বিবিসির প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় বাংলাদেশের সানজিদা

8

পূর্বদেশ ডেস্ক
নিজের কর্মকাÐের মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রেরণা জোগানো প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসি। এ বছরের তালিকায় নানা দেশের অন্যান্য নারীদের সঙ্গে স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া। ময়মনসিংহের এই তরুণী বাল্যবিবাহ বন্ধে কাজ করছেন।
বিশ্বের যেসব দেশে এখনও প্রচুর বাল্যবিয়ে হয় বাংলাদেশ তার একটি। যে চিত্র পরিবর্তন করার চেষ্টা করছেন সানজিদা। সানজিদার মায়েরও বাল্যবিয়ে হয়েছিল।
স্কুলে একটি অনুষ্ঠানে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে জানতে পেরে এ নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন এই তরুণী। খবর বিডিনিউজের
কোথাও বাল্যবিয়ে হচ্ছে খবরে পেলে সানজিদা তার বন্ধু, শিক্ষক ও সহযোগিদের নিয়ে তা বন্ধের চেষ্টা করেন। প্রয়োজনে পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতা নেন।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা ও তার বন্ধুরা নিজেদের ঘাসফড়িংয়ের সদস্য বলে পরিচয় দেন। সানজিদা এখনও ঘাসফড়িংয়ের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এখন ঘাসফড়িং গ্রæপের নতুন সদস্যদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন। এ পর্যন্ত তারা ৫০টি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করেছেন বলে বিবিসি-র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এ বছর বিবিসির এই তালিকায় ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়াও স্থান পেয়েছেন। সাবেক এই বিশ্ব সুন্দরী এখন দেশের সীমা ছাড়িয়ে হলিউডেও কাজ করছেন। তিনি ইউনিসেফের একজন গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে শিশুদের অধিকার এবং মেয়ে শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে কাজ করছেন।
আফগানিস্তানে একটি কোচিং সেন্টারে ভয়াবহ বোমা হামলার পর বেঁচে যাওয়াদের একজন ফাতিমা আমিরি। ওই হামলায় ৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল, যাদের অধিকাংশই ছাত্রী ছিল। হামলায় ফাতিমাও গুরুতর আহত হন। তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। চোয়াল ও কানও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলায় শারীরিকভাবে মারাত্মক আহত হলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েননি কিশোরী ফাতিমা। তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যান এবং এবছর অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরীক্ষা দিয়ে ৮৫ শতাংশের বেশি নম্বর পান। তার স্বপ্ন কাবুল ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সাইন্সে পড়া। তিনি বলেন, হামলায় চোখ হারানোর ঘটনা তাকে আরো দৃঢ় এবং লক্ষ্যে অবিচল মানুষ করে তুলেছে।
ডাউন সিনড্রোম সম্পর্কে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের হাইডি ক্রোটার। যার নিজেরও জন্মগত এই ত্রুটি রয়েছে।
ডাউন সিনড্রোম একটি জেনেটিক সমস্যা। ক্রোমজোমে জটিলতার কারণে মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থাতেই শিশুদের এই রোগ দেখা দেয়। ডাউন সিনড্রোম থাকা শিশুদের শারীরিক এবং বুদ্ধিমত্তাগত বিকাশ অন্যান্য শিশুদের তুলনায় কম হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির মাধ্যমে গর্ভের শিশু ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত কিনা তা এখন আগেই জানা যায়। সাধারণত গর্ভের শিশুর এই জটিলতা ধরা পড়লে চিকিৎসকরা গর্ভপাতের পরামর্শ দেন। যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই যা আইনগতভাবে বৈধ। এটিকেই বৈষম্যমূলক আইন বলছেন হাইডি ক্রোটার। এজন্য তিনি যুক্তরাজ্য সরকারকে আদালত পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছেন।
তিনি ‘পজিটিভ এবাউট ডাউন’ এর পক্ষে প্রচার চালান এবং দ্য নেশনাল ডাউন সিনড্রোম পলিসি গ্রæপের প্রতিষ্ঠাতা। তার লেখা বই ‘আই এম জাস্ট হেইডি’ গত অগাস্টে প্রকাশ পায়।
এক দশক আগে পুলিশি হেফাজতে বøগার ছেলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ইরানের ৭৬ বছর বয়সী মা গহর এশগী। এজন্য তাকে পুলিশি নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। এমনকি তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল বলেও দাবি করেছেন।
তিনি ইরানে ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ের প্রতীক হয়ে ওঠেছেন। তিনি ‘ইরানিয়ান কমপ্লেইনেন্ট মাদার্স’ গ্রæপের একজন। যারা তাদের সন্তানদের হত্যার জন্য সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনিকে দায়ী করেন। খামেনির পদত্যাগ চেয়ে ২০১৯ সালে একটি চিঠিতে সই সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেখানে সই করেছিলেন গহর। আর এবছর মাশা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে ইরানজুড়ে যে বিক্ষোভ চলছে তাতে একাত্মতা প্রকাশ করে নিজের হিজাব খুলে ফেলেছিলেন এই মা।
মাশা আমিনিকে ঘিরে ইরানে যে আন্দোলন চলছে তাতে এবার নারীদের অংশ গ্রহণ উল্লেখ করার মত। অনেক নারী নিজেদের হিজাব খুলে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন বা বিক্ষোভের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ নিজেদের চুল কেটে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। প্রতিবাদে অংশ নেওয়া এই নারীদের ভ‚মিকাকেই এবার স্বীকৃতি জানাতে চেয়েছে বিবিসি। চুল কেটে ফেলা বিশ্বজুড়ে সেলিব্রেটি, রাজনীতিবিদ এবং প্রচারকর্মীদের কাছে হয়ে উঠেছে আন্দোলনের প্রতীক।
যেখানে সৌদি আরবে কয়েক বছর আগেও নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি ছিল না। সেখানে রীমা জুফালি ২০১৮ সালে সৌদি আরবের প্রথম পেশাদার রেসিং ড্রাইভার হয়ে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন। এ বছর তিনি তার নিজস্ব দলও গঠন করেছেন।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট জার্মানির উরসুলা ফন ডের লায়ান। তিনি দেশটির সাবেক চ্যান্সেলর অঙ্গেলা মেরকেলের মন্ত্রিসভাতেও ছিলেন। তিনি জার্মানির প্রথম নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
ব্রেক্সিট থেকে শুরু করে কোভিড-১৯ মহামারী এবং বর্তমান ইউক্রেইন যুদ্ধ সংকটের মধ্যে ইউরোপীয় কমিশনকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ল্যাঙ্গুয়েজ টিম ও বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের পরামর্শ ক্রমে বিশ্বজুড়ে নারীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে প্রতিবছর অনুপ্রেরণাদায়ী এবং প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা করে বিবিসি।
নিজের কর্মকাÐের জন্য খবরের শিরোনাম হয়েছেন বা তাকে ঘিরে অনুপ্রেরণাদায়ী গুরুত্বপূর্ণ গল্প রয়েছে এমন নারীদেরই এই তালিকার জন্য বেছে নেওয়া হয়।