বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে ‘মনিটরিং কমিটি’

37

নগরীতে প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতা হবে এটা নিয়ে এক প্রকার সংশয়হীন নগরবাসী। তবে কতটুকু পানি হবে তা নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা ও নগরবাসীর মধ্যে রয়েছে কিছুটা ভিন্নমত। নগরীর অসহনীয় এ জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ হাজার ৮০৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তিন সেবা সংস্থা। তারা হলো চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর মধ্যে সিডিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। এসব প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি ও বিদ্যমান সমস্যা এবং অসঙ্গতির বিষয়গুলো নিয়ে ভার্চ্যুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল তিনটায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে চট্টগ্রাম থেকে সিটি মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর পিডি ও সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী অংশগ্রহণ করেন। নিজ নিজ অফিস থেকে অংশ নেয়া সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলোর বাস্তব অবস্থা ও বাজেট স্বল্পতার বিষয়ে বিস্তারিত অবহিত হন মুখ্য সচিব। এসময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবগণও ঢাকায় অংশগ্রহণ করেন।
শেষে প্রকল্পগুলোর ভূমি অধিগ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক তদারকি করার জন্য একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার। এছাড়া জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পিডিরাও কমিটিতে থাকবেন। তবে কত সদস্যের কমিটি হল এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত হলেও এর আকার কতটুকু হবে তা নির্ধারিত হয়নি। এদিকে উল্লেখিত প্রকল্পগুলোর কোনটি চার বছর ধরে, কোনটি সাত বছর ধরে, কোন প্রকল্পের কাজ চলছে দুই বছরের বেশি সময় ধরে। কিন্তু ফি বছর জলাবদ্ধতার তীব্রতা কমে না। বরং বেড়ে যায়। এবার মাত্র ৪৪ মিলিমিটারের বৃষ্টিতে বাজেভাবে তলিয়ে যায় নগরীর অধিকাংশ এলাকা। নড়েচড়ে বসে সরকারি সংস্থাগুলো। নগরীতে পানির কারণে জনদুর্ভোগের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এতে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মনোযোগী হয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়। এতো টাকা খরচ করার পরও কেন নগরজুড়ে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে তার কারণ জানতে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সব সেবাসংস্থাকে নিয়ে এক টেবিলে বসতে চায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। আগামী বুধবার জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে ভার্চ্যুয়ালি এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৩ মুহাম্মদ শাহীন ইমরান স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম নগরের প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবরা অংশ নেবেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রকল্প পরিচালকদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়।’ এবার সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার বিষয়টি বেশ আলোচিত হওয়ায় সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রæত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করার অংশ হিসেবেই এ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চট্টগ্রামে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার সংশ্লিষ্টরা সিডিএ’র কনফারেন্স হল থেকে ভার্চ্যুয়াল সভায় যোগদানের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।
সংস্থাগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, চার প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ১০ হাজার ৮০৩ কোটি ৩৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। চারটি প্রকল্পই চলমান। প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে খরচ হয়ে গেছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। তবুও ডুবছে নগর।