বিধিনিষেধ কাগজে নয় বাস্তবে কার্যকর করুন

12

 

বৈশ্বিক মহামারি করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ও ঢেউ মোকাবেলায় সরকার গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে ১১ দফা বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন শুরু করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী-তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এ বিধিনিষেধ যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। ১৩ ডিসেম্বর বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন ও গতকাল শুক্রবার স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত সচিত্র সংবাদে দেখা গেছে গণপরিবহনসহ কোথাও সরকারের ঘোষিত বিধিনিষেধ মানা হয়নি। মানতে বাধ্য করার জন্য কোন কর্তৃপক্ষের তৎপরতাও লক্ষ্য করা যায়নি। দেশে করোনা পরিস্থিতি আবারও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, শুধু চট্টগ্রামে ১৩ জানুয়ারি একদিনে সনাক্ত হয়েছে ২৬০ জন। সংক্রণের হার ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ। ৩ মাস পর দেশে সামগ্রিকভাবে করোনা সংক্রমণের হার প্রায় ১২ শতাংশ অতিক্রম করেছে। এতে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সনাক্ত হয়েছে ২০ শতাংশের অধিক। এ অবস্থায় সরকারের ঘোষিত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে কার্যকরের কোন বিকল্প নেই। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা করোনা নিয়ে গত দুই বছর আগে মানুষের মাঝে যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা গিয়েছিল- তা এখন নেই কারণ ইতোমধ্যে করোনার দুটি ঢেউয়ে দেশে দুই দফা টানা ‘লকডাউন’ বা বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষা কার্যক্রম হয়ে পড়েছিল স্থবির। এতে মানুষের জীবন ও জীবিকার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এ অভিজ্ঞতার কারণে মানুষ পরবর্তী সময়ে বিধিনিষেধের প্রতি উদাসীন মনোভাব দেখিয়েছে। তাছাড়া করোনা মহামারির শুরুতে মানুষের মধ্যে এ রোগের প্রতি যে ভীতি কাজ করেছে, তা এখন বহুলাংশে কমে গেছে। বস্তুত জীবিকার বিষয় যেখানে জড়িত, সেখানে মানুষকে বিধিনিষেধ দিয়ে আটকে রাখা কঠিন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার ওমিক্রন রোধে যে ১১ দফা বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে, তার সবই পরিবেশ ও জীবন-জীবিকার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেমন বিধিনিষেধে বলা হয়েছে-উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও জনসমাগম বন্ধ থাকবে। অথচ বর্তমানে রাজধানীতে চলছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। সেখানে ব্যাপক জনসমাগম হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষ্যে চলছে গণসংযোগ। স্বভাবতই এসব ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। রেস্তোরাঁয় খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য টিকার সনদ দেখাতে বলা হয়েছে। অথচ দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ এখনো টিকার আওতার বাইরে রয়েছেন। এসব মানুষকে বাদ দিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ কতটা লাভজনকভাবে চালু রাখা সম্ভব, এ প্রশ্ন রয়েছে। সড়ক পরিবহন খাতে প্রায় ৭০ লাখ শ্রমিক রয়েছেন, যাদের সিংহভাগই দুই ডোজ টিকার আওতায় আসেননি। এদিকে গণপরিবহনে মোট আসনের বিপরীতে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার কথা বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে এক দফা পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। যত সিট তত যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালানোর ক্ষেত্রে পরিবহন মালিকরা ভাড়া না বাড়িয়ে গাড়ি চালানোতে একমত হলেও গাড়ির অপ্রতুলতায় ভোগাবে যাত্রীদের। এ সবকিছু মিলে বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বাস্তবতায় যা প্রয়োজন তা হলো ১১ দফা বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের সঙ্গে যেসব মন্ত্রণালয় বা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট রয়েছে, তাদের সমন্বিত কার্যক্রম। আর এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে জনগণকে। এ ক্ষেত্রে যত বেশি সম্ভব মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। আশার কথা, দেশে এখন পর্যাপ্ত টিকা রয়েছে, আরো ফাইজার টিকা আসার পথে। সরকারের টিকা কার্যক্রমও অব্যাহত আছে। শুরু হয়েছে শিক্ষার্থীদের টিকা এবং বুস্টার ডোজ। শুধু বিধিনিষেধে নয় বরং, সরকারের টিকা ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হলে এবং টিকা কার্যক্রমে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করলে করোনা মোকাবিলা করা অনেকটাই সহজ হবে।, জনসচেতনতা, বিধিনিষেধ পালনে আন্তরিকতা এবং টিকা গ্রহণ নতুন ভ্যারিয়েন্ট এর ব্যাপক সংক্রমণ থেকে এদেশ রক্ষা পাবে- এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।