বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন সড়কের বেহাল দশা

113

সবুর শুভ

করোনায় লন্ডভন্ড পুরো পৃথিবী। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। করোনা সংক্রমণের উচ্চ ধাক্কা চট্টগ্রামেও সমানতালে লেগেছে। হরহামেশায় রেকর্ড হচ্ছে সংক্রমণের। করোনা রোগের চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুল। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে অনেকে ফকির হয়ে গেছে। এ রোগ এখন মানুষের জন্য সর্বনাশের নামান্তর। অন্যদিকে বর্ষায় বৃষ্টির কারণে নগরীর রাস্তাঘাটের একেবারে বেহাল দশা। সৌন্দর্যের নগরী চট্টগ্রাম শহর এখন হতশ্রী। অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে পথঘাট। জোয়ারের পানিতেও ডুবে যায় নিম্নাঞ্চল।
সিটি কর্পোরেশনের হিসেবে, চট্টগ্রাম নগরীর ২০ শতাংশ সড়ক চলাচলের প্রায় অনুপযোগী অবস্থায় আছে। আর ট্রাফিক পুলিশের মতে, অর্ধেকের কাছাকাছি সড়কে এখন যানবাহন চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। তাই ৬০ লাখ মানুষের এই শহরে নিত্য যন্ত্রণা নিয়ে পথ চলতে হয় নগরবাসীকে। করোনা রোগ ও বৃষ্টিজনিত দুর্ভোগ এখন চট্টগ্রামের মানুষের নিত্যসঙ্গী। এ দুর্ভোগকে আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ।
এ প্রকল্পের কাজের জন্য শহরের মূল সড়ক শেখ মুজিব রোডের মাঝখানটায় টিন দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে সর্বনাশ হয়েছে নগরীর রাস্তাঘাটের।
এদিকে গত চারদিনে করোনা রোগী শনাক্ত ৮০০ এর নীচে নামেনি। তথ্য মতে, কোরবানির ঈদের পর ২৫ জুলাই­ ৮০১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর যথাক্রমে ২৬ জুলাই ৮৪৮ জন, ২৭ জুলাই ১৩১০ জন ও ২৮ জুলাই ৯১৫ জন শনাক্ত হয়। এসব রোগীর উল্লেখযোগ্য একটি অংশকে হাসাপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে রীতিমত ত্রাহী অবস্থা সংশ্লিষ্টদের। গত ১৪ জুন মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শাহেদা বেগম নামে এক রোগী। তাকে আইসিইউতে নিয়ে অক্সিজেন সার্পোট দিতে হয়েছে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৯৫ লিটার করে। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। তিনি মারা যান ১৯ জুন। মাঝখানের এ ছয়দিনে চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। ইনজেকশন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া শুধু হাসপাতালের বিল এসেছে ৮৪ হাজার টাকা।
নগরীর অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যয়ের অবস্থা আরও খারাপ। একেকটা রোগীর পেছনে যাচ্ছে ৫ লাখ ৭ লাখ টাকা করে। এ ব্যয় বহন করতে গিয়ে অনেকে ফকির হয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে উল্লেখিত রোগীর স্বজন আবুল হাসনাত জানান, করোনা রোগের চিকিৎসা অসম্ভব ব্যয়বহুল। সাধারণ মানুষের পক্ষে এ টাকা খরচ করার সামর্থ্য নেই বলেই অনেকে অসুস্থ হলেও গ্রাম থেকে শহরে আসছেন না। ফলে অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে। আর হাসপাতালে ভর্তি করানো মানেই কাড়িকাড়ি টাকার ব্যাপার।
এ বিষয়ে ক্যাব চট্টগ্রামের সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন জানান, ‘নগরীর প্রায় অর্ধেকের বেশি সড়কে যানবাহন চলাচল কিংবা যানজট নিয়ন্ত্রণ দুরূহ হয়ে পড়েছে। রাস্তায় খানাখন্দকে ভর্তি। নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর মধ্যে অন্যতম পোর্ট কানেকটিং সড়ক। এছাড়া আরেক ব্যস্ততম সড়ক হচ্ছে বহদ্দারহাট মুরাদপুর সড়ক। উল্লেখিত সড়কগুলো ছাড়াও অন্যান্য সড়কের অবস্থা বেশ কাহিল।
চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন খন্দকার ও সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে নগরীর রাস্তাঘাটের অবস্থা বেশ নাজুক হয়ে গেছে। সারাক্ষণ করোনা রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সগুলোর ছুটতে হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালে। রাস্তার অবস্থা ভাল না থাকায় এক্ষেত্রেও রোগীদের কষ্ট হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে সড়ক সংস্কার করা দরকার।