বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীর ফাঁসি

16

পূর্বদেশ ডেস্ক
দুই বছর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত; পাঁচজনকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এ মামলায় অভিযুক্ত ২৫ আসামির সবাইকে দোষী সাবস্ত করে ঢাকার ১ নম্বর দ্রæত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক আবু জাফর কামরুজ্জামান গতকাল বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের সবাই বুয়েটের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের কর্মী। তাদের মধ্যে ২২ জনের উপস্থিতিতে আদালত এই রায় ঘোষণা করে; বাকি তিনজন মামলার শুরু থেকেই পলাতক। খবর বিডিনিউজের
আবরারের বাবা, এ মামলার বাদী বরকত উল্লাহ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। এখন দ্রæত এই রায় কার্যকর হবে, এটাই তার প্রত্যাশা। অন্যদিকে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট না। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। মাস্টারমাইন্ড ও বড় ভাইদের নাম জাজমেন্টে আসা উচিত ছিল।’
বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। ওই শিক্ষায়তনে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি। ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলা বিচারে এসেছিল। দুই পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১৪ নভেম্বর বিচারক এ মামলার রায়ের জন্য ২৮ নভেম্বর তারিখ রেখেছিলেন। কিন্তু আরও কিছু ‘সময় দরকার’ জানিয়ে সেদিন রায় পিছিয়ে ৮ ডিসেম্বর নতুন তারিখ রাখেন বিচারক। সে অনুযায়ী বুধবার সকালেই কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। তাদের পরিবারের সদস্যদের অনেককে এজলাসে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। আবরারের বাবা বরকত উল্লাহও উপস্থিত ছিলেন এজলাস কক্ষে।
জনাকীর্ণ আদালতে ২০ আসামির সর্বোচ্চ সাজার রায় ঘোষণা করে বিচারক বলেন, ‘মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ প্রদান করা হল।’
বাকি পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। ওই অর্থ দিতে না পারলে তাদের আরও এক বছর সাজা ভোগ করতে হবে।
রায়ে আদালত বলেছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আসামিদের সবার সংশ্লিষ্টতা মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণে ‘সন্দেহাতীতভাবে’ প্রমাণিত হয়েছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অপরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদ রাব্বির বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করেছে, যা বাংলাদেশের সকল মানুষকে ব্যথিত করেছে।
বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বির নৃশংস হত্যাকাÐের মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে তা রোধকল্পে এ ট্রাইবুনালে সকল আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হল।
মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত ২০ আসামি : বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল ষ পৃষ্ঠা ৭, কলাম ৪.
ষ প্রথম পৃষ্ঠার পর
রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মÐল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোর্সেস, ১৬ ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং এসএম মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৫ আসামি : বুয়েট ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)।
পলাতক ৩ জন : এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান, এবং মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল)।