বৃষ্টির আশঙ্কা, আরও বাড়বে শীতের দাপট

66

পৌষের শুরুতে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহের মধ্যই এবার আপন মহিমায় ধরা দিয়েছে শীত। তবে, প্রথম ইনিংসেই শীতের এই দাপট সব অঞ্চলের বাসিন্দাই কমবেশি অনুভব করেছে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহের বিদায়ে আজ রবিবার থেকে তাপমাত্রার পারদ খানিকটা চড়তে পারে। পারদ-পতনের এই বিরতি নিতান্তই ক্ষণিকের। দুই থেকে তিনদিনের ব্যবধানে দেশের আকাশ পুরোটাই মেঘের দখলে চলে যাবে। তখন বিচ্ছিন্নভাবে উত্তরাঞ্চলসহ কিছু কিছু এলাকায় ইলশে-গুঁড়ি ঝরতে পারে। ওই ইলশে-গুঁড়িতে ভর করেই ডিসেম্বরের শেষে দেশজুড়ে বয়ে যেতে পারে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। তার মানে, দ্বিতীয় ইনিংসে শীতের দাপট সন্দেহাতীতভাবেই বাড়ছে।
অপরদিকে, সূর্যের কিরণ ভূ-ভাগে নেমে আসতে গত শনিবার সকাল থেকেই তিন স্তরে বাধার মুখে পড়ছে। আকাশে ভাসতে থাকা মেঘের সাথে বায়ুমন্ডলের উপরিস্তরে অবস্থান করছে কুয়াশাবেল্ট। তার সাথে যুক্ত হয়েছে লোকালয় ও জলভাগে ঘন কুয়াশার স্তর। যার ফলে, তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও পর্যাপ্ত সূর্যকিরণ ভূ-ভাগে না আসায় তেমন উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছে না। ঘন কুয়াশার কারণে ফেরি, বিমান, নৌ এবং স্থলভাগে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। দেশজুড়ে কয়েকদিনের ব্যবধানে পারদ তুলনামূলকভাবে কিছুটা চড়লেও ঢাকার পূর্বদিক ও ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী এবং রংপুরে শীতের দাপটের হেরফের নাও হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, দেশের ওপর দিয়ে একটি যে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল, সেটি বিদায় নিয়েছে। তবে, উত্তর-পশ্চিম শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ (জেড বায়ু) বেশি সক্রিয় থাকা, মেঘলা আকাশ এবং ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের আলো আসতে পারছে না। বাতাসে জলীয় বাষ্পে আর্দ্রতাও বেশি। ২৫-২৬ তারিখের দিকে সারাদেশে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে এবং বিচ্ছিন্নভাবে ইলশে গুঁড়ির আলামতও রয়েছে। তাই চলতি মাসের শেষের দিকে আবারও শীতের দাপট বাড়তে পারে। তখন মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার দৃশ্যপটে বলেছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও তৎসংলগ্ন পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আর পূর্বাভাসে বলা হয়, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানতঃ শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। রাজশাহী, পাবনা, যশোর, তেঁতুলিয়া ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে বয়ে চলা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
অধিদপ্তরের রেকর্ডকৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তুরে হাওয়ায় ডিসেম্বরের শুরু থেকেই তাপমাত্রার পারদের পতন শুরু হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ ডিসেম্বর চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মত সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসে। ওইদিন দেশের সর্বউত্তরের জনপদ তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পরদিন আরও এক ডিগ্রি কমে তা আটের ঘরে নামে। কিন্তু এরপর থেকেই পারদের উর্ধ্বমুখী পথচলা শুরু হয়। টানা চারদিনে তিন ডিগ্রিরও বেশি চড়ার পর ফের পতন ঘটে পারদের। পারদের এই পতনমুখী প্রবণতার মধ্যেই আবহাওয়াবিদরা সারাদেশে শীত জেঁকে বসার আলামত দেখতে পান। এর জেরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বইতে শুরু করে মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে আসে চুয়াডাঙ্গায় সাত দশমিক নয় ডিগ্রিতে। সর্বশেষ গতকাল রবিবার যশোরে দেশের সর্বনিম্ন নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে রবিবার সর্বনিম্ন দশ দশমিক এক ডিগ্রি তাপমাত্রা ছিল সীতাকুন্ডে। বিভাগের বাকি এলাকাগুলোতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৪ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই উঠানামা করেছে।
এর আগে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে জানানো হয়, চলতি ডিসেম্বরের শেষদিকে এবং নতুন বছরের অর্থাৎ ২০২০ সালের জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ) মাসে দেশের ওপর দিয়ে দুই থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং দু’টি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এমনিতেই জানুয়ারি দেশের শীতলতম মাস। তাই মেয়াদকালের দৈর্ঘ্য কমবেশি হলেও শীতের দাপট কিংবা হাঁড়কাপানো শীতের কামড় অনুভূত হবে জানুয়ারি মাসেই। ফেব্রূয়ারির মাঝামাঝি গিয়ে শেষ হয় বাংলা বর্ষপঞ্জির মাঘ মাস। কাগজে-কলমে বিদায় নেয় শীতকাল। তবে, এবার তুলনামূলকভাবে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহের স্থায়িত্বকালই বেশি হতে পারে। যাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ তিন ডিগ্রি সেলসিয়াসের কিছু কম-বেশি হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পূর্ববর্তী ৫০ বছরের ইতিহাসের পাতা পাল্টে দিয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগে সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম দুই দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রূয়ারি। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছিল। সর্বনিম্নœ তাপমাত্রা ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে মাঝারি এবং আট ডিগ্রির চেয়ে বেশি থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।