বিপিএল এর নতুন চ্যাম্পিয়ন বরিশাল

9

পূর্বদেশ ক্রীড়া ডেস্ক

ডেভিড মিলার কভার দিয়ে বাউন্ডারি মারতেই ড্রেসিংরুম থেকে ছুটে গেলেন ফরচুন বরিশালের ক্রিকেটাররা। মাহমুদউল্লাহ-মিরাজ সেজদা দিয়ে শুকরিয়া আদায় করলেন। দলের ক্রিকেটাররা সব উন্মাতাল নাচে মাতোয়ারা। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় লেজার শো। চলে আতশবাজির ঝলকানি। বরিশালের প্রথম শিরোপা জয়ের উৎসবের মধ্য দিয়েই বিপিএল দশম আসরের পর্দা নামলো।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর বিপিএলের প্রথম শিরোপা ঘরে তুললো বরিশাল। ২০১২ সালে প্রথম আসরের ফাইনাল খেলেছিল তারা। এরপর আরও দুইবার। এনিয়ে চারবারের চেষ্টায় চ্যাম্পিয়ন হলো তারা। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হ্যাটট্রিক শিরোপার স্বপ্ন ভেঙে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলো বরিশাল। কুমিল্লার দেওয়া ১৫৫ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৬ বল আগে ৬ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে তামিম ইকবালের দল।
২০১২ সালে বিপিএলে প্রথম আসরেই ফাইনালে খেলেছিল বরিশাল। তবে ভিন্ন নামে। গত দশ আসরের মধ্যে তিনবার বরিশালের মালিকানা বদল হয়েছে, যার কারণে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন নামে তাদের খেলতে হয়েছে। কখনও বরিশাল বার্নাস, কখনও বরিশাল বুলস, এখন ফরচুন বরিশাল। তবে মালিকানা বদল হলেও কখনও ভাগ্য বদলায়নি তাদের। ২০১৫ সালে বরিশাল বুলস শিরোপা হারায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে। ৬ বছর পর ২০২২ সালে সাকিবের নেতৃত্বে ফাইনালে উঠেছিল ফরচুন বরিশাল। ওইবার শিরোপা জিততে পারেনি তারা। শ্বাসরূদ্ধকর ম্যাচে এই কুমিল্লার কাছেই ১ রানে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয় সাকিবরা। তবে এবার আর ভুল করেনি তামিমের বরিশাল। কুমিল্লাকে এক প্রকার উড়িয়ে দিয়ে প্রথম শিরোপা ঘরে তুললো তারা।
বরিশালের ট্রফি জয়ের দিনে অনেক নতুন কিছুর সূচনা হয়েছে মিরপুরের ২২ গজে। ফাইনালে অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিয়েই গতকাল শুক্রবার খেলতে নেমেছিল কুমিল্লা। তাদের অহংকার খর্ব করে বরিশাল ছিনিয়ে নিলো ট্রফিটা। এই হারে কেবল ফাইনালে অপরাজিত থাকার কীর্তিটাই খর্ব হয়নি কুমিল্লার, সাথে হ্যাটট্রিক শিরোপাও বঞ্চিত হতে হয়েছে তাদেরকে। অন্যদিকে বরিশালের সবকিছুই প্রথম। বরিশাল বার্নাসের ব্র্যাড হজ, বরিশাল বুলসের মাহমুদউল্লাহ এবং ফরচুন বরিশালের সাকিব আল হাসান যা পারেনি সেটাই করে দেখালেন তামিম। প্রথমবারের মতো বিপিএলের শিরোপা জিতলো তারা। ব্যক্তিগতভাবে এই প্রতিযোগিতায় তামিমের এটি দ্বিতীয় শিরোপা হলেও মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর প্রথম।
বিপিএলের দশম আসরের ফাইনালকে ঘিরে দুইদিন ধরেই দর্শকদের মধ্যে রোমাঞ্চ-উন্মাদনা। টিকিট নিয়ে হুলস্থুল অবস্থা। ২৫ হাজার দর্শকের ধারণক্ষমতার স্টেডিয়াম মিরপুর শেরে বাংলা। পুরো স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ তো ছিল, আরও অন্তত ১০ হাজার দর্শক গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে উত্তেজনাকর ফাইনাল ম্যাচটি উপভোগ করেছেন। এমনকি স্টেডিয়ামের প্রেসিডেন্ট বক্সের ওপরে চেয়ার পাততে বাধ্য হয় বিসিবি। সেখানে বেশ কিছু দর্শক বসার ব্যবস্থা করেন আয়োজকরা। এমন উত্তেজনাকর ফাইনালে পুরোটা সময় গ্যালারি ছিল উৎসবমুখর।
গতকাল শুক্রবার আন্দ্রে রাসেলের ঝড়ো ব্যাটিং ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের দায়িত্বশীল ইনিংসের সুবাদে ১৫৪ রান সংগ্রহ করে কুমিল্লা। সহজ লক্ষ্যে খেলতে নেমে তামিম-মিরাজের দারুণ শুরুতে ম্যাচটা সহজ হয়ে যায় বরিশালের জন্য। অষ্টম ওভারে মঈন আলীকে এক ছক্কা ও দুই চার মেরেছিলেন তামিম। তারপরও শেষ বলটি এগিয়ে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে হন বোল্ড। তাতে ৭৬ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙে তাদের। তামিম ২৬ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৯ রান করেন। এই ইনিংস খেলার পথে টুর্নামেন্টের শীর্ষ রান সংগ্রাহক হয়ে (৪৯২) টুর্নামেন্ট শেষ করলেন দেশের সেরা এই ওপেনার।
তামিমের বিদায় পর দুই ওভারে বাউন্ডারি আসছিল না বরিশালের। মিরাজ বাউন্ডারির সুযোগ নিতে গিয়ে মঈনের বলে চার্লসকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। তার আগে ২৬ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ২৯ রান তুলে ফেলেন ‘মেকশিফট ওপেনার’ হিসেবে খেলা এই অলরাউন্ডার। এরপর তৃতীয় উইকেটে কাইল মায়ার্স ও মুশফিকুর রহিমের ৪২ বলে ৫৯ রানের জুটির ওপর দাঁড়িয়ে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় বরিশাল। মুশফিক আস্তে ধীরে খেললেও মায়ার্স ছিলেন ভয়ঙ্কর। কুমিল্লার বোলারদের নাস্তানাবুদ করে জয় থেকে ১৪ রান দূরে থাকতে তিনি আউট হন। ৩০ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৬ রানের ইনিংস খেলেন ক্যারিবিয়ান এই ব্যাটার। এরপর মুশফিক ১৮ বলে ১৩ রানে বিদায় নিলে জয় পেতে কিছুটা বিলম্ব হয়। মাহমুদউল্লাহ ৭ ও ডেভিড মিলার ৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
দুই ম্যাচ পর মোস্তাফিজ কুমিল্লার একাদশে ফিরেছেন। মাথায় আঘাত লাগার পর বেশ কিছু ম্যাচ খেলতে পারেননি বাঁহাতি এই পেসার। শিরোপার লড়াইয়ের ম্যাচে দলের সেরা বোলার তিনিই। ৩১ রান খরচ করে নিয়েছেন দুটি উইকেট। এছাড়া মঈন ২৮ রান খরচায় শিকার করেন দুটি উইকেট।
গত কয়েক ম্যাচের ধারাবাহিকতায় গতকালও টস জেতেন বরিশালের অধিনায়ক তামিম। টস জিতে কুমিল্লাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় তারা। ওবেড ম্যাকওয়ে প্রথম ওভারেই সুনীল নারিনকে ফিরিয়ে সাফল্য এনে দেন দলকে। এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারাতে থাকে চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা। ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অধিনায়ক লিটন ও তাওহীদ হৃদয় ব্যর্থ হয়েছেন। লিটন ১৬ ও হৃদয় ১৫ রানে আউট হন। মিরাজের দারুণ থ্রোতে মঈন রান আউটের শিকার হয়েছেন।
মাঝে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ উইকেটে ছোট ছোট জুটি গড়েন। ১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে অঙ্কন যখন আউট হন, কুমিল্লার রান তখন ১১৫। পরের ১৪ বলে ঝড় তোলেন আন্দ্রে রাসেল। যদিও শেষ ওভারে সাইফউদ্দিন বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের সামনে খেই হারিয়ে ফেলেন রাসেল। তারপরও তার ১৪ বলে ২৭ রানের ক্যামিও ইনিংসের ওপর ভর করেই কুমিল্লা ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রান তোলে। সর্বোচ্চ ৩৮ রানের ইনিংস খেলেন অঙ্কন। ৩৫ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান কুমিল্লার উইকেট কিপার এই ব্যাটার।
বরিশালের জেমস ফুলার ৪৩ রানে শিকার করেন দুটি উইকেট। এছাড়া সাইফউদ্দিন, মায়ার্স ও ম্যাককয় একটি করে উইকেট নিয়েছেন।