বিলাইছড়িতে ফসল পরিবহনে সঙ্কট

15

পুষ্প মোহন চাকমা, বিলাইছড়ি

পাহাড় মানে পার্বত্য চট্টগ্রাম। উঁচু-নিচু পাহাড়ময় এক জনাকীর্ণ অঞ্চল হওয়ায় একে পার্বত্য অঞ্চল বা চট্টগ্রামের অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বলা হয়। এখানে নৃগোষ্ঠীর নানা স¤প্রদায় বসবাস ও জীবন ধারণ করে থাকে। ভূতপূর্বকাল হতে এখানে জনবসতি কিংবা বহুজাতির জীবন ধারণ চলতে থাকলেও নানা বাস্তবতায় পার্বত্য অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা এখনও রয়েছে যোগাযোগ সুবিধাবিহীন অনুন্নত ও পশ্চাদপদ।তাদের অর্থনৈতিক মূল উৎস হলো কৃষিক্ষেত্র তথা খাদ্যশস্য উৎপাদন। যাদের উৎপাদিত শস্য দেশের আনাচে-কানাচে রপ্তানি হয়ে থাকে। কিছু কিছু পণ্য হয়তো বা দেশ পেরিয়ে ভিনদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। যদিও সেরকম ন্যায্যমূল্য তারা পান না।
সুদূর দুর্গম পাহাড় হতে মাইলের পর মাইল পথ পারি দিয়ে এ শস্য পরিবহন হয় কেবল তাদের কাঁধ ও মাথায় করে। যা দেখলে বুঝা যায় পাহাড়ের এক এক মানুষের জীবন যেন এক এক জীবন্ত রোবট! যুগ যুগ ঘরে প্রজন্ম-প্রজন্মান্তরে এমন দুর্দ্দশা চলতে থাকলেও কবেই ঘুচবে বা আসলেই কি ঘুচবে তাদের এ দুর্দশা তা তারা মোটেই জানেন না। রাঙামাটির বিলাইছড়িতে এমন এক দুর্গম অঞ্চলে আদর প্রিয় চাকমা (৩০) নামের এক কৃষককে এক উন্নত প্রজাতির কলা পরিবহন করতে দেখা যায়। যার আয়তন চমকে যাওয়ার মত মোটা ও সুউচ্চ! যা তার নিজ থেকে উচ্চতায় বেশি। রাস্তা ও পরিবহনের বাহন না থাকায় দমের সাথে যুদ্ধবেঁধে কাঁধে করে কলারছড়া বহন করছেন মাইলকে মাইল পথ পায়ে হেঁটে। যার ওজন শতকেজি হতে কম না বরং বেশিই হতে পারে! এর মূল্য কত হতে পারে জানতে গেলে তিনি বলেন, সস্তা! সস্তা! তার এমন কষ্ট দেখেও আমি বলি কত হতে পারে আনুমানিক!বলেন প্রত কলারছড়া ৩ থেকে বড়জোর ৪ শত টাকা যেতে পারে, করার কিছু নাই। বেঁচে থাকার তাগিদে না করেও উপায় নাই। পেট আছে তো খেতে হয়। তাই পেটের দায়ে বাধ্য করতে হয় এমন আক্ষেপ জানান তিনি। পাহাড়ে বহু প্রজাতির শস্য উৎপাদিত হয়। তার মধ্যে পেঁপে, কলা, মরিচ, আদা, হলুদ, তিল, তুলাসহ নানা প্রজাতির শস্য উৎপাদন হয়। কিন্তু পরিবহন অসুবিধা ও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এখন অনেক শস্য আর উৎপাদন করা হয় না। তারমধ্যে সরিষা, তিল এবং তুলা এখন একেবারেই চাষ ও উৎপাদন করা হয় না বলে জানা যায়। স্থানীয় অনেক জুমচাষী কৃষকের সাথে কথা হয়।
কথা বলে জানা যায়, পরিবহণের সুযোগ ও প্রকৃত বাজার দর না পাওয়ায় কৃষকরা অনেকগুলো শস্যচাষে আর আগ্রহী নয়।
তিল, তুলা আর সরিষা চাষ তো কোন কোন এলাকায় একেবারেই বিলুপ্ত হয়েগেছে। যেহেতু শ্রম আছে, মূল্য নেই, মধ্যসত্বভোগী বা ব্যবসায়ীরা তাদের মুনাফার জন্য উৎপাদনকারী শ্রমিকদের উচিত মূল্য দেয় না। তবে পরিবহন সুবিধা ও সঠিক বাজারমূল্য পেলে কৃষকরা এসব ফসল চাষে আগ্রহী হতে পারে বলে জানান তারা।