বিশ্বের বন্দরে দেশের পতাকা

35

 

এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট-আট মাসেই ১৮টি জাহাজ বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনের বহরে যুক্ত হয়েছে। আর এতেই বাংলাদেশি পতাকাবাহী মোট জাহাজের সংখ্যা দাঁড়াল ৯০টি, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ আরো অন্তত ১০টি জাহাজ যুক্ত হয়ে জাহাজের সংখ্যা ১০০ ছাড়ানোর আশা শিল্প মালিক ও নৌ বাণিজ্য দপ্তরের।
এরই মধ্যে সরকার জাহাজ কিনতে আরো উৎসাহ দিয়ে গত বাজেটে আগাম কর প্রত্যাহার, পুরনো জাহাজের আয়ুষ্কাল ২২ বছরের পরিবর্তে ২৫ বছর এবং আমদানির পর বিক্রয়ের সময়সীমা পাঁচ বছরের পরিবর্তে তিন বছর নির্ধারণ করে দেয়। এতে জাহাজ কেনা আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কবির গ্রæপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান বলেন, ‘নিজেদের প্রয়োজন ছাড়াও দেশি-বিদেশি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত আছে আমাদের জাহাজগুলো। আমরা সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনকে ব্যবসা হিসেবেই নিয়েছি। এ জন্য দেশের মুদ্রা দেশেই থাকছে, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিদেশে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে আমরা বিপুল বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করছি।’ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৯০টি সমুদ্রগামী জাহাজ নিবন্ধন করেছে সরকারের নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৭টি খোলা পণ্যবাহী জাহাজ। ১৩টি ট্যাংকার, তিনটি গ্যাস পরিবহনকারী জাহাজ, ছয়টি কনটেইনার জাহাজ, একটি মাল্টিপারপাস জাহাজ আছে। সমুদ্রগামী জাহাজ নিবন্ধন দেয় সরকারি সংস্থা নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তর। তাদের হিসাবে, ২০১২ সাল পর্যন্ত দেশের ব্যবসায়ীদের জাহাজ কেনা বাড়ছিল, তখন জাহাজের সংখ্যা ছিল ৬৭টি। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকেই হঠাৎ জাহাজ কেনা কমতে শুরু করে। কমতে কমতে ২০১৫ সালে ৪৭টিতে নামে। ২০১৬ সালে জাহাজের সংখ্যা নামে ৪৫টিতে, ২০১৭ সালে ৩৮টি এবং ২০১৮ সালে এর সংখ্যা ৩৭টিতে নামে। ২০১৯ সালে জাহাজ কেনার সংখ্যা আবার বেড়ে যায়। তখন জাহাজ বেড়ে ৪৭টিতে উন্নীত হয়। এর পর থেকেই শুরু হয় করোনা মহামারি। ২০২০ সালে জাহাজের সংখ্যা বেড়ে এক লাফে ৬৪টিতে উন্নীত হয় অর্থাৎ জাহাজ বাড়ে ১৪টি। ২০২১ সালে জাহাজের সংখ্যা আরো বেড়ে ৭৩টিতে উন্নীত হয় এবং সর্বশেষ ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত এর সংখ্যা ৯০টিতে পৌঁছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড।
নৌ বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, সমুদ্রগামী জাহাজশিল্পের বিকাশে সরকারের দেওয়া সুবিধার আলোকেই মূলত শিল্পোদ্যোক্তারা জাহাজ কিনতে এগিয়ে এসেছেন। যেভাবে নিবন্ধিত হচ্ছে তাতে প্রতি মাসে একটি করে জাহাজ যোগ করবে মেঘনা গ্রুপ। আর এইচআর লাইনস যোগ করবে একসঙ্গে ছয়টি জাহাজ, যেগুলো চীনে তৈরি হচ্ছে। আরো কয়েকটি জাহাজ যুক্ত করার প্রক্রিয়ায় আছে। ২০২২ সালের শেষে জাহাজের সংখ্যা ১০০টিতে উন্নীত হবে বলে আশা করছি। ৯০টি সমুদ্রগামী জাহাজের মধ্যে শীর্ষে আছে কেএসআরএম স্টিল বা কবির গ্রুপ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মেঘনা গ্রæপের বহরে আছে ১৮টি জাহাজ। আকিজ গ্রুপের আছে ১০টি জাহাজ। এ ছাড়া সরকারি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) আছে আটটি, কর্ণফুলী গ্রুপের আছে ছয়টি, বসুন্ধরা গ্রুপের আছে ছয়টি, বিএসএ শিপিংয়ের তিনটি, এমআই সিমেন্টের তিনটি, ভ্যানগার্ড মেরিটাইমের দুটি, ডুরিয়া শিপিংয়ের দুটি, হানিফ মেরিটাইমের দুটি, ওরিয়ন গ্রুপের একটি, মবিল-যমুনা গ্রুপের একটি, পিএনএন শিপিংয়ের একটি, অ্যাডভান্সড শিপিংয়ের একটি, ডরিন শিপিংয়ের একটিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জাহাজ আছে।