বীর বাঙালি বিগ্রেডিয়ার মজুমদার

17

আ.ফ.ম. মোদাচ্ছের আলী

পুরো নাম বিগ্রেডিয়ার মাহমুদুর রহমান মজুমদার (অব.)। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের রেজিমেন্টাল সেন্টার কমান্ডেন্ট হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ১৯৭১ এর ১ মার্চ এর পর থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধু, কর্ণেল ওসমানী, এম আর সিদ্দিকী, এম এ হান্নান, জহুর আহমদ চৌধুরী, ও চট্টগ্রামের অন্যান্য আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির ব্যাপারে গোপনে যোগাযোগ শুরু করেন।এসময় তাঁর ও কর্ণেল ওসমানীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন ক্যাপ্টেন আমিন আহমেদ চৌধুরী বীর বিক্রম।১৯৭১ সালের ১ মার্চ চট্টগ্রামের রেলওয়ে কলোনিতে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে অনেক বাঙালি নিহত হয়।অনেকের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং গণবিক্ষোভ জেগে উঠে। সেইসময় দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে তিনি পশ্চিমা সামরিক সেনা ও অফিসারদের ব্যারাকে ফিরিয়ে আনেন। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সশস্ত্র বাঙালি সেনাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মোতায়েন করেন। করাচী থেকে আসা সোয়াত জাহাজ থেকে বাঙালি নিধনের অস্ত্র খালাস করতে তিনি টালবাহানা করেন। এসব কারণে পাকিস্তানি মিলিটারি হাইকমান্ড তাকে সন্দেহ করতে শুরু করেন এবং টিক্কা খানের নির্দেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুইজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা চট্টগ্রাম আসেন। চট্টগ্রামের সচেতন মানুষের কাছে সামরিক কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার মজুমদার তখন পরিচিত নাম। ২৪ মার্চ পাকিস্তানী মিলিটারি হাইকমান্ডের সাথে বৈঠকের অজুহাতে তাকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় যা তিনি পরবর্তীতে বুঝতে পেরেছিলেন। একাত্তরে পাকবাহিনীর বন্দী শিবির গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, তখন গুজব ছড়িয়ে পড়ে আমাকে হেলিকপ্টার থেকে জোর করে নিচে ফেলে দেয়া হয়েছে। সারাপথ ভয়ে ভয়ে কাটলো। শেষ পর্যন্ত অক্ষত অবস্থায় ঢাকা বিমানবন্দরে পৌছালাম। বিমানবন্দর থেকে আমাকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পাকবাহিনীর এক বিগ্রেডিয়ারের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই বিগ্রেডিয়ার এর কাছেই প্রথম শুনতে পেলাম চট্টগ্রামের দায়িত্ব থেকে আমাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।টিক্কা খানের কাছে আমাকে পাঠানো হলো। টিক্কা খান উত্তেজিত হয়ে আমাকে বললো ‘ইউ আর প্লেয়িং দি বেঙ্গলিজ গেম ইন চিটাগাং। ইউর চিটাগং ডেইজ আর ওভার।’ এরপর আমি গেন্ডারিয়ায় শ্বশুরের বাসায় অবস্থান করি। ২৫ মার্চের গণহত্যার পর ২৭ মার্চ পাকিস্তানী বাহিনী তাকে ক্যান্টমেন্টের এক পরিত্যক্ত বাসায় নিয়ে যায়। ৩০ মার্চ পাকিস্তানী বাহিনী তাকে করাচীতে পাঠিয়ে দেয়। পাকিস্তানের এক দুর্গম স্থানে তাকে বন্দি রেখে তাকে বারবার জিজ্ঞেস করা হতো পূর্ব পাকিস্তানের সেনা বিদ্রোহের পরিকল্পনাকারী কারা ছিল? পায়জামা খুলে উলঙ্গ করে হিন্দু মুসলিম পরীক্ষা সহ নানা পাশবিক নির্যাতন তিনি সয়েছিলেন ফলে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ এর ডিসেম্বরে ২৯ মাসের নারকীয় বন্দি জীবনের অবসান ঘটে মুক্তিযুদ্ধের উষালগ্নে চট্টগ্রামে স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা এই বাঙালি সামরিক কর্মকর্তার।

লেখক : ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, আহবায়ক মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্ট চট্টগ্রাম