বিষাক্ত তামাকের বদলে বাদামে ঝুঁকছেন কৃষক

73

বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার বুক চিরে এঁকেবেঁকে সর্পিল গতিতে বয়ে গেছে মাতামুহুরী নদী। প্রবল বর্ষণে এ নদী হয়ে ওঠে উত্তাল ও প্রমত্তা। সে সাথে দু’কূল ও নদীর তলদেশে জমে যায় ঊর্বর পলি মাটি। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে জেগে ওঠে অসংখ্য চর। এ চরে কৃষকেরা আবাদ করেন নানা ফসল। এসব ফসলের মধ্যে বাদাম একটি অতি লাভজনক ফসল। স্বল্প পুঁজি, শ্রম ও সময়ের বিনিময়ে বাদাম উৎপাদন করা সম্ভব হওয়ায় পরিবেশ বিধ্বংসী বিষাক্ত তামাক চাষের বদলে কৃষকেরা দিন দিন ঝুঁকেছেন এ বাদাম চাষে। বেশ কয়েক বছর ধরে নদীর শীলেরতুয়া থেকে সীতারপাড়ি পর্যন্ত চরে শতাধিক কৃষক বাদাম চাষ করে আসছেন। পাশাপাশি সমতল জমিতেও হচ্ছে বাদাম চাষ। এতে তামাক চাষের মতো এ চাষেও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। এবারে কৃষি বিভাগ উপজেলায় ১১০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। এ হিসেবে ১৮০ থেকে ২০০ মেট্রিক টন বাদাম উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
নদীর চম্পাতলী পয়েন্টে জেগে ওঠা চরের বাদাম চাষী মো. আব্দুস সালাম জানান, এবার ১২০ শতক চরে বাদাম চাষ করেছেন তিনি। তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ তাকে ১৪ কেজি বাদাম বীজ ও রাসায়নিক সার সহায়তা দেয়া হয়। তিনি বলেন, কানি প্রতি বাদাম উৎপাদনে তার খরচ পড়েছে ২০ হাজার টাকা। প্রতি কানিতে বাদাম উৎপাদন হয় ২০-২৫ মন। প্রতিমণ ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি করে ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় হবে বলেও আশা করছেন তিনি। তার পাশের কিষাণী ছাবেরা বেগমও ৩৩ শতক চর জমিতে বাদাম চাষ করেন। চীনাবাদাম ও বিনা চীনাবাদাম জাতের চাষ করে তিনি এবার ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখছেন। শুধু তাই নয়, কিষাণী ছাবেরা বেগম নদী চরে বাদাম চাষের সঙ্গী ফসল হিসেবে ডালবীজ পেলম, মরিচ, ভুট্টা, ধনেপাতা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি চাষ করেও বাড়তি টাকা আয় করেছেন বলে জানান তিনি। তার দেখাদেখি এ পয়েন্টে আরও ১০-১২ জন কৃষকসহ লামা উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে জেগে ওঠা চরে ১৩০ জন কৃষক বাদাম চাষ করেছেন।
এ বিষযে কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ ও সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন কুমার দেব বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৭ ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভার চাষীদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিকল্প হিসেবে ১১০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ লক্ষ্যে রাজস্ব খাতে ১০টি চীনা বাদাম ও বিনাচীনা বাদামের প্রদর্শনী প্লট রয়েছে। প্রতিটি প্রদর্শনী প্লটের অনুকূলে ১৪ কেজি করে বাদাম বীজ ও রাসায়নিক সার প্রণোদনা হিসেবে সহায়তা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এবারের লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে নির্ধারিত ১১০ হেক্টর জমি থেকে ১৮০ থেকে ২০০ মেট্রিক টন বাদাম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অনুকূল আবহাওয়া ও প্রয়োজনীয় পরিচর্যা পেলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।