহৃত কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় এর সঙ্গে সমন্বয় করে ওষুধের দাম কিছুটা ‘আপডেট’ করা হয়েছে। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, শুধু কাঁচামালের দামই বাড়েনি, প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল, পরিবহন ও ডিস্ট্রিবিউশন ব্যয়, ডলারের বিনিময় মূল্য, মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা কারণেই ওষুধ উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। এসব কারণে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে দাম বাড়ানোর স্বাভাবিকতাকে অতিক্রম করায় মানুষের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। এ মুহূর্তে মাত্রাতিরিক্ত দাম দিয়ে ওষুধ ক্রয় মানুষের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। সূত্র জানায়, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বাড়াতে না দিলে উৎপাদন বন্ধের হুমকিও দিয়েছিল। ফলে ওষুধ প্রশাসনকে অধিদপ্তর নিরুপায় হয়ে দাম বাড়ানোর সুযোগ দিতে হয়েছে। সবকিছুর ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন আচরণ সত্যিই দুঃখজনক। সর্বশেষ ২০১৫ সালে কয়েকটি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছিল। আর চলতি বছরের ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির ৫৮তম সভায় অর্ধশতাধিক ওষুধের পুননির্ধারিত দাম অনুমোদন করা হয়। অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দেয় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের করা প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০টি জেনেরিকের ৫৩ ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার প্যারাসিটামলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫০ থেকে শতভাগ। মাত্র ৪০ টাকার এমোক্সিসিলিনের দাম করা হয়েছে ৭০ টাকা, ২৪ টাকার ইনজেকশন ৫৫ টাকা। ৯ টাকার নাকের ড্রপের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৮ টাকা। কোনো কোনো ওষুধের দাম ৯৯ থেকে ১৩২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে অবশ্য এখনো পর্যন্ত সরকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি। কিন্তু বাজারে মৌখিক এই সিদ্ধান্তের প্রভাব অনেক আগেই পড়ে গেছে। দেশের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে সরকারের হাতে। তবে ওষুধের এ মূল্য বৃদ্ধির আগে অন্তত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে মানুষকে তা অবহিত করার নিয়ম। ওষুধ কোনো বিলাসী ভোগ্যপণ্য নয়। এর ওপর মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করে থাকে। এক্ষেত্রে ক্রেতার স্বার্থ রক্ষা করাই অনেক বেশি জরুরি। ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে কোম্পানিগুলোর উচ্চাভিলাষী বিপণন নীতি ও অধিক মুনাফা করার প্রবণতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ওষুধ কোম্পানিগুলোর অতি মুনাফা প্রবণতার বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এটি অনৈতিক। সরকারকে অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
উদ্বেগের বিষয়, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে দেশে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। কার্যত প্রায় গোটা ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ওষুধ শিল্প মালিক সমিতি। সরকারের তদারকি ও আইনের দুর্বলতার কারণেই ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি। এজন্য আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। বৈশ্বিক এ দুর্যোগের সময় কেউ যদি ওষুধের সংকট তৈরি করে বা বেশি দাম নেয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এটা মানুষের জীবনরক্ষার উপকরণ। কাজেই ওষুধের ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা ও মানবিক হওয়া প্রয়োজন। সরকারের উচিৎ সাধারণ জনগণের চিকিৎসাসেবার অতি প্রয়োজনীয় এ ওষুধ যেন ক্রয় ক্ষমতার বাইরে না যায় সেদিকে মনোযোগ দেয়া।