বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে চরম দুর্ভোগে পড়বে সাধারণ মানুষ

13

সরকারের ভাষায় বিদ্যুতের প্রবাহ নিশ্চিতকরণ ও ভর্তুকি কমাতে আবারও বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। করোনার পর জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির পর সম্প্রতি গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বোতলজাত এলপিজি গ্যাসের দামও বেড়েছে আরেক দফায়। এভাবে দফায় দফায় পাইকারি ও খুচরা মূল্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিল্পোদ্যোক্তারা। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। এতে দেশীয় উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা হারালে দেশের অর্থনীতির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ পরিপ্রেক্ষিতে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বেন। এছাড়া দেশীয় উৎপাদিত সকল প্রকার পন্যের দামও আনেক দফায় বেড়ে যাবে। এমনিতে করোনা মহামারির রেশ না কাটতে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ পুরো বিশ্ব ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যুদ্ধ এবং অবরোধের কারণে জ্বালানী ও ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের মানুষ চরম আর্থিক কষ্টে দিনযাপন করছে। এরমধ্যে আবারও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ে বাজারভিত্তিক কাঠামোর কথা বলছে সরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারভিত্তিক কাঠামোর বড় শর্ত হচ্ছে ব্যয়ের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন। বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে আয় বাড়ানোর উদ্যোগের পাশাপাশি সরকার ব্যয় সাশ্রয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে দুর্নীতিবাজরা আরও উৎসাহিত হতে পারে। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এরমধ্যে নতুন করে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির ওপর আরও প্রভাব ফেলবে। আগেই বলা হয়েছে, করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে মানুষ, বিশেষ করে দেশের শিল্প খাত। এ অবস্থায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে অর্থনৈতিক সংকট এখন প্রকট। ডলারের দাম এখনও তুঙ্গে। অবরোধের কবলে জাহাজে পণ্যপরিবহনের সংকট পুরোপুরি কাটেনি। সামনে রমজান, এখন থেকে অসাধু সিন্ডেকেট ব্যসায়ীরা ঘাপটি মেরে আছে। সব মিলিয়ে দিনের পর দিন বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরেই চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি অব্যাহত রাখা উচিত বলে মনে করি আমরা। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, চলমান বৈশ্বিক সংকটময় মুহূর্তে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। এতে পোশাকশিল্পসহ শিল্প খাতের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে ব্যাহত হবে বৈদেশিক মুদ্রার আয়। সরকার স্বল্প ও নি¤œ আয়ের মানুষের সুরক্ষায় পদক্ষেপ না নিলে বাধ্য হয়ে মানুষকে ভোগ কমাতে হবে। এর ফলে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ যদি অপুষ্টিতে ভোগে, তাহলে যে মানের জনশক্তি তৈরি হবে তা দিয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ কতটা সফলভাবে মোকাবিলা করা যাবে-এ বিষয়েও সরকারকে ভাবতে হবে। এছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য স্মার্ট জনশক্তি কিভাবে তৈরি হবে!
বলা হয়েছে, এখন থেকে প্রতি মাসে বিদ্যুতের খুচরা দাম নিয়মিত সমন্বয় করা হবে। আমরা মনে করি, বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে এ খাতের সিস্টেম লস দূর করার বিষয়ে মনোনিবেশ করা উচিত সরকারের। সিস্টেম লসের নামে যে অনিয়মের দানব বিদ্যুৎ খাতে সৃষ্টি হয়েছে, তাকেই নির্মূল করা জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, ঘনঘন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে আক্ষরিক অর্থেই সাধারণ মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে আমাদের। একদিকে করোনার ক্ষত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহণ ভাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদিতে নাকাল হয়ে আছে মানুষের জীবন। এ সময় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম অপরিবর্তিত রাখা উচিত ছিল। আমরা মনে করি বর্তমান সরকার জনবান্ধব ও মানবিক। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সরকারের উচিৎ জনগণের দুঃখ-কষ্টগুলো অনুভব করা। আমরা আশা করি, সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ থেকে সরে এসে জনগণের দুঃখ লাঘবে মনোযোগ দিবে।