বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অস্থিরতা ছিল বছরজুড়েই

30

 

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২০২২ সালের পুরোটা সময়ই ছিল অস্থিরতা। ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানেরর পর থেকে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই জ্বালানি খাতে অস্থিরতা দেখা দেয়। সেই অস্থিরতা একটু কমলেও এখনো চলমান।
অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা কাজে না লাগিয়ে আমদানি নির্ভরতার কারণে বৈশ্বিক সঙ্কটের ধাক্কা বাংলাদেশেও ব্যাপকভাবে লাগে। ৬ ডলারের এলএনজি ৪৫ ডলারে উঠে যায়। এ ছাড়া পেট্রোলিয়ামের দামও বেড়ে যায়।
আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্র যেহেতু বেশিরভাগই গ্যাস ও ডিজেলচালিত তাই উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও গ্যাস ও ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন কমাতে হয়। কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ঠিকই দিতে সরকারকে। এক হিসেবে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ৪৪ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ সরকারকে পরিশোধ করতে হয়েছে।
এসব কারণে প্রকট হয় লোডশেডিংও। সরকারের তরফ থেকে শিডিউল করে লোডশেডিং দেওয়া হয়। কিন্তু সেই শিডিউলও শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকেনি। সরকার ঘোষিত শিডিউলের বাইরেও ব্যাপক লোডশেডিং হয়।
বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এসে একটা আশঙ্কা প্রকট হয় যে, দেশের জ্বালানি তেলের মজুদ আছে আর মাত্র ১১ দিনের। শ্রীলংকার সঙ্কটের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশও তেমন সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে কী না।
যদিও সঙ্কট শ্রীলংকার মতো হয়নি সেই সময়। এরপর শীত আসার কারণে লোডশেডিং কমেছে। কিন্তু শিল্পকারখানায় এখনো গ্যাস সঙ্কটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
জনগণের মধ্যে আশঙ্কা ঘণীভ‚ত হওয়ার আরেকটা কারণ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ক্রমাগত হতাশা প্রকাশ করা। শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে অবস্থা সামনে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে বলতে পারব না। তেল-গ্যাস কত দামে বেচব এর চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে কিনতে পারব কী না।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও প্রায় প্রতিটি বক্তব্যেই সঙ্কট কতটা গভীর সেটি ব্যাখ্যা করে জনগণকে সচেতন হতে বলেছেন। এতে জনগণ সচেতন হয়েছে ঠিকই কিন্তু তাদের অজানা আশঙ্কা প্রকাশ করতেও দেখা গেছে।
এক পর্যায়ে সরকারকে জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ডবৃদ্ধি করতে হয়। সব ধরনের জ্বালানি তেলে প্রায় ৫০ শতাংশ দাম বাড়ায় সরকার। এর ফলে জনগণ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করে।
সরকার বলছিল, দাম এভাবে বাড়ানো ছাড়া উপায় ছিল না। যদিও অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদের দাবি, দাম না বাড়িয়ে সরকারের কাছে বিকল্প ছিল। কিন্তু সরকার সেই বিকল্প ব্যবহার না করে দাম বাড়ানোকেই সমাধান হিসেবে বেছে নিয়েছে, যা দুঃখজনক।
চলতি বছরে দুই দফা বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দামও। সর্বশেষ নভেম্বরে সরকার পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। এর ফলে বিতরণ কোম্পানিও গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) আবেদন করেছে। আগামী জানুয়ারিতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এছাড়া বছরব্যাপী আলোচনায় ছিল রাশিয়ার সস্তার তেল কেনার বিষয়টি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশটি তুলনামূলক সস্তায় অপরিশোধিত তেল বিক্রি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে। চীন-ভারতের মতো অনেক দেশই মার্কিন আপত্তি সত্তে¡ও রাশিয়ার সস্তার তেল কিনেছে।
রাশিয়া তার সস্তার তেল বাংলাদেশেও বিক্রি করার প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশ সেই প্রস্তাব বিবেচনাও করে। রাশিয়ার তেলের নমুনাও বাংলাদেশে আনা হয়। কিন্তু পরিশোধন করার মতো প্রযুক্তি নেই বলে সেই তেল কেনা সম্ভব হয়নি শেষ পর্যন্ত।