বিদ্যুতের ভয়াবহ বিপর্যয় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি রাখে

6

জাতীয় গ্রিডে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় মঙ্গলবার দেশের অধিকাংশ জেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল। অন্ধকারে ডুবে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমল্লিা, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রায় সব জেলা। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে চরম জনদুর্ভোগ দেখা দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব ধরনের জরুরি সেবা ব্যাহত হয়েছে; চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা সেবা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎপাদন, কৃষিতে সেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। একদিকে প্রচণ্ড গরম অপরদিকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রমও ব্যাহত হয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে দেশের সব অফিস-আদালত, বাসাবাড়ি-সর্বত্র পানি সংকট ছিল প্রকট। সবচেয়ে দুর্ভোগের শিকার হন বহুতল ভবনের বাসিন্দারা। প্রায় অচল হয়ে পড়ে টেলিযোগাযোগ সেবাও।
সূত্র জানায়, জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে প্রধান শিল্প ও বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সব ধরনের শিল্পকারখানার উৎপাদন টানা প্রায় ছয় ঘণ্টা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শুরুতে বড় কারখানাগুলো নিজস্ব জেনারেটরে কিছুক্ষণ চালানো হলেও পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দেশে বড় ধরনের কোনো অঘটন বা নাশকতা না ঘটলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্বস্তি নেমে আসে। দুপুর ২টার দিকে জাতীয় গ্রিড ট্রিপ হওয়ায় এ বিপর্যয় ঘটে। এ বিপর্যয়ের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির তদন্তে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের প্রকৃত কারণ হয়তো উদঘাটিত হবে, তবে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের যে দুর্ভোগ ও ক্ষতি হলো, তার কী হবে? জেনারেটর চালু রাখার জন্য সন্ধ্যার পর ডিজেল ক্রয় করতে পাম্পগুলোয় লম্বা লাইন দেখা গেছে। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চড়া মূল্যে মোমবাতি বিক্রি করেছে। অনেক জায়গায় কেরোসিন ও ডিজেলের দামও বাড়তি নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মানুষ বাধ্য হয়ে চড়া মূল্যেই তা ক্রয় করেছে।
দেশে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থায় সমস্যা ও ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির বিষয়টি বহুল আলোচিত। লক্ষ করা যাচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে একের পর এক রেকর্ড গড়া হলেও সঞ্চালনের দুর্বলতা কাটানো সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, নির্মীয়মান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের জন্য যে লাইন প্রয়োজন, তা নির্ধারিত সময়েই শেষ করা সম্ভব হবে। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য যে সঞ্চালন লাইনটি ব্যবহার হবে, তার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে দেশে আরও বেশকিছু বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণাধীন রয়েছে; সেগুলোর নির্মাণকাজে নানারকম জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সঞ্চালন লাইন শক্তিশালী করতে নেওয়া প্রকল্পগুলোর সার্র্বিক অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়া দুঃখজনক। বস্তুত বিদ্যুৎ খাতের সার্র্বিক উন্নয়নে উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ অবকাঠামো নির্মাণে সমান গুরুত্ব দেওয়া জরুরি হলেও অতীতে তা লক্ষ করা যায়নি। সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণের ধীরগতির অবসানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে দেশবাসী বিদ্যুৎ খাতের প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিত হবে।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় সব তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীদের ছুটি দেওয়া হয়। বস্তুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাস ছাড়া শিল্পকারখানা পুরোপুরি সচল রাখা সম্ভব নয়। এ ধরনের সংকট এড়াতে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকলে হাসপাতালের জরুরি সেবা যেমন বিঘিœত হবে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যেরও অপূরণীয় ক্ষতি হবে। রাতারাতি দেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ অবকাঠামো সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। কাজেই এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের পূর্বপ্রস্তুতি থাকা দরকার। আমরা আশা করি, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ চিহ্নিত করতে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করবে।