বিমান ও বন্দরের নিরাপত্তায় মনোযোগী হতে হবে

15

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উড্ডয়নের সময় বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজের পাখার ধাক্কায় দুটি গরুর মৃত্যুর ঘটনা চাঞ্চল্য ছড়ায়। অলৌকিকভাবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে ৯৪ যাত্রীসহ ইউএস বাংলার বিমানটি রক্ষা পাওয়ার পর কক্সবাজার বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। গরুর সঙ্গে ধাক্কার পরও পাইলটের বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতায় যাত্রী নিয়ে আকাশে ওড়ে বিজি ৪৩৪ ফ্লাইটটি নিরাপদে ঢাকায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়। এ ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে বিখ্যাত হলিউডি সিনেমা ‘ঝহধশবং ড়হ ধ চষধহব’ কে। যেখানে দেখানো হয়েছিল একটি যাত্রীবোঝাই বিমানজুড়ে বিষধর সাপের দাপট। পর্দার সে বিভীষিকার সাথে মিল না থাকলেও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পশুপ্রাণীর অবাধ বিচরণের খবর যথেষ্ট আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে, তদন্ত কর্তারা এ নিয়ে কাজ করছেন। তবে এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ঢাকা হজরত শাহজালাল(রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ও চট্টগ্রাম হজরত শাহ আমানত (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে দুটি বিমানের জরুরি অবতরণ নতুনভাবে আতঙ্কেও জন্ম দিয়েছে। সূত্র জানায়, গত বুধবার রাতে ২০ মিনিটের ব্যবধানে বিমান দুটি জরুরি অবতরণ করে। শাহ আমানত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করা বিমানটি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। ল্যান্ডিং গিয়ার কাজ না করায় জরুরি ভিত্তিতে এটি অবতরণ করতে হয়। অন্যদিকে ঢাকায় জরুরি অবতরণ করা বিমানটি মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের। বিমানের এক যাত্রীর কাছে বোমা থাকার সন্দেহে বিমানটি জরুরি অবতরণ করানো হয়। বিমানটি অবতরণের পরপরই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নেয় এবং তল্লাশি অভিযান শুরু করে। দৈনিক পূর্বদেশসহ সহযোগী সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ঢাকা থেকে শেষ অভ্যন্তরীন ফ্লাইট হিসাবে বিজি-৬১৭ বিমানটি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। বিমানটি অবতরণের সময় ল্যান্ডিং গিয়ার কাজ করছিল না। পাইলট একাধিকবার গো অ্যারাউন্ড করে ল্যান্ড গিয়ার রিলিজ করার চেষ্টা করেন। বারবার চেষ্টা করেও নোজ ল্যান্ড গিয়ার কাজ করছিল না। টানা তিনবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন পাইলট। এরইমধ্যে জরুরি অবতরণের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। চতুর্থ প্রচেষ্টা হিসাবে পাইলট জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। জরুরি অবতরণের সময় মেইন গিয়ার রানওয়ের ধাক্কায় নোজ ল্যান্ডিং গিয়ার রিলিজ হয়। এতে কোন সমস্যা ছাড়া রাত ৯টা ৪০ মিনিটে বিমানটি নিরাপদ অবতরণ করা সম্ভব হয়। বিমানটি ৪২ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারে সমস্যা দেখা দিলে সেটি জরুরি অবতরণ করে। আশার কথা যাত্রীরা সকলেই নিরাপদে ছিলেন। কোন ধরনের সমস্যা হয়নি। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজে বোমা থাকার খবরে ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। এসময় সতর্ক অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এই সময়ে মালয়েশিয়ার একটি উড়োজাহাজের এক যাত্রীর কাছে বোমা আছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। উড়োজাহাজটি শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করলে সেটিতে তল্লাশি শুরু করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র জানায়, এমএইচ-১৯৬ ফ্লাইটটি কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকায় এসেছে। রাত ১০টার দিকে উড়োজাহাজটি শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর আগেই খবর পাওয়া যায়, ওই উড়োজাহাজের এক যাত্রীর কাছে বোমা আছে। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিমানবন্দরে সতর্ক অবস্থান নেন। এ দুটি বিমান ভিন্ন ভিন্ন কারণে জরুরি অবতরণ করলেও অভিন্ন আতঙ্কের মধ্যে পড়েছিল বিমানের যাত্রীরা। এসব ঘটনার আগে বিমানের পাইলটদের বেতন বৈষম্য নিয়ে আন্দোলনের ফলে ফ্লাইট সিডিউলে বিপর্যয় ঘটে। এতে দূর যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এরপর তিনদিনের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক তিনটি বিমান বন্দরে তিনটি ঘটনা সাধারণের মনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ছড়ায়। আমরা মনে করি, কক্সবাজারের মত একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্রের বিমান বন্দর কোনভাবেই অরক্ষিত রেখে দেয়া যেতে পারে না। এ ঘটনায় বিমান ও যাত্রীর ব্যাপক ক্ষতি হতে পারত, স্রষ্টার কৃপায় বিমান ও যাত্রী বেঁচে গেলেও দুটি গরুর মৃত্যু প্রমাণ করে, ঘটনা স্বাভাবিক নয়। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামের ঘটনার ভিন্নতার মধ্যেও বিমান উড্ডয়নের আগে বিমান ও যাত্রীদের ভালোভাবে চেক-আপের বিষযটি সামনে এসেছে। আমরা যতটুকু জানি, যানবাহনে যখন দুর্ঘটনা ঘটে তার পেছনে কাজ করে প্রধানত দুটি কারণ। একটি যান্ত্রিক ত্রুটি, দ্বিতীয়টি চালকের ভুল। বিমানের ক্ষেত্রে তৃতীয় একটি কারণ হলো কন্ট্রোল টাওয়ারের নির্দেশ। সম্প্রতি তিনটি ঘটনায় কোন কারণটির ভূমিকা ছিল বেশি তা জানা দরকার। এই মুহূর্তে কোনোটির গুরুত্বও কম করে দেখার উপায় নেই। দুর্ঘটনার পর পাইলট, যাত্রী ও বিমান বেঁেচ গেলেও ঘটনার ব্যাপকতা কিন্তু কোন অংশে কম নয়। তাই, এ ত্রিঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমন প্রত্যাশা আমাদের।