‘বুড়ো সেতু’ বাঁচাতে ফেরি সার্ভিসই ভরসা

58

রাহুল দাশ নয়ন

চলন্ত গাড়ির সবধরনের চাপই যেন সয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে কালুরঘাট সেতু। নতুন সেতু না হওয়া পর্যন্ত আগামীতে এই ‘বুড়ো সেতুটির’ উপর আরও বেশি ধকল যাবে। নতুন ইঞ্জিনে ৮০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চললেও এ সেতুতে চলছে ১০ কিলোমিটার বেগে। গতি কমলেও ১০ থেকে ১৫ টন ওজনের রেলইঞ্জিন বহন করছে সেতুটি। মানুষের ব্যস্ততার সাথে বোয়ালখালী অংশে শিল্পকারখানা বাড়ায় গাড়ির চাপও বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতিদিনই বহনক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি পারাপার করছে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান।
এমন অবস্থায় কালুরঘাট সেতুর উপর চাপ কমাতে এবং সেতু সংস্কার কাজের সুবিধার্থে ফেরি সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে সড়ক ও জনপথ (সওজ)। নতুন সেতু না হওয়ায় পুনরায় পুরানো পথেই হাঁটতে হচ্ছে। চলতি মাসেই ফেরি চালু করতে কর্ণফুলীর দুই পাড়ে চার কোটি টাকার প্রকল্প কাজ চলছে, যেন রেলের সেতুটি বাঁচাতে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে সওজ।
চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা পূর্বদেশকে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মধ্যে কালুরঘাটে ফেরি চালু হবে। এপ্রোচ সড়কের কাজ শেষে এখন বেইলির সড়কের কাজ চলছে। কালুরঘাট সেতুর উপর চাপ কমাতে এবং সেতু সংস্কারকে টার্গেট করেই এই ফেরি চালু হচ্ছে। ফেরিতে কোন গাড়ি থেকে কত ভাড়া নেওয়া হবে তা মন্ত্রণালয়ই নির্ধারণ করবে। যানবাহন পারাপারে নিয়মিত দুটি ফেরি চলাচল করবে।’
সওজ সূত্র জানায়, কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত এই রুটে ফেরি চলাচল করবে। এখন যেভাবে কালুরঘাট সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে এতে সেতুটি যেকোনো সময় বিপদগ্রস্ত হতে পারে। গতি কমিয়ে যানবাহন চলাচল করার কারণে সেতু পারাপারে সময় লাগে এখন ১০ মিনিট। ফেরি পারাপারে সময় লাগবে ১৫ মিনিট। দুটি ফেরি নিয়মিত চলাচল করায় ভোগান্তি হবে না। কালুরঘাট সেতুতে এক লাইনে গাড়ি চললে আরেক লাইন ব্লক থাকে। যে কারণে ভাগ্য সহায় না থাকলে ১০ মিনিটের স্থলে সেতুটি পারাপারে সময় লাগে ঘন্টাখানেক। প্রতি ট্রিপ ফেরিতে ১২টি ট্রাক ও ৯টি গাড়ি পার হবে। অ্যাম্বুলেন্স, রোগীবাহী গাড়ি অগ্রাধিকার পাবে। ছোট গাড়িগুলো কালুরঘাট সেতু ব্যবহার করবে। তবে সেতুটির সংস্কার কাজ শুরু হলে পুরোদমে ফেরির উপর নির্ভর হতে হবে ওপারের বাসিন্দা ও কর্মজীবীদের।
বোয়ালখালী অংশে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ধনঞ্জয় দাশ পূর্বদেশকে বলেন, কালুরঘাট সেতু ব্যবহার করে বোয়ালখালী, পটিয়ার অনেক মানুষ প্রতিদিন শহরে যাওয়া-আসা করে। চান্দগাঁও মোহরাসহ কালুরঘাটের কাছাকাছি বসবাস করা অনেক মানুষ বোয়ালখালীর বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কাজ করে। সবমিলিয়ে দিনদিন সেতুর উপর চাপ বাড়ছে। আগামীতে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চালু হলে চাপ আরও বাড়বে।
তবে কালুরঘাটে নতুন সেতুর বিকল্প নেই। মাঝেমধ্যে হয়তো সংস্কার করে সেতুটি চালুর উপযোগী করা হবে। এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। প্রতিদিন প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ সেতুটি দিয়ে পারাপার হয়। সেতুর উপকারিতা কখনো ফেরিতে পাওয়া যাবে না।
কালুরঘাটের সেতুটি ১৯৩১ সালে নির্মিত হয়। ২০০১ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাতেই চলছে প্রায় দুইযুগ। সেতু দিয়ে ১০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হয় না। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সেতুটি সয়ে যাচ্ছিল যানবাহনের পূর্ণভার। ভোগান্তি থেকে বাঁচতে সেখানে নতুন সেতু নির্মাণ বোয়ালখালী ও পটিয়াবাসীর প্রাণের দাবি। সংশোধন ও অর্থায়নেই যেন ঘুরপাক খাচ্ছে প্রকল্পটি। এতদিন নতুন সেতু নির্মাণ নিয়ে রেলের তোড়জোড় থাকলেও তাও থমকে গেছে। আপাতত নতুন সেতুর পরিবর্তে বর্তমান সেতুটিই সংস্কারে মনযোগী রেলওয়ে। কালুরঘাট সেতু সংস্কারেই গত ২০ বছরে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা গচ্ছা গেছে সরকারে। গত তিনবছরেই তিনধাপে সেতুটি সংস্কার করা হয়েছে। ইতেমধ্যে রেলমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন চলতি বছরেই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ট্রেন চলাচল করবে। ইতোমধ্যে প্রকল্প কাজও ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। কক্সবাজারগামী ট্রেন চলাচলেও এ সেতুটিই ভরসা। যে কারণে আবারও সেতু সংস্কারের বড় আয়োজন হাতে নিতে যাচ্ছে রেলওয়ে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা পূর্বদেশকে বলেন, ‘কালুরঘাট সেতু সংস্কারের জন্য বুয়েটের সাথে চুক্তি করেছি। উনারাই এ সেতুর সংস্কারে কনসালটেন্ট। তারা দুই মাস যাবত কাজ করে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দিয়েছে। মার্চের মধ্যে খসড়া প্রাক্কলন দেয়ার কথা রয়েছে। এই প্রাক্কলন হাতে পেলেই আমরা সেতুটি সংস্কারে কি করতে হবে ধারণা পাবো। এরপরেই সেতু সংস্কারে টেন্ডারে যাবো।’