বিলুপ্তপ্রায় চাপা কল ভরসা গভীর নলকূপ

95

রাহুল দাশ নয়ন

গ্রামেগঞ্জে বাড়ি আঙিনায় দেখা মিলতো চাপা কল (টিউবওয়েল)। প্রতিটি ঘরেই পানির যোগান দিত এই চাপা কল। এখন প্রযুক্তির উন্নয়নে চাপা কল প্রায় বিলুপ্ত। ধীরে ধীরে টিউবওয়েল চেপে পানি তোলার দিন ফুরাচ্ছে। এখন সুইচ টিপলে কিংবা পানির কল মোচড় দিলেই অবিরত পানি ঝরে। গ্রামেগঞ্জে আগের চেয়ে পানির চাহিদা বাড়ায় চাপা কলের পরিবর্তে গভীর নলকূপ বসিয়ে সুপেয় পানির যোগান দেয়া হচ্ছে। তৃষ্ণা মেটাতে এই অতিরিক্ত পানির যোগান দিতে গিয়েই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিনদিন নিচে নামছে। গত পাঁচ বছর ধরে পানির স্তর কমায় চাপা কলে পানি না ওঠায় গভীর নলকূপ বসানোয় উৎসাহিত করা হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র নাথ পূর্বদেশকে বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট থাকে। আগে নিয়মিত বৃষ্টিবাদল হলে পানি জমে বন্যা হতো। বন্যার কারণে গ্রাউন্ড ওয়াটার রিফিট হলে পানির সমস্যা থাকতো না। এখন যে বৃষ্টি হয় তাতে পানি জমে না। যে কারণে গ্রাউন্ড ওয়াটার রিফিট হচ্ছে না। প্রাকৃতিক কারণে দিনদিন পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাত আমাদের খুবই দরকার। নইলে সামনে আরো সংকটে পড়তে হবে। সারাবিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে চাপা কল বসাতে পারছি না। চাপা কলে পানিও আসে না। এজন্য পদ্ধতি পরিবর্তন করে সাবমার্সিবলে (গভীর নলকূপ) যেতে হয়েছে। আপাতত সাবমার্সিবল দিয়ে চালানো হচ্ছে। পানির স্তর যদি সঠিক থাকে দেশের জন্য ভালো। চাপা কলে এমনিতে পানি কম উঠছে বলেই সাবমার্সিবল নলকূপ বসাতে হচ্ছে।’ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর সূত্র জানায়, শহরাঞ্চলে সুপেয় পানি সরবরাহের দায়িত্বে আছে ওয়াসা। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা তদারকি করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। পৌরসভা এলাকায় পৃথক প্রকল্প গ্রহণ করে পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সন্দ্বীপ পৌরসভায় পানি শোধনাগার বসানো হয়েছে। চন্দনাইশ ও বাঁশখালী পৌরসভার আট হাজার পরিবারে দ্রুত সময়ের পৌঁছে যাবে নিরাপদ পানি। একইভাবে মিরসরাই ও সাতকানিয়া পৌরসভাতেও দুটি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। পৌরসভায় বড় প্রকল্পে পানির যোগান দেয়া হলেও ইউনিয়ন কিংবা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাবমার্সিবল ডিপ টিউবওয়েল (গভীর নলকূপ) বসিয়ে পানির যোগান দেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামে ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ বছরে ১৭ হাজার ৪৪৮টি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। নতুন করে বাস্তবায়নাধীন আছে আরও পাঁচ হাজার ৩২৯টি নলকূপ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যান্ড পাম্প বা চাপা কলে পানি না ওঠার পেছনের কারণ গভীর নলকূপ। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে যেখানে সেখানে গভীর নলকূপ বসানো কারণেই পানির স্তর কমে যাচ্ছে। গভীর নলকূপের কারণে আশপাশের এলাকার জলাধারগুলোর পানিতেও টান পড়ছে। সেচ মৌসুমে চাপা কলগুলোতে মোটেই পানি উঠে না। যে কারণে মানুষ চাপা কল বসাতো নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
বাঁশখালী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মাহমুদুল হাছান পূর্বদেশকে বলেন, ‘কোন এলাকার পানির স্তর কত তার উপর ভিত্তি করেই নলকূপ বসানো হয়। ওয়াটার লেভেল যদি খুব কাছাকাছি থাকলে হাতের সাহায্যে বল প্রয়োগ করে পানি তোলা যায়। অন্যথায় মোটরের সাহায্যে পানি তুলতে হয়। যেসব এলাকায় পানির স্তর ৬০-২৫০ ফিটের মধ্যে থাকে সেখানে এখনো হ্যান্ড পাম্প বসানো যায়। ২৫০ ফিটের উপরে গেলেই গভীর নলকূপ বসানোর বিকল্প নেই। এখন অধিকাংশ এলাকায় পানির স্তর কমে যাওয়ায় গভীর নলকূপ বসানো হয়।’