বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘিরে পরিসর বাড়ছে মাতারবাড়ি বন্দর ও নগরের

19

পূর্বদেশ ডেস্ক

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে পরিকল্পিত বন্দর ও নগরের পরিসর বাড়ছে। এজন্য প্রায় অর্ধেক বাস্তবায়নের পর সরকারে অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্পটির ব্যয় আরও ১৬ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হলো। এতে প্রকল্পের ব্যয় যেমন বেড়ে দাঁড়াল প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকায়, তেমনি মেয়াদও সাড়ে তিন বছর বাড়ানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ব্যয় বাড়িয়ে সংশোধিত প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে অনুমোদন পাওয়া ‘মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিকিটক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার’ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। সংশোধন করে প্রকল্পের ব্যয় ১৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বাড়ানো হল। মোট ব্যয় দাঁড়াল প্রায় ৫১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা।
ব্যয় বাড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শরীফা খান সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম পর্যায়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জেটিসহ কয়লা খালাসের অবকাঠামো তৈরি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত ছিল। অবস্থানগত কারণে এটিকে এখন বন্দর হিসেবে উন্নীত করতে চায় সরকার। তা করতে গিয়ে চ্যানেল, জেটি, ভূমি উন্নয়ন ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের টারবাইনসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি অংশের কাজের পরিমাণ ও ব্যয় বাড়ছে। খবর বিডিনিউজের।
প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, মাতারবাড়ি-ধলঘাটা ইউনিয়নে সরকার ও জাইকার যৌথ অর্থায়নে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরির প্রকল্পটির আওতায় সমুদ্রপথে কয়লা পরিবহনের জন্য ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ২৫০ মিটার প্রশস্ত, ১৮ দশমিক ৫ মিটার গভীর চ্যানেলসহ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনে অবকাঠামো তৈরি এবং কয়লা ও তেল আনলোডিং জেটিসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল।
শরিফা বলেন, চ্যানেলটির গভীরতা ও প্রশস্ততা বাড়ানো হবে। এছাড়াও টাউনশিপ নির্মাণের ব্যয়ও বাড়ছে। ফলে প্রকল্পটির সার্বিক ব্যয় বাড়ছে।
প্রকল্পটিতে সরকারের যোগান ৬ হাজার ৪০৬ কোটি টাকার সিংহভাগ ভূমি উন্নয়নসহ বাণিজ্যিক জেটি তৈরির কাজে ব্যবহার হবে বলে তা পরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সরকারকে পরিশোধ করবে বলেও তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, মাতারবাড়িতে টাউনশিপ গড়ে তোলা হবে। কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সোনাদিয়া পর্যটনকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রকল্প হচ্ছে। এই সামগ্রিক কর্মকান্ড সমন্বয় করার জন্য একটি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর নাম ‘মাতাবাড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ হতে পারে বলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাব করেছেন বলে তিনি জানান।
২০১৪ সালে অনুমোদন পাওয়া এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এখন সংশোধন করে ১৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বাড়ানো হল। এর ফলে প্রকল্পটির মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৫১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা।
২০১৪ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি মাত্র ৪৯ শতাংশ। এখন ২০২৬ সাল ডিসেম্বরে মধ্যে কাজ শেষ করার নতুন লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
প্রকল্পটিতে আগে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) দেওয়ার কথা ছিল ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এবার সেই ঋণ বাড়িয়ে জাইকা মোট দিচ্ছে প্রায় ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। আর প্রকল্পটিতে সরকারি তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ৬ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এই প্রকল্পটিসহ বৈঠকে মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ২৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ১১ হাজার ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে ১৮ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা।
বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ১১৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘অবকাঠামোগত পুনর্গঠনের মাধ্যমে মেরিন একাডেমির আধুনিকীকরণ’ প্রকল্প, একহাজার ৬৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আরিচা (বরঙ্গাইল)-ঘিওর-দৌলতপুর-নাগরপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়ক (আর-৫০৬) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প, প্রায় ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘নড়াইল শহরাংশের জাতীয় মহাসড়ক (এন-৮০৬) প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প, ৫ হাজার ৮৮৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘এস্টাবিøশিং ডিজিটাল কানেক্টিভিটি’ প্রকল্প, ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে তৃতীয় দফায় সংশোধিত ‘রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রæভমেন্ট প্রজেক্ট-২ (আরটিআইপি-২)’ প্রকল্প, প্রায় ২৪০ কোটি টাকার ব্যয় বাড়িয়ে প্রথম দফায় সংশোধিত ‘সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প, ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প, এক হাজার ১৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘খুলনা জেলার পোল্ডার নং-১৪/১ পুনর্বাসন’ প্রকল্প ও ৭৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট’ প্রকল্প।