‘বিদ্রোহী’ আওয়ামী লীগ

62

বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন থেকে দূরে থাকায় পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করতে চায় আওয়ামী লীগ। চেয়ারম্যান পদে সাংগঠনিকভাবে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হলেও দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখে দলটি।
কিন্তু দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেই চেয়ারম্যান পদেই একের অধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অর্থাৎ নৌকা প্রতীকের বাইরে গিয়ে অন্যান্য প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। দক্ষিণ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চারটি উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠে আছেন। এসব উপজেলার ১৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ১০ জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত।
জানা যায়, একাধিক প্রার্থী না থাকায় মিরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, হাটহাজারী ও সীতাকুন্ডে বিনাভোটে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের সাত চেয়ারম্যান প্রার্থী। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সাংসদদের প্রচেষ্টায় এসব উপজেলায় একের অধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়নি। যে কারণে বিনাভোটে জয়ী হয়ে নিশ্চিন্তেই আছেন তারা। অন্যদিকে দুশ্চিন্তায় আছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের চারটি উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। এসব উপজেলায় দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি নিশ্চিত করতে কাজ করছে ‘অদৃশ্য শক্তি’। এতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছি। যোগ্যতা বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এরপরেও যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তাদেরকে চিঠি দিয়েছি। দলের সাংগঠনিক সভায় তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে। এভাবে চললে দলের সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়বে। কারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে আছে, কারা বিপক্ষে আছে, এসব তথ্য আমাদের কাছে আছে।
চন্দনাইশে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী একেএম নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী মাঠে আছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার চৌধুরী। একসময় এলডিপির দাপটশালী নেতা জব্বার এখন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে প্রচারণায় আওয়ামী লীগের নৌকা বিরোধী একটি অংশকে পাশে পেয়েছেন তিনি।
পটিয়ায় নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দোয়াত কলম প্রতীকে মাঠে আছেন সাজ্জাত হোসেন। সাজ্জাত হোসেনকে নিয়ে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর মাথাব্যথা না থাকলেও আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আফরোজা বেগম জলিকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
বোয়ালখালীতে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নুরুল আলমকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন আনারস প্রতীকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদের সুজন। দুইজনই নির্বাচনী মাঠে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুল আলমের পক্ষে আছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। দক্ষিণ জেলার কোন উপজেলায় প্রচারণায় অংশ না নিলেও বোয়ালখালীতে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে তৎপর আছেন তিনি। অন্যদিকে আবদুল কাদের সুজনও দলীয় প্রার্থীর বিরোধীতা করা আওয়ামী লীগের একটি অংশকে পাশে পেয়েছেন। নির্বাচন করছেন শ্রমিক লীগ সমর্থিত ওয়াসার সিবিএ নেতা এস.এম নুরুল ইসলাম।
বাঁশখালীতে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চৌধুরী মুহাম্মদ গালিব সাদলীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে আছেন। আনারস প্রতীকে মাঠে আছেন খোরশেদ আলম ও কাপ-পিরিচ প্রতীকে লড়ছেন মৌলভী নুর হোসেন। গালিবের পক্ষে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানসহ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। বাকি দুই প্রার্থীও নৌকা বিরোধী পক্ষকে সাথে নিয়ে নিজেদের নির্বাচনী মাঠে বৈতরণী পার হতে তৎপর আছেন।
লোহাগাড়াতেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী খোরশেদ আলম চৌধুরী বিরুদ্ধে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। তবে উচ্চ আদালতের রায়ে এ উপজেলার ভোটযুদ্ধ স্থগিত রাখা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানায়, দলীয় প্রার্থীদের বিরোধীতার পেছনে একটি শক্তি কাজ করছে। জেলা ও উপজেলা থেকেই একটি পক্ষ বিদ্রোহী প্রার্থীর শক্তির যোগান দিচ্ছে। পক্ষটি নৌকার প্রার্থীর বিরোধীতা করার পেছনে পছন্দের প্রার্থীর মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়াকেই প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন ভোটাররা। যে কারণে পছন্দের প্রার্থীদের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে নামাতে জেলা-উপজেলার বিতর্কিত নেতারাই কুশীলবের ভূমিকায় ছিলেন বলে জানা গেছে।