বিদেশ ভ্রমণে কঠোর নিষেধাজ্ঞা চীনের

13

পূর্বদেশ ডেস্ক

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় ক‚ন্য কোভিড-নীতি বাস্তবায়নে নাগরিকদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে একটি ‘কার্যকর’ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীন, এতে ‘অপ্রয়োজনীয় বা অনাবশ্যক’ কারণে বিদেশ যেতে কঠোরভাবে বারণ করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে চীনের জাতীয় অভিবাসন প্রশাসন বলেছে, পাসপোর্টের মতো ভ্রমণ নথির বিষয়ে তারা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াকে কঠোর করবে। বিদেশ ভ্রমণে ইচ্ছুকদের কঠোরভাবে সীমিত করবে।
সিএনএন জানিয়েছে, চীনের এই পদক্ষেপের পেছনে যুক্তি হলো- দেশ ছাড়ার সময় এবং দেশে ফের প্রবেশের সময় ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো।
এ কারণে কেবল ‘প্রয়োজনীয়’ উদ্দেশ্য যেমন- পুনরায় কাজ শুরু, পড়ালেখা, ব্যবসা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পাবেন নাগরিকরা।
ঘোষণা অনুসারে, যারা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং দুর্যোগে ত্রাণ সংস্থানের জন্য বিদেশ যেতে চান তাদের আবেদনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
নতুন এই বিধিনিষেধ কীভাবে প্রয়োগ করা হতে পারে বা বৈধ কাগজপত্র থাকা নাগরিকদের ভ্রমণ কীভাবে আটকানো হবে তা জানাননি কর্মকর্তারা।
সিএনএন লিখেছে, ক‚ন্য কোভিড-নীতি বাস্তবায়নে বিদেশ ভ্রমণের এই নিষেধাজ্ঞা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ, যা দেশের জনগণের উপর আরও চাপ তৈরি করছে। কারণ, গত দুই বছরে মানুষ গণ-পরীক্ষা ও বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনসহ ‘ড্রাকোনিয়ান স্টাইলে’ কোভিড নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সহ্য করেছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় টুইটারের মতো চীনের প্লাটফর্ম উইবোতে একজন মন্তব্য করেছেন ‘প্রয়োজন না হলে বাইরে যাবেন না, প্রয়োজন না হলে দেশ ছাড়বেন না, প্রয়োজন না হলে সন্তান জন্ম দেবেন না’।
অন্যরা মনে করছেন, বেইজিংয়ে ফের কোভিডের সংক্রমণ বাড়ায় সরকারের নতুন লকডাউনের ভয়ে লোকজন দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, যে কারণে কর্তৃপক্ষ ভ্রমণের ক্ষেত্রে ওপর সাঁড়াশি অভিযান চালাতে যাচ্ছে।
সাংহাইয়ের মতো লকডাউনে থাকা শহরগুলোতে বিশৃঙ্খলা এবং কর্মহীনতার কারণে এই ভয়গুলো আরও বেড়েছে।
উইবোতে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘যারা চীন থেকে পালাতে চান তারা এ কারণে ভীত যে, সরকারের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার মুখে (মহামারির মধ্যে) জনগণের অধিকার এবং মর্যাদা কিছুই নয়’।
আরেকজন লিখেছেন,‘আমরা কি কিং রাজবংশের জাতীয় নিঃসঙ্গতার নীতিতে ফিরে যাচ্ছি?’
এই কিং রাজবংশ ছিল ১৯ শতকের শেষের দিকে এবং ২০ শতকের গোড়ার দিকে চীনের শেষ রাজবংশ, সেসময় বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে চীন আলাদা হয়ে পড়েছিল।
২০০০ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত সাধারণ চীনাদের বিদেশ ভ্রমণ ব্যাপকভাবে সীমিত ছিল। কিন্তু দেশের জাতীয় আয় বেড়ে যাওয়ায় এবং সরকার নিয়ম শিথিল করায় পরে এটি বৃদ্ধি পায়। দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ অনুসারে চীনা জনগণ ২০১৯ সালে ৬৭ কোটি বার বিদেশ ভ্রমণ করেছে, যা মহামারীর আগে ছিল সর্বশেষ স্বাভাবিক ভ্রমণ বছর।
কিন্তু মহামারি শুরুর পর ২০২১ সালে সেই সংখ্যা কমে গেছে। সেসময় আসা-যাওয়া মিলিয়ে মাত্র ৭ কোটি ৩০ লাখ বার বিদেশ ভ্রমণ হয়েছে। এমনকি বৃহস্পতিবারের ওই ঘোষণার আগেও চীনের ভেতরে বা বাইরে ভ্রমণ ব্যাপক কঠিন ছিল। বাইরের থেকে আসাদের জন্য সীমান্ত এখনও বন্ধ। কেবল বাইরে থেকে চীনের জনগণ এবং স্পেশাল ভিসা বা অভিবাসন অনুমতি নিয়ে আসাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজের
ফ্লাইট সীমিত ও ব্যয়বহুল করা হয়েছে…এবং যারা আসতে চান সচরাচর তাদের ২১ দিনের কঠোর কোয়ারেন্টিনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। চীন ভ্রমণ নথির সংখ্যা কমিয়ে নাটকীয়ভাবে জারি করা ভ্রমণকে আরও নিরুৎসাহিত করেছে।