বিশ্বে বাংলাদেশ সম্প্রীতির একটি মডেল

10

 

হাজার বছর ধরে নানা জাতি-ধর্মের মানুষ এই ভূখন্ডে শান্তিপূর্ণভাবে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এ দেশের সুমহান ঐতিহ্য। বাংলাদেশের পরিচিতি মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে। এ দেশের মানুষ নিজ নিজ ধর্মে নিষ্ঠাবান হওয়ায় সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতিকে তারা অনুকরণীয় আদর্শ বলে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক বলেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীলতার আদর্শ এ দেশে মূর্তমান। দেশের সিংহভাগ মানুষ ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও বকধার্মিক ও কান্ড জ্ঞানহীনদের কারণে কখনও কখনও তাদের সুনামও কণ্টকিত হয়ে ওঠে। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ বহু দেশে সংখ্যালঘুরা যেভাবে নির্যাতন, নিপীড়ন ও হয়রানির শিকার হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে হিসেবে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত বটে। এদেশের উন্নয়ন যেমন আজকের বিশ্বের বিস্ময়, রোল মডেল, ঠিক তেমনি এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। ঐক্যবদ্ধভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।বিভিন্ন সময় স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দর পরিবেশকে নস্যাৎ করতে চায়। আমাদের সকলকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। সরকার ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন অসাম্প্রদায়িক সমাজ” বিনির্মাণের মহান লক্ষ্যে সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের কল্যাণে পর্যাপ্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। যার সুফল সকল সম্প্রদায়ের জনগণ ভোগ করছে।
মানুষের মঙ্গল করা। ধর্মের এই মর্মবাণী সবাই ধারণ করতে পারলেই পৃথিবীতে কোনো হানাহানি, মারামারি ও অশান্তি আর থাকবে না।আমাদের এই বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ দেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, বাঙালি, মগ, চাকমা সব ধর্মের, সব জাতির মানুষের যে সহাবস্থান এবং সা¤প্রদায়িক সম্পর্ক, তা পৃথিবীতে বিরল।’ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল। আমাদের এই দেশে মাঝেমধ্যে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প মাথাচাড়া দিয়ে প্রভাব ফেলার চেষ্টা চালায়। কিন্তু আমাদের এই অসাম্প্রদায়িকতা, এই অপশক্তিকে সব সময় দমন করেছে। এখনো একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আমাদের এই দেশকে, আমাদের সমাজকে হেয় করার চেষ্টা করে।’সাম্প্রদায়িক অপশক্তির স্থান বাংলাদেশে হতে পারে না। আমাদের এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সম্মিলিত শক্তির কাছে তারা অতীতে যেমন পরাভূত হয়েছে, তেমনি বর্তমান এবং ভবিষ্যতেও পরাভূত হবে। আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা বাঙালি। সব ধর্মের মানুষের মিলিত রক্তগ্রোতের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির স্থান বাংলাদেশে হতে পারে না। মানবতাই ধর্মের শাশ্বত বাণী। ধর্ম মানুষকে ন্যায় ও কল্যাণের পথে আহŸান করে। অন্যায় ও অসত্য থেকে দূরে রাখে, দেখায় মুক্তির পথ। তাই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার পাশাপাশি আমাদের মানবতার কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে। কেউ যদি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়, তাহলে তা প্রতিরোধে রাষ্ট্র, প্রশাসন ও সচেতন সব মানুষের এগিয়ে আসা উচিত। এদেশে সকল ধর্মের মানুষ একে অপরের সুখে-দুঃখে এগিয়ে আসে। একসঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন করে থাকে। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে। সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে এমনতর সম্প্রীতির বন্ধন পৃথিবীর খুব কম দেশেই দেখা যায়। তাছাড়া সকল ধর্মের নানা আচার, অনুষ্ঠান, উৎসব বেশ জাঁকজমকের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। এ দেশে তাই উচ্চারিত হয় ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’ ধর্মীয় উৎসবগুলোতে সকল ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণ এবং সৌহার্দ্যে এক অভাবনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়। এদেশে পাকিস্তান পর্বে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যেমন ছড়ানো হয়েছিল, তেমনি পঁচাত্তর পরবর্তী সময়েও হানাহানি, হাঙ্গামা কম হয়নি। পাকিস্তানী সামরিক শাসকগোষ্ঠী ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নানাবিধ নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়ে তাদের একটা বড় অংশকে দেশত্যাগে বাধ্য করে। অনেকের জীবনাবসান ঘটানো হয়। অবাঙালীরা বাড়িঘর, জমি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান দখলের জন্য সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল, যা কলঙ্কিত ইতিহাস। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু ধর্ম ও সাম্প্রদায়ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেন। ধর্মনিরপেক্ষ মূলমন্ত্র যে দেশের, সেখানে এই জাতীয় দলের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সামনে নিয়ে আসে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসকরা। ধর্ম ব্যবসায়ী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রাজনীতিতে পুনর্বহাল করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধী গণহত্যাকারী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ক্ষমতার অংশীদার করা হয় পরবর্তীকালে। সামরিক শাসকদের তত্ত্বাবধানে দেশে দাঙ্গা-হাঙ্গামা চালানো হয় ১৯৯০ সালে। ২০০১ সালের পর ক্ষমতাসীন জোট সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এমন নিপীড়ন চালায় যে, তাদের অনেকেই দেশত্যাগে বাধ্য হয়। ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করার চক্রান্ত করা হয়। শেখ হাসিনার সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনে। তাই বিশ্বে বাংলাদেশকে সম্প্রীতির মডেল হিসেবে দাঁড় করাতে হলে শান্তি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক