বিশ্বকাপ ফুটবলের সফল সমাপ্তি অভিনন্দন আর্জেন্টিনা, অভিনন্দন মেসি

21

‘এ মিলন অনবদ্য, এ বিরহ অনির্বচনীয়’। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ক্রীড়ামোদি নরনারীর আরাধ্য বিশ্বকাপ ফুটবল। ফিফা বিশ্বকাপ-২০২২ এর আয়োজক ছিল মধ্য প্রাচ্যের ধনিদেশ কাতার। কাতার বিশ্বকাপে সমগ্র বিশ্ব তে বাছাইকরা ৩২টি দেশ অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। ফুটবল সমগ্র বিশ্বে একটি জনপ্রিয় খেলা। ফুটবলের চর্চা যে সকল দেশে আছে তাদের স্বপ্ন বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে আন্তঃমহাদেশীয় দেশগুলোকে কঠিন প্রতিযোগিতা করে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। সকল মহাদেশ হতে ৩২টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে এ বিশ্বকাপে। চারবারের বিশ্বকাপ জয়ী দল ইতালি বাছাই পর্বে ঝরে গেছে, আসতেই পারেনি এবারের বিশ্বকাপে। এতেই বোঝা গেছে যে, বিশ্বকাপে খেলা বড় সহজ নয়। যে সকল দল বিশ্বকাপে খেলেছে তারা সবাই যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে বাছাইপর্ব শেষ করে এসেছে। তারপরও ফিফার নিয়ম অনুসারে গ্রæপ পর্বে খেলায় যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে নকআউট পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। এবারের বিশ্বকাপে গ্রæপ পর্বে চারবারের বিশ্বকাপজয়ী দল জার্মানকে গ্রæপ পর্বেই বিদায় নিতে হয়। কঠিন এ প্রতিযোগিতার শক্তিমান যুদ্ধ শেষ করে অবশেষে দু’টি দল ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। গ্রæপপর্ব, নকট্ আউট ষোল, কোয়াটার ফাইনাল এবং সেমিফাইনাল অতিক্রম করে যে দু’টি দল ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে এদের মধ্যে ছিল ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা। ফ্রান্স ছিল গতবারের চ্যাম্পিয়ন, আর আর্জেন্টিনা গতবারের কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন। দু’দলের খেলোয়াড়দের ক্রীড়া নৈপুণ্য, ঐতিহ্য এবং শক্তি-সাহস তাদের বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার আসরে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছে। ২০ নভেম্বর ২০২২ হতে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্বকাপ ফুটবলের এই আসর সমগ্র বিশ্ববাসীকে মগ্ন করে রেখেছিল। যে সকল দেশ বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি সে সকল দেশের ফুটবল মোদি মানুষও বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রত্যেকটা ম্যাচ দেখার জন্য নির্ঘুম রাত কাটাতে দেখা গেছে।
আমাদের দেশ ফুটবল র‌্যাংকিং-এ অনেক পিছিয়ে থাকলেও বিশ্বকাপ শুরু হবার পর হতে দেশের মানুষ মগ্ন থেকেছে বিশ্বকাপের খেলা দেখতে। নিজ দেশের দল না থাকলেও বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন দেশের ফুটবল টিমকে সমর্থন করতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশের মানুষ মূলত দক্ষিণ আমেরিকার নান্দনিক ফুটবল পরাশক্তি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের খেলা বেশি পছন্দ করে থাকে। আবার ইউরোপের বহুদেশের খেলারও ভক্ত রয়েছে এদেশে। খেলা আনন্দের বিষয়। ফুটবল শিল্পীরা খেলার মাঠে দর্শকদের ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখিয়ে মুগ্ধ করে রাখে। যে দলের খেলা যার ভালোলাগে সে সেদলের ভক্ত হয়ে ওঠে। তারপরও কিছু ফুটবল দল বিশ্বে তাদের ক্রীড়া নৈপুণ্য, বিশ্বকাপ জয় এবং ফুটবল ঐতিহ্য সৃষ্টি করে বিশ্বের দরবারে অভিজাত দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের মধ্যে ব্রাজিল, জার্মানি, ইতালি, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, স্পেন, ইত্যাদি দল বিশ্বকাপে দাপটে খেলে চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছে। বিশ্বের সমর্থকরা বিশ্বকাপ জয়ী দলগুলোর প্রতি একটু বেশি অনুরক্ত। ২০২২ সালের প্রতীক্ষিত বিশ্বকাপের ফাইনালে দুবারের বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স মুখোমুখি হয় তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ বিজয়ী হবার লড়াইয়ে। ফাইনালে নাটকীয় ও টানটান উত্তেজনার খেলায় দুদল ১২০ মিনিট ধরে যুদ্ধ করে। শেষ পর্যন্ত ১২০ মিনিটের খেলায় উভয় দল ৩-৩ গোলে সমতায় দাঁড়ায়। অবশেষে ট্রাইব্রেকারে ৪-২ গোলে নিষ্পত্তি ঘটে বিশ্বকাপের এ মহাযুদ্ধের। আর্জেন্টিনা ৪-২ গোলে ফ্রান্সকে পরাজিত করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ফাইনাল খেলায় সর্বমোট ৭-৫ গোলে জেতার জন্য আর্জেন্টিনা ফুটবল দলকে অভিনন্দন জানাই। আর্জেন্টিনা দল বিশে^র অন্যতম সেরা ফুটবল যাদুকর মেসির ক্যারিশ্মায় চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করায় ৭ বারের ব্যালেন্ডিয়ার জয়ী তারকা ফুটবলার। ফুটবলের সর্বকালের সেরা হবার গৌরব অর্জন করার পথে ফুটবলের কিংবদন্তী পেলে, মেরাডোনাসহ অনেকের রেকর্ড ভঙ্গ করে অনেক উচ্চতায় দাঁড়াতে পেরেছে মেসি। বহু নতুন রেকর্ড সৃষ্টিও করেছে সে। ফাইনালে উভয় দলের খেলা সমগ্র বিশ্বের ফুটবলমোদিরা দারুণভাবে উপভোগ করেছে।বিশ্বকাপ শুরুর প্রাক্কালে দেশে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সমর্থক বেশি চোখে পড়লেও শেষ পর্যন্ত ফাইনালে দেশের অধিকাংশ মানুষ আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ বিজয় কামনা করতে দেখা গেছে। আর্জেন্টিনার বিজয়ে দেশের ক্রীড়ামোদি মানুষের বিজয় হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সফলভাবে বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২ শেষ হওয়ায় আমরা আয়োজক দেশ কাতারসহ ফিফাকে ধন্যবাদ জানাই। ‘ইতিহাস বিজয়ীকে করে যায় শাশ্বত স্মরণ’। তার সাথে অভিনন্দন টিম আর্জেন্টিনা ও অধিনায়ক মেসি।