বুনো মাশরুম খেয়ে মারা যাচ্ছে আসামের চা শ্রমিকরা

16

মেয়েকে নিয়ে রাতের খাবার খেতে বসেছিলেন অঞ্জলি খারিয়া। তখনও তিনি জানতেন না, এটিই মেয়ের সঙ্গে খাওয়া তার শেষ খাবার। অঞ্জলি খারিয়া ভারতের আসামের ডিব্রুগড় জেলার চাপাতোলি গ্রামের এক চা-বাগানে কাজ করেন। সারা দিন কাজের পর বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। তাই খাবার শেষে আর অপেক্ষা না করে রাতের ঘুমের জন্য শুয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ, রাত ৩টার দিকে তার ছয় বছরের মেয়ে সুস্মিতার বমির শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। তারপর মেয়ের শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব শুরু হয়। পরে কাঁপুনি হতে থাকে। মেয়ের অবস্থা সারা রাত ধরে এমন চলতে থাকলে খারিয়া চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর তার ছেলে ও শ্বশুরের অবস্থাও খারাপ হতে শুরু করলে তিনি আতঙ্কিত হয়ে যান। ৩৭ বছর বয়সী খারিয়া বলেন, ‘তারা সবাই একসঙ্গে বমি করছিল। এরপর তাদের ভয়ানক ডায়রিয়া শুরু হয়।’ পরে খারিয়া বুঝতে পারেন, শুধু তাদের ঘরেই এ সমস্যা নয়, আশপাশের আরও কয়েকজনের সে রাতে একই সমস্যা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এটা দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। সবাই যন্ত্রণায় ছটফট করছিল, কিন্তু কেন তা কেউ জানত না।’ সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই খারিয়া তার মেয়েকে নিয়ে কাছের একটি ফার্মেসিতে ছুটে যান। সেখানে তাকে স্যালাইন ও ওষুধ দেওয়া হয়। অন্যদের হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়। ছেলে এবং শ্বশুরকে বাঁচাতে নিজের জমানো শেষ অর্থটুকুও ব্যয় করেন অঞ্জলি খারিয়া। তিনি বলেন, ‘ওষুধ সেবনের পর মেয়ের কিছুটা ভালো লাগতে থাকায় তাকে আর তাদের সঙ্গে পাঠাইনি। ভেবেছিলাম শিগগিরই সে ভাল হয়ে যাবে।’ কিন্তু ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে মেয়ে আবার বমি করতে শুরু করে।এবার খারিয়ার কাছে অ্যাম্বুলেন্স ডাকার জন্য আর কোনও টাকা ছিলনা। কয়েক ঘণ্টা পরেই তার কোলে মারা যায় সুস্মিতা।
পরে জানা যায়, সেদিন যারা অসুস্থ হয়েছিলেন, তারা সবাই এক ধরনের বুনো মাশরুম খেয়েছিলেন, যা খারিয়ার শ্বশুরই কাছের জঙ্গল থেকে ছিঁড়ে আনেন। তিনি এই মাশরুম তাদের প্রতিবেশীদেরও দিয়েছিলেন। সরকারি রেকর্ডে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ৬ বছরের সুস্মিতা ছাড়াও সেদিন আরও দুজন মারা গিয়েছিলেন। মোট ১১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।