বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহার চট্টগ্রাম ওয়াসা এমডির

22

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে নানাভাবে সমালোচিত হওয়ার পর এবার সেই প্রস্তাব থেকে সরে আসলেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। সমালোচনার মুখে গত বৃহস্পতিবার ওয়াসা বোর্ডের ৬৬তম সভায় নিজের বেতন বাড়ানোর দাবিটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এমডি একেএম ফজলুল্লাহ। বর্তমান বেতনে তিনি দায়িত্ব পালন করে যাবেন। এর আগে তিনি নিজের বেতন দেড়শ শতাংশ বাড়ানোর দাবি করেছিলেন।
বর্তমানে একেএম ফজলুল্লাহর মূল বেতন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর পাশাপাশি বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, আপ্যায়ন, বিশেষ ভাতাসহ অন্যান্য মিলিয়ে মোট ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা পান তিনি। সেই মূল বেতন দেড়শ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করার জন্য গত বছরের মে মাসে ওয়াসা বোর্ডকে চিঠি দেন তিনি। ২০১৬ সালে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির পর থেকে এই বেতন পেয়ে আসছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে ওয়াসা এমডির কোনো ইনক্রিমেন্ট না হওয়াতে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির আবেদন করেছিলেন তিনি। তাছাড়া ঢাকা ও খুলনা ওয়াসার এমডির বেতন চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির বেতনের চেয়ে বেশি। বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব ওয়াসা বোর্ড গ্রহণ করলে ফজলুল্লাহর বেতন হতো ৬ লাখ টাকার উপরে। গত বছরের ৪ মে অনুষ্ঠিত ওয়াসা বোর্ডের ৬১তম সভায় এমডির বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বোর্ড সদস্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সত্যজিত কর্মকারকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি করা হয়। তবে কমিটি বেতন বাড়ানোর বিষয়ে সুপারিশ করতে সেভাবে আগ্রহ দেখায়নি। আট মাস ধরে বেতন বাড়ানোর বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না দেখে এ বছরের ২৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ৬৫তম বোর্ড সভায় নতুন করে প্রস্তাবটি তোলেন এমডি। ওয়াসা এমডির বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে বোর্ড সভায় বেতন বাড়ানোর সুপারিশ না করে এমডির বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নতুন করে চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। ৬৬তম সভায় বেতন বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সভায় এমডি নিজেই মৌখিকভাবে বেতন বাড়ানোর দাবি প্রত্যাহার করে নেন।
এ ব্যাপারে এমডি একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, করোনার এই সময়ে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির আবেদন করা ঠিক হবে না। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো নয়। তাই বেতন-ভাতা বৃদ্ধির আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
ওয়াসার বোর্ড সদস্য জাফর আহমদ সাদেক বলেন, এমডি বেতন বাড়ানোর যে আবেদন করেছিলেন, তিনি সেটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আগের বেতনেই তিনি দায়িত্ব পালন করে যাবেন। তিনি বলেছেন, ঢাকা ও খুলনা ওয়াসার এমডির বেতন বেশি, তাই ওনিও চেয়েছিলেন। যেহেতু এটা নিয়ে কমিটি হয়েছে, দরকার নেই।
গত এক দশকে চট্টগ্রাম ওয়াসায় চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি সররবরাহের সক্ষমতা অর্জন করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। যদিও এখনো পুরো শহর ওয়াসার পাইপলাইন বা সার্ভিসের আওতায় আসেনি। এখনো শহরের বহু জায়গায় পানির জন্য হাহাকার রয়েছে। তাছাড়াও পানি চুরি, অপচয়, গড় বিল, গ্রাহক হয়রানিসহ নানা বিষয়ে বিস্তার অভিযোগ আছে ওয়াসার বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে ওয়াসার তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসরে যান একেএম ফজলুল্লাহ। এর ১১ বছর পর ২০০৯ সালের ৬ জুলাই চেয়ারম্যান পদে এক বছরের জন্য ওয়াসাতে নিয়োগ পান তিনি। আরও এক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসাতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ তৈরি করা হলে সেই পদে নিয়োগ পান একেএম ফজলুল্লাহ। এরপর সাতবার পুনর্নিয়োগ পেয়ে ১১ বছর ধরে এই পদে আছেন। সর্বশেষ ২০২০ সালে তিনবছরের জন্য নিয়োগে পেয়েছেন তিনি।