‘বিদ্রোহী’ কবিতা শির উঁচু করতে শিখিয়েছে: খিলখিল কাজী

145

পূর্বদেশ অনলাইন
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালির স্বাধীকারের সংগ্রাম ও অগ্রযাত্রায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা এ দেশের মানুষকে ‘শির উঁচু করে’ চলতে শিখিয়েছে বলে মনে করেন কবির নাতনি খিলখিল কাজী।

তিনি বলেছেন, “বিদ্রোহী কবিতা যদি আজকে রচয়িত না হত, আমরা বিদ্রোহী হতে পারতাম না। ঘুমন্ত বাঙালিকে এই বিদ্রোহী কবিতার মাধ্যমে কবি কাজী নজরুল ইসলাম জাগিয়েছিলেন।”

শুক্রবার সকালে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনে কথা বলছিলেন খিলখিল কাজী।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জনমানসে যখন ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার প্রবল আকাঙ্ক্ষা, তখন ১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কোনো এক রাতে তরুণ নজরুল লিখেছিলেন রক্তে দোলা জাগানো সেই কবিতা। লিখেছিলেন- “বল বীর/ চির-উন্নত মম শির”

কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি বিজলী পত্রিকায়। গত একশ বছরে বহু আন্দোলন সংগ্রামে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা বাঙালিকে দিয়েছে অনুপ্রেরণা।

এই কবিতার শতবর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে দেশ-বিদেশে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে ‘বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদযাপন কমিটি’।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খিলখিল কাজী বলেন, “বিদ্রোহী কবিতা লিখে কাজী নজরুল ইসলাম আমাদেরকে যেভাবে শির উঁচু করতে শিখিয়েছে, বিদ্রেহী হতে শিখিয়েছে, এ রকম আর কোনো কবি তা পারেননি।
“ধূমকেতূর কাঁধে চড়ে, বিদ্রোহীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বাঙালি সাহিত্যে এসেছিলেন। এটা অভাবনীয় যে, মাত্র একুশ বয়সে তিনি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতা তিনি রচনা করে গেলেন।”

স্বাধীকার আন্দোলনে বিদ্রোহী কবিতার প্রভাবের কথা তুলে ধর কবির নাতনি বলেন, “কবি এক রাতে একটি কাঠ পেন্সিল দিয়ে অসাধারণ একটি কবিতা রচনা করলেন, যা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতারূপে প্রকাশিত হয়েছে। তখনকার সময় যুব সমাজ এ কবিতার মাধ্যমে আন্দোলিত হয়েছিল, সব দলে দলে তারা স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।

“সেই সময় সকল বাঙালিকে অত্যাচার, অবিচার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়বার জন্য এই বিদ্রোহী কবিতা সাহস জুগিয়েছিল। তখনকার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যেভাবে সকল অনুপ্রাণিত করেছিল, আজও তেমনিভাবে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।”

বিদ্রোহী কবিতার আবেদনকে সময়ের গণ্ডিতে বাধা যাবে না বলে মনে করেন খিলখিল কাজী। তার ভাষায়, “এটা কালজয়ী কবিতা। যতদিন বাঙালি আছে, সংগ্রাম আছে, অত্যাচার ও অত্যাচারিত মানুষ আছে, নিপীড়িত মানুষ, ততদিন বিদ্রোহী কবিতা আমাদের সঙ্গে থাকবে।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদযাপন কমিটি’, শিল্প বৃত্ত, জাতীয় জাগো নারী ফাউন্ডেশন, তর্কবাগীশ সাহিত্য পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন কবির সমাধিতে ফুল দিযে শ্রদ্ধা জানায়।
এছাড়া ‘স্বপ্নের বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে ‘শতকণ্ঠে’ বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সমাধি প্রাঙ্গণে কবির রচিত রণসংগীত বাজিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এরপর বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী রিয়াজুল হোসাইন টিটু ; শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় ছিল ‘সৃষ্টিসুখের উল্লাসে’ কবিতার আবৃত্তি।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ আতাউল্লাহ খান বলেন, “এই কবিতা শুধু একটি কবিতা নয়, এই কবিতা ব্রিটিশদের হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করে দিয়েছিল। এই কবিতা সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছিল।

“আজকে আমাদের যে স্বাধীন ভূখণ্ড, লাল-সবুজের পতাকা, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের অর্জন, এর পেছনেও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে বিদ্রোহী কবিতা। সুতরাং এই কবিতা একটি স্বাধীন বাংলাদেশ, একটি স্বাধীন জাতিস্বত্বা।”

এই কবিতার প্রচার-প্রসার ও চর্চার জন্য বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদযাপন কমিটি বছরব্যাপী দেশ ও বিদেশে অনুষ্ঠানমালা আয়োজনে প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানান তিনি।