বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক সেবার মান বাড়াতে হবে

12

 

আজ হতে একযুগ পূর্বে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা যে পর্যায়ে ছিল তার চেয়ে বর্তমানে বিদ্যুতের সার্বিক অবস্থার উত্তরণ ঘটেছে বহুগুণ। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১২ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর জুলধায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইউনিট-২, হবিগঞ্জের বিবিয়ানা-৩, ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট ১০৪ মেগাওয়ার্ট পাওয়ার প্লান্ট, বাগেরহাটে মধুমতি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সিলেটের ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল কেন্দ্রে উত্তরণ জনমনে আশার সঞ্চার ঘটেছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক মানদন্ড মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্বীকৃতি পায় ২০২১ সালে। শিল্প বাণিজ্যে নতুন বিপ্লব আনয়নে সরকার সার্বিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সাধিত হচ্ছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। একদিকে পদ্মাসেতু নির্মাণ, অন্যদিকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল-লাইন সম্প্রসারণ, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ এবং নতুন নতুন অর্থনৈতিক জোন স্থাপনসহ বহুমুখি উন্নয়ন হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাস সেক্টরে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন খুবই প্রয়োজন। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন। তাই ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশের বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, পূর্বের বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহের মধ্যে নতুন ইউনিট স্থাপন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে উন্নতকরণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যার ফলশ্রুতিতে বিগত ১২ সেপ্টেম্বর দেশের বিদ্যুৎ সেক্টর হতে জাতীয় গ্রেটে ৭৭৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযুক্ত হতে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের পথে দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছেন। দেশের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। এদের দিন দিন বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। শিল্পায়ন বৃদ্ধি, আবাসিক ও অনাবাসিক বিদ্যুৎ সংযোগ বৃদ্ধির কারণে দেশ বিদ্যুৎ সেক্টরে এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বলতে চান না সাধারণ মানুষ। একথা সত্য যে, গ্রাহক সংখ্যা এবং সংযোগ বাড়লেও বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে দেশের অধিকাংশ মানুষ।
এরপরও বলতে হয় দেশে প্রকট বিদ্যুৎ সংকট নেই। কিন্তু পিডিবি এবং প্রাইভেট সেক্টর হতে যথাযথ সেবা পাচ্ছে না গ্রাহকরা। এর জন্য বিদ্যুৎ সেক্টরের লোকবলের সীমাবদ্ধতা এবং সেবাদানকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়সারা কর্মকাÐই দায়ী। সরকার ও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টদের মনে রাখা দরকার বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে দেশ এখনো লোডশেডিং মুক্ত হতে পারেনি। দেশের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সুবিধা শতভাগ করার জন্য আমাদের আরো অনেকদূর হাঁটতে হবে। বাস্তবায়নাধিন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো চালু হলে দেশে বিদ্যুৎ সমস্যা তেমন থাকবে না। সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নেটওয়ার্ক নিরবচ্ছিন্ন করার কোন বিকল্প নেই। আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ হয়তো ৯৯.৫ শতাংশ পেয়েছি কিন্তু ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করতে পারছি না।
দেশের অফিস আদালত শিল্পকারখানা, বাসাবাড়ি সব ক্ষেত্রে এখনো আমাদের বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে আইপিএস এবং জেনেরেটরের মুখাপেক্ষি হতে হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি এবং প্রাইভেট সেক্টরে আরো অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা আছে। দেশে বিদ্যুৎ সেক্টরে যে সকল প্রকল্পের কাজ চলছে সেগুলো বাস্তবায়িত হবার পরও দেশের বিদ্যুৎ সংকট শতভাগ কেটে উঠবে না। কারণ দেশ যত উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে ততবেশি বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। দেশে স্বাভাবিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে লোডশেডিং মুক্ত, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা প্রয়োজন। এর জন্য বিদ্যুৎ সেক্টরে আরো সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করে দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ। আমরা সব সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আশাবাদি এবং তাঁর উন্নয়ন পরিকল্পনার উপর আস্থাশীল। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে বিদ্যুৎ সেক্টরের সবধরনের সমস্যা দূর করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক উন্নয়নের মহাসড়ক তৈরি করে দিতে সক্ষম হবেন এমন মতামত বিজ্ঞজনদের।