বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ ইস্পাত কারখানা উৎপাদনে যাচ্ছে

139

আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে উৎপাদনে যাচ্ছে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে জিপিএইচ এর নির্মিত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ ইস্পাত কারখানা। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক এ কারখানার ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এটি চালু হলে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষমতা আরো ৭ গুণ বৃদ্ধি পাবে। ইস্পাত খাতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এর সাথে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলেও জানা গেছে।
গতকাল রবিবার দুপুরে সীতাকুন্ড এলাকায় নির্মিত জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের নতুন প্ল্যান্ট পরিদর্শন শেষে গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইস্পাত কারখানাটি রয়েছে মেক্সিকোতে। জিপিএইচ নির্মিত এই কারখানাটি চালু হলে এটি হবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ ইস্পাত কারখানা। নতুন এই স¤প্রসারণ প্ল্যান্টে রড তৈরিতে সর্বাধুনিক কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যা এশিয়ায় প্রথম ও বিশ্বের দ্বিতীয় কোম্পানি হিসেবে জিপিএইচ ইস্পাত এ প্রযুক্তির ব্যবহার করতে যাচ্ছে। বর্তমানে কোম্পানিটির এমএস রড উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আর এমএস বিলেট উৎপাদন ক্ষমতা ১ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন। এই কারখানাটি চালু হওয়ার ফলে কোম্পানিটির এমএস বিলেটের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১০ লাখ মেট্রিক টন বেড়ে যাবে।
কোম্পানির বড় ধরণের এই বাণিজ্যিক স¤প্রসারণের কারণ হিসেবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাংলাদেশে স্টিলের মাথাপিছু ব্যবহার ৩৫ থেকে ৩৭ কেজি। বাংলাদেশে এখন নানা ধরণের উন্নয়ন কর্মকাÐ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি কংক্রিটের ভবনের পরিবর্তে ইস্পাতের ভবন তৈরির প্রবণতাও দিন দিন বাড়ছে। তাই ভবিষ্যতে স্টিলের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। সেটিকে মাথায় রেখেই দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা নিয়ে এ ধরণের প্ল্যান্ট তৈরি করা হয়েছে। আর ধীরে ধীরে উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে গেলে তাতে বাজার ধরা কঠিন হয়ে পড়বে। সেই সাথে অপচয় হবে অর্থেরও। এসব কথা বিবেচনা নিয়ে অতিমাত্রায় ঝুঁকি নিয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স¤প্রসারিত নতুন প্ল্যান্ট বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া এই টেকনোলজি-অটোমেশন ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বিশ্বমান বজায় রাখবে। এতে একই সাথে মেল্টিং, রিফাইনিং, কাস্টিং ও রি-রোলিং সুবিধা থাকবে যা শুধু বাংলাদেশে নয়, বরং এশিয়া অঞ্চলে সর্বপ্রথম ও সর্বাধুনিক হবে। ফলে এতে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন পণ্যের উৎপাদন নিশ্চিত হবে।
চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কোয়ান্টাম আর্ক টেকনোলজির ফলে জিপিএইচ ইস্পাতের শতভাগ গুণগত মানের পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। একই সাথে মেল্টিং, রিফাইনিং, কাস্টিং ও রি-রোলিং এর ফলে পণ্যের উৎপাদন খরচ একেবারেই কমে যাবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ব্যবহার হ্রাস পাবে। এখানে সর্বাধুনিক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
এছাড়া সীতাকুন্ড এলাকায় পানি সংকটের কারণে গত ২০ থেকে ২৫ বছর আগে ভারী শিল্প গড়ে উঠেনি। শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বৃষ্টি পানি সংরক্ষণ করতে হবে।
এজন্য এখানকার ছড়াগুলো মুখে বাঁধ দিয়ে পানি সংকট নিরসন করা যেতে পারে। এতে করে সৃষ্টি হবে অনেক নৌপথের। পাহাড়ে উৎপাদিত ফল ও সবজি সহজে বাজারজাত করা যাবে। বিকশিত হবে পর্যটন শিল্পেরও।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জিপিএইচ গ্রæপের পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল। তিনি বলেন, জিপিএইচ ইস্পাতের নতুন প্ল্যান্টটি চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখবে। যুব সমাজের কর্মসংস্থানেও অনেক বড় অবদান রাখবে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি যন্ত্রপাতি অত্যাধুনিক। দেশের আর কোথাও এমন প্রতিষ্ঠান নেই। সারা বিশ্বে এ মানের প্রতিষ্ঠান আছে মাত্র দুটি।
কারখানাটি পরিদর্শনের সময় জিপিএইচ গ্রæপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার অভিক ওসমান, প্রজেক্টের হেড সৈয়দ সৌমেনসহ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।