বৃষ্টি ও জোয়ারে নগরীতে জলাবদ্ধতা, চরম দুর্ভোগ

36

এম এ হোসাইন

লঘুচাপ ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে কয়েকদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে ভারী বৃষ্টি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানি। ফলে তলিয়ে গেছে নগরীর অনেক নিম্নাঞ্চল। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে পাহাড়ধসের ঘটনাও।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আগামী কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। তবে এটা ধীরে ধীরে কমে আসবে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় অবস্থান করছে। এটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, সুস্পষ্ট লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল বাংলাদেশ হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক, হালিশহর, চকবাজার, বাকলিয়া, চান্দগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় নিচু সড়কগুলোতে হাঁটুপানি দেখা গেছে। লকডাউনের মধ্যে জরুরী প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষকে পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে। টিকাদানকেন্দ্র, ব্যাংক, হাসপাতালমুখী মানুষকে হাঁটুপানি মাড়িয়ে চলাচল কিংবা রিকশায় গন্তবে পৌঁছাতে দেখা গেছে।
শুধু নগরে নয়, পানিতে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন উপজেলার রাস্তাঘাটও। ভারী বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, রাউজানসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। কোথাও ডুবে গেছে সড়ক। কোথাও বাসা-বাড়ির নিচতলা, দোকানপাটে ঢুকেছে পানি। পাহাড়ি এলাকাগুলোতে পানির সঙ্গে নেমে এসেছে প্রচুর বেলেমাটিও। দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
পতেঙ্গা প্রধান আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ ও পূর্বাভাস কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি পাল জানান, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত এবং নদী বন্দরকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।
এদিকে টানা ভারী বর্ষণের ফলে নগরের লালখানবাজার ওয়ার্ডের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি সড়ক ও আমবাগান পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। পাহাড়ধসের কারণে চলাচলে তৈরি হয় প্রতিবন্ধকতা। ঝুঁকিপূর্ণ ৫ পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
তিনি জানান, নগরের লালখানবাজার এলাকার গরিবুল্লাহ শাহ মাজার এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। তবে একটু দূরে ৫টি পরিবার ছিল। পাহাড়ধসের মাটি তাদের চলাচলের রাস্তায় এসে পড়ে। যার কারণে চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তাই ৫ পরিবারকে আমরা নিরাপদ স্থানে নিয়ে এসেছি।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সে সাথে অধিকাংশ জায়গায় দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ মাঝারী থেকে ভারী বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণও হতে পারে। বাতাসের গতিবেগ দক্ষিণ/দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টার ১২-১৫ কিলোমিটার, যা অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৩৫-৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
জায়ার-ভাটার সময়: আজ শুক্রবার কর্ণফুলী নদীতে প্রথম ভাটা শুরু হবে ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে এবং দ্বিতীয় ভোটা শুরু হবে বিকাল ৫টা ০৫ মিনিটে। প্রথম জোয়ার শুরু হবে সকাল ১১টা ১৬ মিনিটে এবং দ্বিতীয় জোয়ার শুরু হবে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে। জোয়ার ভাটার সময় নদীতে পানির উচ্চতা সর্বনি¤œ ১ দশমিক ১০ মিটার থেকে ৪ দশমিক ৫৯ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।