বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়বে নিত্যপণ্যে

16

ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বাড়লে জনজীবনে এর প্রভাব পড়বে। এর কারণে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। বাড়বে চাল-ডালসহ অন্যান্য পণ্যের দামও। আর এসব কারণে আবারও সব পেশার মানুষের বেতন বাড়াতে হবে। সার্বিক বিবেচনায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি না করে দেশীয় জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে খরচ কমবে।
গতকাল রোববার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে (ডিআরইউ) কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিশিষ্টজনেরা।
ক্যাবের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি গবেষণা কমিশনের সভাপতি ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, জ্বালানির কথা বলে বার বার বিদ্যুৎতের মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক। মনে রাখতে হবে, সরকার কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান না। তারা সব সময় লাভের আশা করলে চলবে না। বিদ্যুৎতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর পড়ে, শিল্পের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়ে জনগণ।
‘আমাদের রাজধানীর যেসব নাগরিক গুলশান-বনানীতে বসবাস করেন, তারা তো নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎতের মধ্যে থাকেন। কিন্তু দেশের তৃণমূল অঞ্চলে যে গ্রাহক থাকেন, তিনি রাতে বিদ্যুৎ পান, তো দিনে পান না, দিনে পান, তো রাতে না। তাহলে কেনো গুলশানের মতোই তাকে বিদ্যুৎতের দাম দিতে হবে? এটা চরম ধরনের বৈষম্য, এ ধরনের বৈষম্য হলে আমাদের প্রতিবাদ থাকবে।’
জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, গত ২০০৯-২০১০ সালে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৯০ শতাংশ জ্বালানি হতো গ্যাস। এখন তা ৬০ শতাংশে এসেছে। এর বিপরীতে এলএনজি আমদানি হচ্ছে, তেল আমদানি, কয়লা আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এসব জ্বালানির দাম বেশি হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে বিদ্যুৎতের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমদানিসাশ্রয় জ্বালানির যোগান না হলে বিদ্যুতের খরচ বেড়ে যাবে, এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। খবর বাংলানিউজের
ক্যাবের অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটির আহব্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, আমাদের দেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ার প্রধান কারণ জ্বালানি। আমরা যখন সমুদ্র লাভ করলাম, এটা গর্বের বিষয়। কিন্তু জয় করার পর আমাদের আর সমুদ্র নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। অথচ সমুদ্র গ্যাসে ভরপুর। আমাদের প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্র সমুদ্র থেকে গ্যাস তুলছে। এটা নিয়ে গবেষণা করছে। মনে রাখতে হবে যারাই আগে গ্যাস তুলবে, তারা সেখান থেকে বেশি গ্যাস পাবে।
তিনি বলেন, যখন ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়, তখন আমরা এর ‘সাইড ইফেক্ট’ নিয়ে ভাবি না। এর ফলে চাল-ডালের দাম বেড়ে যাবে, কল-কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। তখন অন্যরা বেতন বৃদ্ধির কথা বলবে, বেতন বাড়াতে হবে। তার মানে একটা জায়গাতে সরকার লাভের আশা করতে যেয়ে সামগ্রিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তাই সব বিষয় বিবেচনা করেই এটা নিয়ে ভাবতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ক্যাবের সভাপতি বলেন, এ পর্যন্ত পাইকারিতে সাত বার, খুচরায় নয় বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। বার বার বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে কিভাবে সমন্বয় করা যায়, সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন-সুব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। তা নাহলে কখনই বিদ্যুতের দাম কমবে না। এছাড়া সব সময়, সবস্থানে লাভের আশা সরকারের করাটা ঠিক হবে না। মনে রাখতে হবে, সরকার কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির, ক্যাবের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি গবেষণা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক বদরুল ইমাম প্রমুখ।