বিভিন্ন দেশের সাথে শিডিউল ফ্লাইট বন্ধ : বিপাকে প্রবাসীরা

9

সম্প্রতি করোনার কারণে বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের ফ্লাইট নিয়মিত যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা লাখ লাখ প্রবাসী। পাশাপাশি এই সময় ঘুরতে আসা অনেক বাংলাদেশি পর্যটক আটকা পড়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কবে নাগাদ ফ্লাইট চালু হবে সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি। এতে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে এসব পর্যটক ও প্রবাসীরা। মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কাজ করে। ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় এসব দেশের প্রবাসীরা স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন।
অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ। দেশ থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে গিয়ে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে হবে। আবার অনেকে কাজ থেকে ছুটি নিয়েছেন দেশে যাবেন বলে। কিন্তু ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় এখানে বসে বসে ছুটি কাটাচ্ছেন। আবার অনেক অসুস্থ প্রবাসী দেশে গিয়ে চিকিৎসা করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু ফ্লাইট বন্ধ থাকায় কেউ কোন কাজ করতে পারছেন না। এতে উভয় সংকটে প্রবাসীরা।
ঘুরতে আসা বাংলাদেশি পর্যটকদের সমস্যা আরো প্রকট। তাদের সাথে নিয়ে আসা টাকা শেষ। অনেকে হোটেলের বিল দিতে পারছেন না, খাবার খেতে পারছেন না। এসব পর্যটকদের দেশে থাকা পরিবার-পরিজনও উদ্বেগের মধ্যে আছে। বিদেশের মাটিতে তারা নিশ্চিত না হয়ে ফ্লাইট বুকিংও দিতে পারছেন না। সামনে ঈদ আসছে। অনেক প্রবাসী কয়েক বছরের মধ্যে ঈদের সময় ছুটি নিয়ে থাকে। দেশে পরিবার-পরিজনের জন্য অনেকে কেনাকাটা করে রেখেছেন। কিন্তু সময়মতো দেশে যেতে না পারলে এসব জিনিস নষ্ট হয়ে যাবে। এতে ছুটির পাশাপাশি তাদের টাকাটাও নষ্ট হবে। সব মিলিয়ে এক ভয়ঙ্কর সময় পার করছেন এসব প্রবাসী পর্যটকরা।
এদিকে সরকার এরই মাঝে কিছু বিশেষ ফ্লাইট চালু করেছে ৫ টি দেশের সাথে। কিন্তু যে নিয়মের মধ্যে টিকিট কাটতে হচ্ছে সবাই সেই নিয়মে টিকিট কাটতে পারছেন না। এতে প্রায় পুরো ভোগান্তি রয়ে গেল বাংলাদেশি প্রবাসী ও পর্যটকদের।
প্রবাসী ও পর্যটকদের দাবি, ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত ফ্লাইট চালু করা হোক। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখে ফ্লাইট চালু হলে কোন সমস্যা হবে না বলে দাবি তাদের। অন্যথায় অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন প্রবাসীরা। এর প্রভাব পড়বে রেমিটেন্সেও। সমস্যা সমাধানে সরকার দ্রæত ব্যবস্থা নিবেন বলে প্রত্যাশা প্রবাসী ও আটকে পড়া পর্যটকদের।
করোনার মধ্যেও বিশ্বের অনেক দেশ ফ্লাইট চালু অব্যাহত রেখেছে। কারণ ফ্লাইট বন্ধ করলেই করোনা শেষ হয়ে যাবে না। বরং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম মেনে ফ্লাইট চালু করার পক্ষে অনেকে। এতে যেমন রেমিট্যান্সের প্রবাহ অব্যাহত থাকবে তেমনিভাবে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ হবে। আমার বিশ্বাস সরকার প্রবাসীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট শুরু করবেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মত দেশ তারাও নিয়ম মেনে বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ রুটে তাদের ফ্লাইট চালু রেখেছে। বাংলাদেশের আয়ের বড় অংশ আসে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কাছ থেকে। কিন্তু এই খাতকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিলে সবারই সমস্যা।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। গত দুই যুগের বেশি সময় আমি মধ্যপ্রাচ্যের আরব আমিরাতে আছি। এখানে প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। এখানকার মানুষের ভোগান্তি আমি নিজ চোখে দেখেছি। দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোতে আরব আমিরাত তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। দিনরাত পরিশ্রম করে অনেকে অর্থ উপার্জন করছেন, সে টাকা দেশে পাঠায় তারা। ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় চরম উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে এসব প্রবাসীরা। এক সপ্তাহে, ১৫ দিনে কিংবা এক মাসের মধ্যে করোনা পৃথিবী থেকে বিদায় হবে না। তাই এই সময়ের মধ্যে ফ্লাইট বন্ধ করে কোন সুবিধা হবে না। এতে একদিকে যেমন প্রবাসীরা ভোগান্তিতে পড়েছে অন্যদিকে অর্থনীতির প্রবাহ বন্ধ হচ্ছে। কিন্তু সরকার যদি নিয়মের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে ফ্লাইট চালু রাখতেন এতে দুই দিকেই লাভ হতো। রেমিট্যান্সের প্রবাহ অব্যাহত থাকতো এবং প্রবাসীরা ভোগান্তিতে পড়তো না। আমাদের প্রত্যাশা সরকার সবকিছু বিবেচনা করে সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হবেন।
লেখক: সভাপতি
ইউএই, প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি