বিশ্বের ৩৫ দেশে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে বনফুল

145

দেশের বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা এম এ মোতালেব। তিনি বনফুল গ্রæপের চেয়ারম্যান। সাতকানিয়ার মানুষের কাছে চাকরির চেয়ে ব্যবসার প্রাধান্য ছিল অনেক বেশি। তারপরও পেশাটা শুরু করেছিলেন শিক্ষকতা দিয়ে। কিন্তু সহকর্মীদের সঙ্গে মতের মিল না হওয়ায় অনেকটা জেদের বশেই ছেড়ে দেন সেই পেশা। যোগ দেন ব্যবসায়। চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক এলাকা শেখ মুজিব রোডে ছোট পরিসরে গড়ে তোলেন বনফুল অ্যান্ড কম্পানি। মিষ্টি ব্যবসাকে শিল্প ও মানসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলার মূল রূপকার হলেন এম এ মোতালেব।
খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত এখন বড় শিল্প। এখানে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। তিন দশক আগে যখন এই ব্যবসা শুরু করেন, তখন চাহিদা ছিল কম। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে খাদ্যপণ্যের চাহিদাও বেড়েছে। তাঁর প্রতিষ্ঠানও প্রতিনিয়ত বেকারি পণ্য ও শুষ্ক খাদ্যপণ্য উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েছে।
করোনাকালে খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে। বিস্কুটসহ প্যাকেটজাত খাদ্যপণ্য বিক্রি হলেও মিষ্টির মতো টাটকা পণ্য বিক্রি একেবারেই কমে যায়। কারণ, বিধিনিষেধের সময় শো-রুম বন্ধ রাখতে হয়। আবার খোলা থাকলেও বেচাকেনা কম। সব মিলিয়ে করোনার সময় কোনোভাবে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই ছিল লক্ষ্য।
এম এ মোতালেব বলেন, করোনায় প্রথম ধাক্কা সামলে টিকা আসার পর পরিস্থিতি ভালো হবে বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু সেটি হয়নি। করোনার সংক্রমণ নতুন করে আবার বাড়লে নতুন করে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। বিধিনিষেধ মানে হলো মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ, যেটি অন্য খাতের মতো খাদ্যপণ্য খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কঠোর বিধিনিষেধের শুরুতে সব শিল্পকারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। অবশ্য পরে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত কারখানাকে বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রাখা হয়। আমি মনে করি, সরকারের এটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ, খাদ্যপণ্য এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। তবে উৎপাদন সচল রাখা গেলেও তা সরবরাহ হবে কি না বা বেচাকেনা কতটুকু হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল।
‘মিষ্টিসহ বেকারি পণ্যের মধ্যে টাটকা পণ্যগুলোর বিক্রি মূলত উৎসবকেন্দ্রিক। যেমন: পয়লা বৈশাখ, ঈদ, পরীক্ষার ফল ঘোষণার দিনসহ নানা উৎসবকে কেন্দ্র করে মিষ্টি বেচাকেনা বেশি হয়। এখন পরীক্ষা তেমন না হওয়ায় বিক্রি কমেছে। আবার সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানও সেভাবে হয়নি এতদিন। তাতে মিষ্টির বেচাকেনা অস্বাভাবিক কমে যায়। এখন প্যাকেটজাত বিস্কুটই বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। আবার ঈদের সময় সেমাই বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি। বনফুলের সেমাই দেশজুড়ে বিক্রি হয়। করোনায় সেমাই বেচাকেনাও অনেক কমে যায়। অথচ দেশে মিষ্টি ও সেমাই বিক্রির চাহিদার বড় অংশই পূরণ করত বনফুল।
তিনি বলেন, ১৯৮৯ সালে মিষ্টি ও বেকারি পণ্য দিয়ে ব্যবসা শুরুর পর ধাপে ধাপে স¤প্রসারণ হয়েছে বনফুল। দুই দশক আগে ড্রাই ফুড উৎপাদন এবং আট বছর আগে কিষোয়ান স্ন্যাকস লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে কুকিজ বিস্কুট, টোস্ট, ডায়াবেটিস বিস্কুট, কাস্টার্ড কেক উৎপাদন শুরু করি। এখন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সারা দেশে আমাদের নিজস্ব ৫০টিসহ বনফুলের মোট ২৮০টি শোরুম রয়েছে। বনফুলের কর্মীসংখ্যা প্রায় দুই হাজার। ব্যবসায় মন্দা থাকায় এই বিপুল কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতে আমরা হিমশিম খেতে হয়েছে করোনাকালে। খাদ্যপণ্য খাতে সবাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি বিশ্বের ৩৫টি দেশে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করছি আমরা। ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে করোনার কারণে রপ্তানিও এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। যেমন আগে সৌদি আরবে প্রতি মাসে অন্তত ১০ কনটেইনার পণ্য পাঠাতাম। সেখানে এখন মাসে বড়জোর চার কনটেইনার যাচ্ছে। এটা করোনার প্রভাবেই হয়েছে। কমবেশি সব দেশেই এখন এ অবস্থা।