বেড়েছে আদা-রসুনের দাম সংকট ব্রয়লার মুরগীর

16

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজার। উর্ধ্বগতির এই লাগাম কোনভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। এ সপ্তাহে আবার নতুন করে বেড়েছে ভোজ্যতেল, আদা, পেঁয়াজ, চিনি, আলুর দাম। পাশাপাশি গত দুই সপ্তাহ ধরে বেড়েই চলেছে চালের দাম। এমন পরিস্থিতিতে অস্বস্তিতে পড়েছেন ভোক্তারা। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে। বাজারের এমন পরিস্থিতি যেন দেখার কেউ নেই। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার নগরীর খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই এবং রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।
বাজারগুলোতে সপ্তাহের ব্যবধানে শীতকালীন সবজি কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। গতকাল প্রতিকেজি বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, টমেটো ৩৫ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, শিমের বিচি ১১০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, পেঁয়াজপাতা (প্রতিআঁটি) ২০ টাকা, মূলা ২০ টাকা ও পেঁপে ২০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে প্রতি আঁটি সরিষা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১৫ টাকা, লাল শাক ১০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বেড়েছে আদা-রসুনের দাম, কমেছে পেঁয়াজ :
আমদানি সংকটের কথা বলে প্রতিদিন বেড়ে যাচ্ছে আদা ও রসুনের দাম। বাজারে দেশি আদার চাপ একটু বাড়লেও বাজারশূন্য বাইরের আদা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানিকৃত চায়না আদা কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বেড়ে ২৬০ টাকা এবং থাইল্যান্ডের আদা ৪০ টাকা বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার আমদানিকৃত রসুন বিক্রি ষ পৃষ্ঠা ২, কলাম ৪.
ষ শেষ পৃষ্ঠার পর
হয়েছে ১৭০ টাকা কেজিতে। তবে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ রয়েছে। অন্যদিকে খাতুনগঞ্জে প্রতিকেজি পেঁয়াজে ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩১ থেকে ৩৩ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা দরে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ আছে। এ সপ্তাহে কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা কমেছে।

ব্রয়লার মুরগির সংকট :
গত সপ্তাহের দামেই সকল ধরনের মাংস বিক্রি হলেও সংকট ছিল ব্রয়লার মুরগির। ব্যবসায়ীদের মতে, শীতকালে ব্রয়লার মুরগি ফার্মের মালিকরা তেমন মুরগি পালন করে না। কারণ শীতে মুরগির বাচ্চাগুলো মারা যায়। তাই বর্তমানে অনেক ফার্ম বন্ধ। তার মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বেড়ে গেছে। ফলে বাজারে মুরগির সংকট রয়েছে। গতকাল ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা, সোনালি মুরগি ২২০ টাকা ও দেশি মুরগি ৪৫০ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে হাঁড়ছাড়া গরুর মাংস ৮০০ টাকা ও হাঁড়সহ ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে এক হাজার টাকা কেজিতে।
মাছবাজারে দামের তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। গত সপ্তাহের দামে প্রায় সব মাছ বিক্রি করা হয়েছে। তবে দেশিয় মাছের যোগান ভালো থাকলেও সামুদ্রিক মাছ কম দেখা গেছে। পাবদা ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, পোয়া ৩০০ টাকা, চিতল ৪০০ টাকা, কোরাল (সাইজভেদে) ৩২০ থেকে ৮০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৫০ টাকা, বাটা ৩২০ থেকে ৬০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ৮৫০ টাকা, কাতলা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, চিংড়ি ৫৮০ থেকে ৭৫০ টাকা, শোল ৫৫০ টাকা, টাকি ৪০০ টাকা, শিং ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মাছ ব্যবসায়ী মো. আতাউর বলেন, শীতকালে জেলেরা তেমন সমুদ্রে যাচ্ছে না। তার মধ্যে নৌ পুলিশ অভিযান চালায়। ফলে সামুদ্রিক মাছ বাজারে কম।

বাড়লো ডাল ও ভোজ্যতেলের দাম :
খাতুনগঞ্জের বাজারে সকল ধরনের ডালের দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানিকৃত ডাল ৯ শতাংশ ও দেশি ডাল ১৭ শতাংশের উপরে বেড়েছে। আমদানিকৃত বড় দানা মসুর ডাল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা ও মাঝারি দানা ১১৫ থেকে ১২০ টাকা ও নেপালি মসুর ডাল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ছোলা (মানভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। তাছাড়া সয়াবিন (লুজ) ও বোতলে লিটার প্রতি ১৪ শতাংশের উপরে বেড়েছে। গতকাল পাইকারি বাজারে লিটার প্রতি সয়াবিন (লুজ) ১৬৫ থেকে ১৮৭ টাকা ও ১ লিটারের মোড়কজাত সয়াবিন (বোতল) ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

ফের বেড়েছে চালের দাম :
এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা করে বেড়েছে। পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি নাজিরশাইল চাল ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৬৪ টাকা কেজি। একইভাবে মিনিকেট চালও বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা কেজিতে। এছাড়া জিরাশাইল ৭৫ টাকা, কাটারি সিদ্ধ ৬৮ টাকা। সবচেয়ে চড়াদামে বিক্রি হয়েছে চিনিগুড়া। গতকাল পাইকারি বাজারে চিনিগুড়া ১৩৫ টাকার উপরে বিক্রি হয়েছে। আর মোটা চাল ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ওয়েবসাইটের দেয়া তথ্যমতে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম ৫ শতাংশের উপরে বেড়েছে, মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ৪ শতাংশের উপরে। আর মোটা চাল (স্বর্ণা/চায়না/ইরি) ২ শতাংশের উপরে বেড়েছে।
চাক্তাই রাইচমিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রফিক উল্লাহ পূর্বদেশকে বলেন, ‘চলতি সপ্তাহে উত্তরবঙ্গ থেকে তেমন চাল আসেনি। তাছাড়া মিনিকেট চালেরও সংকট রয়েছে। যে মিনিকেট ছিলো ৯২ টাকা তা আজকের বাজারে ১৩২ টাকা ছাড়িয়েছে। দামি চালগুলোর বাজার এখন কর্পোরেট কোম্পানিরা নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে মিনিকেট এখন আর সাধারণের নাগালের মধ্যে নেই। তাছাড়াও চালের আমদানি কম। বাইরে থেকে চাল আসছে না। নতুন চাল না আসা পর্যন্ত কয়েকদিন চালের দাম বাড়তি থাকবে।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক আনিছুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত বাজার তদারকি করছি। ব্যবসায়ীদের ক্রয় ও বিক্রয়মূল্য সবসময় পর্যবেক্ষণ করে আসছি। কোন পণ্য অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার সুযোগ নেই। তাছাড়াও কোন ভোক্তা যদি আমাদের অভিযোগ করেন, তবে আমরা অভিযানের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’