বিশ্বজুড়ে গত বছর হামে প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার ৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তাদের এক যৌথ প্রতিবেদনে ২৩ বছরের মধ্যে ২০১৯ সালেই হামে মৃত্যুর পরিমাণ সর্বোচ্চ স্তরে উঠেছে বলে জানানো হয়েছে। ভ্যাকসিনে প্রতিরোধ করা যায় এমন রোগের এ ধরনের উত্থানে স্তম্ভিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কোভিড-১৯ মহামারী অব্যাহত থাকলে শনাক্তকরণ ও টিকাদান ব্যাহত হওয়ায় হামের প্রকোপ আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
২০১৯ সালে হামে মোট মৃত্যু তিন বছর আগের তুলনায় ৫০ শতাংশের মতো বেড়েছে, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত মূল্যায়নে এমনটাই বলা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
বিশ্বজুড়ে বাড়লেও যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক সময়ে হামে মৃত্যুর কোনো খবর পাওয়া যায়নি; যদিও গত বছর দেশটির ৩১টি রাজ্যে হামে আক্রান্ত এক হাজার ২৮২ জনের সন্ধান মিলেছে। ১৯৯২ সালের পর এটিই সর্বোচ্চ। ২০১২ সালেও যুক্তরাষ্ট্রে হামে মাত্র ৫৫ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছিল। খবর বিডিনিউজের
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপর্যাপ্ত টিকাদানের কারণেই বিশ্বজুড়ে এখন হামে মৃত্যু বাড়ছে। চলমান মহামারীর কারণে কোভিড-১৯ এর চেয়েও বেশি প্রাণঘাতী রোগ হামের বিস্তৃতি আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ২০১৯ এর তুলনায় হামে কম আক্রান্ত হয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদন বললেও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এখনই একে পূর্ণাঙ্গ তথ্য হিসেবে মেনে নিতে রাজি হচ্ছেন না।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতির যে বেহাল দশা, তাতে হামের চিকিৎসা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি শনাক্তকরণও কম হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। মহামারীর কারণে টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত রাখা ২৬টি দেশের অন্তত অর্ধেক দেশে এর মধ্যেই হামের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, চলতি মাস পর্যন্ত প্রায় ৯ কোটি ৪০ লাখ মানুষ হামের টিকার বাইরে থাকার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তবে কোভিড-১৯ রুখতে যেসব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর কারণেও অনেক অঞ্চলে হামের প্রভাব কমতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
সাধারণত মিজেলস অ্যান্ড রুবেলা ইনিশিয়েটিভ নামের একটি সংঘ বিভিন্ন অঞ্চলে হামের প্রাদুর্ভাবের বিস্তারিত প্রকাশ করে। আন্তর্জাতিক এ সংঘটির মধ্যে ডব্লিউএইচও, সিডিসি, আমেরিকান রেড ক্রস, ইউনিসেফ ও জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনও আছে।
গত বছর যে ১৮৪টি দেশের তথ্য নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ৯টি দেশেই বিশ্বজুড়ে মোট হামে আক্রান্তের ৭৩ শতাংশ পাওয়া গেছে। দেশগুলো হচ্ছে- সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, জর্জিয়া, কাজাখস্তান, মাদাগাস্কার, নর্থ মেসিডোনিয়া, সামোয়া, টোঙ্গা ও ইউক্রেইন।
“যুক্তরাষ্ট্রের মতো উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে হামে মৃত্যুর হার কার্যত শূন্যের কাছাকাছি। মূলত এসব দেশগুলোতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো এবং স্বাস্থ্যসেবা তুলনামূলক শক্তিশালী। কিন্তু গতবছর বিশ্বজুড়ে হামে যে বিপুল সংখ্যক মৃত্যু দেখা গেছে তা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা এবং অপর্যাপ্ত টিকাদানেরই নিদারুণ ফল,” বলেছেন সিডিসির মহামারী বিশেষজ্ঞ রব লিংকিন্স।