বেপরোয়া মোটরসাইকেল আইন অমান্যেও এগিয়ে

17

মনিরুল ইসলাম মুন্না

নগরীতে যে হারে পরিবহন বাড়ছে তার বেশিরভাগই মোটরসাইকেল। এ পরিবহনের মাধ্যমে সহজে ও স্বল্প সময়ে দূরত্ব অতিক্রম করা যায় বলে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ ছাড়াও সরকার মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে দেয়ায় সহজলভ্য হয়ে পড়েছে এ যান। ফলে লাইসেন্সবিহীন চালকের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন।
ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযানে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও কমেনি মোটরসাইকেল চালকদের দৌরাত্ম্য। এদিকে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে ২ হাজার ১১৬টি মামলা ও ৬৫৮টি জব্দ করেছে সিএমপি।
ট্রাফিক বিভাগের তথ্যমতে, সড়কে সবচেয়ে বেশি মামলা হয় মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে। হেলমেট, লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। এমনকি রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল জব্দ করে ড্যাম্পিংয়ে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, সড়কে অন্যান্য যানবাহনের দুর্ঘটনার চেয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হচ্ছে মোটরসাইকেল চালক ও পেছনে বসা যাত্রীকে। প্রতিদিন খবরের কাগজে দেশের কোনো না কোনো জায়গায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। অধিকাংশ মোটরসাইকেল চালকই নিয়ম ভঙ্গ করে থাকেন। নিয়ম ভঙ্গের তালিকায় সবার উপরেই রয়েছেন মোটরসাইকেল চালকরা। একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চালাতে গিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় পড়ছেন। দুর্ঘটনার অনুঘটক হিসেবেও কাজ করছেন।
জাতীয় দৈনিক, বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা ও ইলেকট্রনিক্স চ্যানেলে প্রকাশিত-প্রচারিত তথ্যের পাশাপাশি সারাদেশে সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবীদের তথ্যানুসারে, বাইক লেইন না থাকা, নিয়ম না মেনে নির্ধারিত গতির চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে গাড়ি চালানো, যাত্রীদের অসাবধানতার সাথে পথচলাসহ বিভিন্ন কারণে গত এক মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১৭ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ৩ হাজার ২৮০ জন। এরমধ্যে ৬৭৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত এবং ৫০৯ জন আহত হয়েছেন।
এছাড়াও নগরীর রাস্তাগুলোতে যানজট সৃষ্টিতেও মোটরসাইকেল রাখছে ভ‚মিকা। মোটরসাইকেলের কারণে কমে যাচ্ছে অন্যসব যানের গতিও। বিশেষ করে সিগন্যাল উপেক্ষা করে ছুটে শত শত মোটরসাইকেল।
ট্রাফিক বিভাগ বলছে, সা¤প্রতিক সময়ে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে। তা নিয়ন্ত্রণে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। মোটরসাইকেলের কারণে রাস্তা এখন ঝুঁকির মুখে। মোটরসাইকেলের এ দৌরাত্ম্যরোধে গত ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ সিদ্ধান্ত নেয় যে, অন্তত শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে কেউ মোটরসাইকেল কিনতে পারবে না। সড়কের নিরাপত্তায় মোটরসাইকেল বিক্রির সময় ক্রেতার ন্যূনতম শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি না তা বিক্রেতাকে নিশ্চিত করতে হবে। বিআরটিএ’র এ সিদ্ধান্ত কতোটা কার্যকর সে সম্পর্কিত পরিসংখ্যান নেই প্রতিষ্ঠানটির কাছে।
গত কয়েকদিনে নিউ মার্কেট মোড়, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, বহদ্দারহাট, কাজীর দেউড়ি, ওয়াসা, জিইসির মোড়, আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার, আগ্রাবাদ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব সিগন্যালে মোটরসাইকেল চালকরা ওঁৎ পেতে থাকে ক্রসিং অতিক্রম করার জন্য। তারা কোনো রকম ট্রাফিক সিগন্যাল মানে না। সুযোগ পেলেই দ্রæত সিগন্যাল ডিঙিয়ে ছুটে। আরেকটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে সড়কজুড়ে চালকরা নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী মোটরসাইকেল চালায়। এতে চলমান গাড়িগুলোর চালকরা হকচকিয়ে যায়। এজন্য প্রায়ই রাস্তায় মোটরসাইকেল চালকদের সঙ্গে প্রাইভেট গাড়ি থেকে শুরু করে অন্যান্য যানবাহনের চালকদের বাকবিতÐায় লিপ্ত হতেও দেখা যায়। মোটরসাইকেল চালকদের কারণে চট্টগ্রামের রাস্তায় হঠাৎ ব্রেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছে যানবাহনগুলো।
গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি মাসের (অক্টোবর) ১৯ তারিখ পর্যন্ত শুধুমাত্র ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগে মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে ১৩৬৯টি, আটক হয়েছে ৪৬২টি, উত্তর বিভাগে মামলা হয়েছে ৩৯৭টি, আটক ১১৩টি, বন্দর বিভাগে ২৩২টি মামলা হলেও কোন জব্দ নেই এবং পশ্চিম বিভাগে ১১৮টি মামলা ও ৮৮টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।
ট্রাফিক বিভাগের তথ্যমতে, মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ মামলা হয় রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি, হেলমেটবিহীন চালনা ও ড্রাইভিং লাইসেন্স সঙ্গে না রাখার কারণে। এছাড়া যেসব মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নেই, সেগুলোকে সরাসরি জব্দ করে ড্যাম্পিংয়ে প্রেরণ করেন ট্রাফিক সার্জেন্টরা।
এ বিষয়ে সিএমপি ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের পরিদর্শক (প্রশাসন) অনিল বিকাশ চাকমা পূর্বদেশকে বলেন, ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরাতে ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণে আমাদের একটা সার্বিক অ্যাপ্রোচ আছে। এটি মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রেও। তবে স¤প্রতি শহরে মোটরসাইকেলের আধিক্য বেড়েছে। তারা অনেক সময় সিগন্যাল লঙ্ঘন করে তড়িঘড়ি পার হতে চায়। এখন মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। আইন অমান্যকারীদের জরিমানা ও জব্দের আওতায় আনা হচ্ছে।
সিএমপি ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জয়নুল আবেদীন পূর্বদেশকে বলেন, চেকপোস্টে অন্যান্য যানবাহনের চেয়ে মোটরসাইকেলই বেশি ধরা পড়ে। ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ করার দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে মোটরসাইকেল চালকরা। এদের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। এক সময় হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল চালাতেন চালকরা। তবে এখন ৯৫ শতাংশের বেশি চালক ও পেছনের যাত্রী হেলমেট পরছেন।