বেইলি রোডে বিভীষিকা, নিহত ৪৬

14

পূর্বদেশ ডেস্ক

রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪৬ জন নিহত হন। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে এ ভবনে আগুন লাগে। এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ঢাকা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, নিহত ৪৬ জনের মধ্যে থেকে ৪০ জনের লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ পর্যন্ত ওই ৪০ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, ৪৬টি লাশের মধ্যে ৪০ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তাদের সবাইকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ছয়টি লাশের মধ্যে তিনটি লাশ শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে। তবে তিনটি লাশ শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
অশনাক্ত লাশের মধ্যে এক নারী ও শিশুর মরদেহের দাবি নিয়ে কেউ আসেনি বলে জানিয়েছেন ঢাকার অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেট একেএম হেদায়েতুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা অনুমান করছি তারা মা-মেয়ে। চেহারা একইরকম। তাদের কোনো দাবিদার দুপুর পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
এদিকে পুড়ে অঙ্গার হওয়া যে লাশগুলো চেনা যাচ্ছে না, তাদের মধ্যে দুইজনের দাবি নিয়ে মর্গে এসেছেন স্বজনেরা। তবে ওই দাবিদারদের লাশ না দিয়ে তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ঢাকার অতিরিক্ত জেলা মেজিষ্ট্রেট হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, দুজনকে শনাক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় তাদের দাবিদারদের ডিএনএ করার পর লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে। যে দুজনের লাশের দাবি করা হয়েছে, স্বজনেরা তাদের নাম বলেছে- এ কেএম মিনহাজ (২৪) ও অভিশ্রুতি শাস্ত্রী (২৫)। খবর বিডিনিউজ’র
এদিকে নিহতের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও মাত্র চারজনের পরিবার সেই অর্থ নিয়েছে বলে জানান হেদায়েতুল ইসলাম। ৩৪ জনের দাফন, কাফনসহ আনুষঙ্গিক খরচের জন্য টাকা নিতে বলা হলেও তারা স্বাবলম্বী জানিয়ে সেই অর্থ নেননি। এছাড়া আহত হয়ে যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আহত এরকম ১৩ জনকে দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে আগুন লাগে। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় ছিল বিরিয়ানির পরিচিত খাবার দোকান ‘কাচ্চি ভাই’ এর শাখা, পোশাকের ব্র্যান্ড ইলিয়েন, নিচের তলায় স্যামসাং এর শোরুমসহ আরও বেশ কিছু দোকান।
স্যামসাংয়ের শোরুমের পাশে রয়েছে একটি কফি শপ। এরকম কফির দোকানসহ ফাস্টফুডের অনেকগুলো দোকান ও রেস্তোরাঁ রয়েছে ভবনটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিভিয়ে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। এরপরই আসতে থাকে একের পর এক মৃত্যুর খবর।
আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আটজন ভর্তি আছেন। বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আটজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এদিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকান্ডে প্রায় অর্ধশত প্রাণহানির ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- ভবনটির নিচতলার চা-কফির দোকান ‘চুমুক’র দুই মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান রিমন এবং বিরিয়ানি রেস্তোরাঁ ‘কাচ্চি ভাই’র বেইলি রোড শাখার কর্মকর্তা জয়নুদ্দিন জিসান।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) খ মহিদ উদ্দিন।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আটতলা গ্রিন কোজি কটেজের নীচতলায় অবস্থিত ‘চুমুক’ নামের চা-কফির দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তারা স্থানীয়দের কাছ থেকে সংগৃহীত একটি ভিডিওকে তদন্তের বড় আলামত হিসেবে দেখছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ভবনে নিচ তলায় আগুন লেগেছে, আর তা নেভানোর চেষ্টা করছেন কেউ কেউ।
ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের সিনিয়র স্টাফ অফিসার শাহজাহান শিকদার বলেন, একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। আগুনের সূত্র খুঁজতে গিয়ে এটি পাওয়া যায়। এটি স্থানীয় লোকজন আমাদের দিয়েছে। আমাদের করা ভিডিও না।
এটি একটি সূত্র, তবে চূড়ান্ত নয়। তদন্তের সময় অনেকের সাথে কথা বলতে হবে, আরও তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তারপরেই বলা যাবে প্রকৃত ঘটনা।
গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের ভবনটিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃতুর খবর মিলেছে। আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আটজন ভর্তি আছেন। বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আটজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ডিএমপির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার খ মহিদ উদ্দিন বলেন, ভবনের মালিকের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, এটা আমরা বলছি না। আমরা তদন্ত করে দেখছি। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না পেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।