বেগম সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯)

50

কবি, বুদ্ধিজীবী, সমাজনেত্রী। সুফিয়া কামালের জন্ম ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে এক অভিজাত পরিবারে। তাঁর পিতা সৈয়দ আবদুল বারি পেশায় ছিলেন উকিল। সুফিয়ার যখন সাত বছর বয়স তখন তাঁর পিতা গৃহত্যাগ করেন। নিরুদ্দেশ পিতার অনুপস্থিতিতে তিনি মা সৈয়দা সাবেরা খাতুনের স্নেহ-পরিচর্যায় লালিত-পালিত হতে থাকেন। ১৯২৩ সালে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে সুফিয়ার বিয়ে হয়। পরে তিনি ‘সুফিয়া এন হোসেন’ নামে পরিচিত হন। সৈয়দ নেহাল হোসেন সুফিয়াকে সমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চায় উৎসাহ দেন। সাহিত্য ও সাময়িক পত্রিকার সঙ্গে সুফিয়ার যোগাযোগও ঘটিয়ে দেন তিনি। ফলে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯২৩ সালে তিনি রচনা করেন তাঁর প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’, যা বরিশালের তরুণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯২৫ সালে বরিশালে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সুফিয়ার সাক্ষাৎ হয়। এরপূর্বে গান্ধীর স্বাধীনতা সংগ্রামের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি কিছুদিন চরকায় সুতা কাটেন। তিনি এ সময় নারীকল্যাণমূলক সংগঠন ‘মাতৃমঙ্গল’-এ যোগ দেন। সুফিয়া তাঁর স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় গেলে সেখানে বিশেষ বিশেষ বাঙালি ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। তাদের একজন হলেন কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬)। তিনি সুফিয়ার কবিতা পড়ে মুগ্ধ হন এবং সেগুলি পত্রিকায় প্রকাশের জন্য তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেন। সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন (১৮৮৮-১৯৯৪) ১৯২৬ সালে তাঁর প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশ করেন।
১৯৩১ সালে সুফিয়া মুসলিম মহিলাদের মধ্যে প্রথম ‘ভারতীয় মহিলা ফেডারেশন’-এর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩২ সালে তাঁর স্বামী মারা যান। ১৯৩৩-৪১ পর্যন্ত তিনি কলকাতা কর্পোরেশন প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এই স্কুলেই তাঁর পরিচয় হয় প্রাবন্ধিক আবদুল কাদির (১৯০৬-১৯৮৪) এবং কবি জসীমউদ্দীন (১৯০৩-১৯৭৬)-এর সঙ্গে। ১৯৪৬ সালে কলকাতায় যখন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধে, তখন দাঙ্গাপীড়িতদের সাহায্যের ক্ষেত্রে সুফিয়া সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজ এ একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার ব্যাপারে সাহায্য করেন। পরের বছর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকা প্রকাশ করলে তিনি তার প্রথম সম্পাদক নিযুক্ত হন। এ বছরেরই অক্টোবর মাসে তিনি সপরিবারে ঢাকা চলে আসেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সুফিয়া কামাল সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। শুধু তা-ই নয়, পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির ওপর দমননীতির অঙ্গ হিসেবে রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে তিনি তার বিরুদ্ধেও তীব্র প্রতিবাদ জানান। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষে তিনি ‘সাংস্কৃতিক স্বাধিকার আন্দোলন’ পরিচালনা করেন। ১৯৬৯ সালে ‘মহিলা সংগ্রাম পরিষদ’ (বর্তমানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ) গঠিত হলে তিনি তার প্রতিষ্ঠাতাপ্রধান নির্বাচিত হন এবং আজীবন তিনি এর সঙ্গে জড়িত থাকেন।
সুফিয়া কামাল একালে আমাদের কাল নামে একটি আত্মজীবনী রচনা করেছেন। তাতে তাঁর ছোটবেলার কথা এবং রোকেয়া-প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছে। তিনি অনেক ছোটগল্প এবং ক্ষুদ্র উপন্যাসও রচনা করেছেন। কেয়ার কাঁটা (১৯৩৭) তাঁর একটি উলে­খযোগ্য গল্পগ্রন্থ। সূত্র: বাংলাপিডিয়া