বিশ্বে কোভিড শনাক্ত ৩০ কোটি ছাড়াল

15

পূর্বদেশ ডেস্ক

করোনা ভাইরাসের দ্রুত সংক্রামক ধরণ ওমিক্রনের দাপটের মধ্যে বিশ্বজুড়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩০ কোটি ছাড়িয়ে গেল। মহামারিকালে সময় যত গড়াচ্ছে নতুন এ ভাইরাসের একের পর এক নতুন ধরণের সংক্রমণে কোভিডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পরিমাণ ততই বাড়ছে।
শুধু যে মানুষকে আক্রান্ত করেই ক্ষান্ত দিয়েছে ভাইরাসটি তা নয়, বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রাণক্ষয়ের কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। মৃতের সংখ্যা অর্ধ কোটি ছাড়িয়ে ৫৪ লাখ ৭৪ হাজার ২৯ এ পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ সময় গতকাল শুক্রবার দুঃখজনক এ মাইল ফলক পেরিয়ে যায় বলে জানিয়েছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেমস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। পুরো বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে তোলা এ ভাইরাসে দুই বছরের মধ্যে আক্রান্ত ৩০ কোটি ছাড়িয়েছে; এরমধ্যে শেষ ১০ কোটি রোগী শনাক্ত হতে সময় লেগেছে মাত্র পাঁচ মাস বলে নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে।
বিশ্বে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়াতে এক বছর সময় লাগলেও ডেল্টার দাপটে পরের ১০ কোটি শনাক্তে লাগে অর্ধেক সময়। আর গেল বছরের শেষের দিকে ওমিক্রনের অতি বিস্তারে এর পরের ১০ কোটি শনাক্তে সময় লাগে আরও কম।
মূলত টিকা না নেওয়া ব্যক্তি ও ওমিক্রনের সুনামিতে কোভিড মহামারিতে রোগী শনাক্তের এ উল্লম্ফন ঘটেছে বলে বিশেষজ্ঞদের ঊধ্বৃত করে জানাচ্ছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ওলটপালট করে দেওয়া এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে; ৫ কোটি ৮৪ লাখ। মৃত্যুর সংখ্যাও দেশটিতে সর্বোচ্চ ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৯৯৬।
আক্রান্তের দিক থেকে ভারত রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে ৩ কোটি ৫২ লাখ। এর মধ্যে মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার। অপর দিকে ব্রাজিল রোগী শনাক্তে তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও মৃত্যুর দিক থেকে রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। ২ কোটি ২৩ লাখ আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন ৬ লাখ ১৯ হাজার ৬৫৪ জন।
শনাক্ত রোগীর দিক থেকে শীর্ষস্থানে থাকা অন্য দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ১ কোটি ৪১ লাখের মধ্যে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৩ জন মারা গেছেন।
ফ্রান্স (১ কোটি ১২ লাখ, মৃত্যু ১ লাখ ২৬ হাজার), ইতালি (৬৯ লাখ ৭৫ হাজার, মৃত্যু ১ লাখ ৩৮ হাজার) ও স্পেন (৬৯ লাখ ২২ হাজার, মৃত্যু ৮৯ হাজার ৭৩৭) এ তালিকার উপরের দিকেই রয়েছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহানে মানবদেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম খবর আসে। এরপর সেই ভাইরাস দ্রুত পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তে পৌঁছে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে ২০২০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে মহামারি ঘোষণা করে। ওই বছর ২৮ জুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক কোটিতে পৌঁছায়। এক বছরের কিছু সময় পর গেল বছর ২০২১ এর ২৭ জানুয়ারি এ সংখ্যা ১০ কোটির ঘর ছড়িয়ে যায়।

দাপট দেখাচ্ছে ওমিক্রন
ডেল্টার ভয়াবহতা স্তিমিত হয়ে আসার পর এখন নতুন করে আলোচনায় এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পড়া নতুন ধরণ ওমিক্রন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন পর্যন্ত ওমিক্রন সংক্রমিতদের ক্ষেত্রে গুররুতর অসুস্থতার ঘটনা কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। ডেল্টার সময় যা বিপর্যস্ত অবস্থা তৈরি করেছিল বিশ্বজুড়ে।
নতুন ধরণের অতি বিস্তারের মধ্যে টিকা দেওয়ার বিষয়টি আবারও জোরালো হচ্ছে। জটিলতা থেকে সুরক্ষায় টিকার কার্যকারিতা দেখা যাওয়ার কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বিপুল সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশে ওমিক্রনের দাপটে কোভিড রোগীর সংখ্যায় উল্লম্ফন ঘটে। অবশ্য আগের ধরণের তুলনায় এতে হাসপাতালে ভর্তি ও প্রাণহানির সংখ্যা অনেক কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের অন্য ধরণের তুলনায় ওমিক্রন সংক্রমিতদের ক্ষেত্রে গুরুতর অসুস্থতার ঘটনা কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, শারীরিক জটিলতা কমাতে টিকা এখনও সুরক্ষা দিচ্ছে।
তবে শঙ্কার কারণও আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগের ঢেউগুলোয় স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, নতুন করে রোগী বাড়ায় চাপ আরও বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরের হাসপাতালগুলো ইতোমধ্যে কোভিড সংক্রান্ত সেবা দেওয়ার জন্য কর্মীদের কাজে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে। খবর বিডিনিউজের
এ প্রেক্ষাপটে এখন কোভিড রোগী শনাক্তের সংখ্যার বদলে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যার দিকে বেশি নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি।
গত রবিবার এবিসি নিউজকে তিনি বলেন, ওমিক্রনে যেহেতু গুরুতর অসুস্থতা তুলনামূলকভাবে কম হচ্ছে, সেহেতু হাসপাতালে কতজনকে ভর্তি হতে হচ্ছে সেটা হিসাব করাই বাস্তবসম্মত।
এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ কোভিডের অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। কিন্তু এর তিন-চতুর্থাংশই পেয়েছে ধনী দেশগুলো। ফলে আফ্রিকা ও এশিয়ার মানুষ বেশি ঝুঁকিতে আছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা’ এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন ৬ লাখ ১০ মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন, যা দুই সপ্তাহ আগের সময়ের চেয়ে ২২৭ শতাংশ বেশি। সেই তুলনায় হাসপাতালে ভর্তির হার কম। গেল দুই সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি বেড়েছে ৬০ শতাংশ; আর মৃত্যু বেড়েছে ২ শতাংশ।
ফ্রান্সে শনাক্ত চারগুণ বাড়লেও হাসপাতালে ভর্তি বাড়ার হার বেড়েছে ৭০ শতাংশ; আর মৃত্যুহার বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এ প্রবণতা থেকে টিকার কার্যকারিতার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হচ্ছে, দুই বছর আগে হাসপাতালে ভর্তির যে প্রয়োজনীয়তা এবং প্রাণহানির চিত্র ছিল, তা থেকে অনেকটাই উত্তরণ সম্ভব হয়েছে টিকার কারণে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবতগউএইচও) দিক থেকে ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকাদানের যে লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল, তা পূরণ করতে না পারায় আফ্রিকার দেশগুলোতে ওমিক্রন বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
ডবিøউএইচও প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেছেন, শত শত কোটি মানুষ যদি অরক্ষিত থাকে, তাহলে কয়েকটি দেশে বুস্টারের পর বুস্টার ডোজ দেওয়া হলেও তাতে মহামারি শেষ হবে না। খবর বিডিনিউজের