বিনা অনুমতিতে রাস্তা কাটলে ওয়াসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

22

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, চট্টগ্রাম নগরীকে একটি নান্দনিক নগরী গড়তে হলে সকল সেবা সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, চসিকের নির্বাচিত কাউন্সিলর, জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের যে কোনো সমস্যার জবাবদিহি করতে হয় তাদেরকে। তাই নগরীর প্রতিটি উন্নয়ন কাজে তাদের সম্পৃক্ত করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। জলাবদ্ধতা নিরসন ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যে কাজ চলমান আছে সেখানে অনেক সমস্যা এখনো দৃশ্যমান। এই সমস্যাগুলো সমাধানকল্পে জরুরী ভিত্তিতে সমন্বয় সভার আয়োজন করা হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি চসিকের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির ব্যাপারে বন্দর, কাস্টম থেকে যে কর আদায় করার পরিকল্পনা আছে তা বাস্তাবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে পত্র প্রেরণসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করেন। গতকাল সকালে নগরীর আন্দরকিল্লাস্থ পুরাতন নগর ভবনে কে বি আব্দুস ছাত্তার মিলনায়তনে চসিকের ৬ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ২০তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সচিব খালেদ মাহমুদের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর, বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধি ও বিভাগীয় প্রধানগণ।
মেয়র জানান দুই হাজার পাঁচশ কোটি টাকার নগর উন্নয়ন প্রকল্প সম্পূর্ণ সরকারি ব্যয়ে করার জন্য প্রধানমন্ত্রী যে বরাদ্দ দিয়েছেন তা বাস্তবায়নের জন্য নতুনভাবে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার অভিজ্ঞতার আলোকে এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তিনি নগরীতে ম্যাজিস্ট্রেট ও পরিচ্ছন্ন বিভাগ কর্তৃক উচ্ছেদ অভিযানে দখলমুক্ত হওয়া স্থানসমূহ যাতে পুনঃদখল হতে না পারে সেই জন্য বেষ্টনি দিয়ে বাগান তৈরী অথবা ফেন্সিং এর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দেন। এছাড়া স্থানীয় থানাসমূহের তদারকীর ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সহযোগিতা কামনা করে পত্র প্রেরণের নির্দেশনা দেন।
মেয়র আরো বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসা বিনা অনুমতিতে নগরীর বিভিন্ন রাস্তা কাটলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, গ্রাহক ও চসিক প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলীসহ যেসব উপকূলীয় ওয়ার্ড আছে সেখানে খাওয়ার পানি সংকট তীব্র। বিষয়টি চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে বারবার অবগত করা হলেও তারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তিনি সভা থেকে বিষয়টি গুরুত্বে দিয়ে অবিলম্বে উপকূলী ওয়ার্ডগুলোতে খাবার পানি সংকট নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান। মেয়র ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার প্রকোপ রোধে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন ও এডিস মশার উৎপত্তি স্থান ধ্বংস এবং নিয়মিতভাবে মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য ক্র্যাস প্রোগ্রাম অব্যাহত রাখার আহবান জানান।
এছাড়াও মেয়র নগরীর যে সব স্থানে এলইডি টেলিভিশন স্থাপনের মাধ্যমে অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছে তাদের তালিকা তৈরী করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন। সেবক কলোনির বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ ও বাস টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করে প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের সময়ক্ষেপণ ও জটিলতা নিরসনের যে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হচ্ছে তাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে। এই ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য তাদের নির্দেশনা দেন। তিনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক রাস্তা সংস্কারের পর যে সব পোল সরিয়ে নেয়া হয়নি তা অতি দ্রæত সরিয়ে নিতে এবং আগ্রাবাদসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পরিত্যক্ত বৈদ্যুতিক পোলগুলো নালার উপর রাখার কারণে পানি চলাচলে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে তা দ্রুত অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশনা দেন।
সভার শুরুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম সাজেদা চৌধুরীসহ নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মুনাজত করা হয়।