বিরোধের শেষ কোথায় আদালত নাকি আন্দোলনে?

19

সবুর শুভ

পরীর পাহাড় তথা আদালত ভবনের বয়স ১৩০ বছর। আর আইনজীবী সমিতির বয়স ১২৫ বছর। এ পরীর পাহাড় নিয়ে আইনজীবী সমিতি ও জেলা প্রশাসনের তরজা একেবারে চূড়ায়। এ পাহাড়ে আইনজীবী সমিতির যেমন ভবন আছে তেমনি জেলা প্রশাসনের তরফে লিজ দেয়া দোকানপাটও আছে। সর্বশেষ তথ্য মতে, পরীর পাহাড় রক্ষায় অননুমোদিত বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদের প্রস্তাবনায় অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এটা চাওর হওয়ার পর আইনজীবী সমিতি মেরাথন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। নিজেদের ভবন রক্ষায় জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও আইনি লড়াই দু’টোর প্রস্তুতিই রেখেছেন বলে জানালেন সমিতির নেতারা। তবে এর আগে সংশ্লিষ্ট নতুন দু’টি ভবন নির্মাণে গঠিত বিল্ডিং কমিটি, সমিতির সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সাথে বৈঠক ও সংবাদ সম্মেলনের মতো বিষয়গুলো সারতে চান বলে জানালেন সমিতির সভাপতি এডভোকেট এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিন। এরপরই আন্দোলন ও আইনি লড়াই।
এদিকে পরীর পাহাড় নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখার জারিকৃত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের আগস্ট মাসে দ্বিতীয় পক্ষের পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গৃহীত প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। পরীর পাহাড়ের সার্বিক অবস্থা দেখতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস চট্টগ্রাম আসছেন ২৩ সেপ্টেম্বর। থাকবেন ৬দিন।
প্রসঙ্গত : ১৩০ বছরের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ পরীর পাহাড়ে আইনজীবীদের জন্য দু’টি নতুন ভবন নির্মাণ করা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে যায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরীর পাহাড় রক্ষায় গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। এ ঘটনায় গত ৮ সেপ্টেম্বর আইনজীবী সমিতি সাধারণ সভা করে। দু’পক্ষের দ্ব›েদ্বর মধ্যেই চট্টগ্রাম ওয়াসা, বিদ্যুৎ বিভাগ ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সহ ১৪টি সেবা সংস্থার কাছে চিঠি দেয় জেলা প্রশাসন।
অপরদিকে আদালত ভবন এলাকায় আইনজীবীদের নতুন দু’টি ভবন নির্মাণের অংশ হিসেবে ‘চেম্বার বরাদ্দ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করা হয়। ইতোমধ্যে ৫০টি’র মতো বরাদ্দ ফরমও বিক্রি হয়েছে বলে জানান এডভোকেট এনামুল হক।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোমিনুর রহমান জানান, পরীর পাহাড়ে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণ না করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের যেরকম আদেশ দেওয়া হবে, সেভাবে কাজ করবো। ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা নিয়ে ফায়ার সার্ভিস নিজস্ব একটা সমীক্ষা করেছে। পরিবেশ অধিদফতরও পরিবেশগত সমীক্ষা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও কাজ করছে। সবমিলে পরীর পাহাড় সংরক্ষণে আমরা কাজ করছি।
এডভোকেট এনামুল হক ও জিয়াউদ্দিন বলেন, আইনজীবী সমিতির ক্রমবর্ধমান সদস্যদের প্রয়োজনের বিষয় বিবেচনা করে সমিতির নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ১৯৭৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকারি খাস জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। ১৪৮৮৮ নং লিজ দলিল মূলে চট্টগ্রাম কোর্টহিলে সরকারি খাস জমি চৌহদ্দি উল্লেখপূর্বক সরকার এ বরাদ্দ দেয়। যা সরকারের ১নং খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত নয়। আইনজীবীদের প্রতিটি ভবন সিডিএ কর্তৃক অনুমোদিত।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক বলছেন, নগরের কেন্দ্রস্থলে পাহাড় চূড়ায় প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং অবস্থিত। এ অংশে রয়েছে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ সর্বমোট ৭১টি আদালত। জেলা প্রশাসকের নামে এখানে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ১১.৭২ একর জায়গা রয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি ‘বঙ্গবন্ধু আইনজীবী ভবন’ ও ‘একুশে আইনজীবী ভবন’ নামক দুইটি ভবন নির্মাণে দরপত্র আহব্বান করে এবং ৬০০টি চেম্বার বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
আইনজীবী নেতৃবৃন্দ বলছেন, সমিতির ভবনসমূহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইন মন্ত্রণালয়ের অনুদান এবং সমিতির নিজস্ব অর্থায়ণে নির্মিত হয়। ভবনসমূহ নির্মাণে কয়েক দফায় মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান দেওয়া হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথম দফায় সরকারে আসার পর আইনজীবীদের ভবন নির্মাণে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। সমিতির কোনও ভবন অবৈধ হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কোনও মন্ত্রণালয় অনুদান প্রদান করতেন না নিশ্চয়।
জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর ব্যর্থতার কারণেই ২০১২ সালে কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় জঙ্গি হামলার কথা উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন স্বৈরশাসকের গুলির মুখে আইনজীবীরা মানবঢাল হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জীবনরক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন। অন্যরা তখন কোথায় ছিলেন? প্রশ্ন রাখেন তাঁরা।
এদিকে আইনজীবী সমিতির কর্মসূচি পালনের অংশ হিসেবে গতকাল বিল্ডিং (নতুন ভবন নির্মাণে) কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানিয়ে এডভোকেট এনামুল হক বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (আজ) সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককের সাথে বর্তমান নেতৃবৃন্দের বৈঠক ও আগামী রোববার আইনজীবী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসকের যাবতীয় মিথ্যাচারের (নেতৃবৃন্দের ভাষায়) জবাব থাকবে।