বিদেশগামীদের জন্য বাধ্যতামূলক হচ্ছে বীমা

42

বাংলাদেশ থেকে যে কর্মীরা বিদেশে কাজ করতে যান তাদের জন্য বাধ্যতামূলক বীমা করার কার্যক্রম শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা কর্পোরেশন। বর্তমানে পৃথিবীর নানা দেশে বাংলাদেশের যে কর্মীরা কর্মক্ষেত্রে নানা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন তারা অনেকেই কোনো রকম বীমা সুবিধা পান না। তাদের জন্যই প্রবাসী কর্মী বীমা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একটি চুক্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে জীবন বীমা কর্পোরেশন। জীবন বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ড. শেলীনা আফরোজা জানান, সরকারের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী বিদেশে কাজ করতে যাওয়া যে কোনো শ্রমিককে বীমার আওতায় আনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিদেশ কাজ করতে যাওয়ার আগে একজন শ্রমিককে ওয়েজ আর্নার কল্যাণ বোর্ডের কাছ থেকে যে অনুমতিপত্র নিতে হয়, সেই অনুমতিপত্র নেয়ার সময় কর্মীকে বীমা করতে হবে। বীমা না করলে সে বিদেশ যেতে পারবে না।
তিনি জানান, এককালীন নির্দিষ্ট সংখ্যক টাকা দিয়ে বিদেশগামী শ্রমিককে বীমা করতে হবে, যা দুই বছরের জন্য কার্যকর থাকবে। ৯৯০ টাকার এককালীন প্রিমিয়ামের ৫০০ টাকা দেয়া হবে ওয়েজ আর্নার কল্যাণ বোর্ডের পক্ষ থেকে এবং বাকি টাকা দিতে হবে যিনি বিদেশে যেতে চান তাকে। এরপর ওয়েজ আর্নার কল্যাণ বোর্ড ঐ বিদেশ যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকের সকল তথ্য সফটওয়্যারের মাধ্যমে জীবন বীমা কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয় করে দেবে। এরপর জীবন বীমা কর্পোরেশন ঐ অভিবাসী শ্রমিকের জন্য একটি সার্টিফিকেট ইস্যু করবে, যার ফলে তিনি বীমা গ্রহীতা হবেন। এর ফলে এক ক্লিকেই একজন বিদেশগামী শ্রমিক বীমা করতে সক্ষম হবেন।
এছাড়া বিদেশগামী শ্রমিকরা যদি আরো বড় অঙ্কের বীমা করতে চান তাহলে তারও সুযোগ আছে বলে জানান জীবন বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান।
এই বীমা থাকলে দুই বছরের মধ্যে যদি প্রবাসী শ্রমিক স্বাভাবিকভাবে বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে মারা যান, সম্পূর্ণ পঙ্গুত্ব বরণ করেন বা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তিনি দুই লাখ টাকার সম্পূর্ণ প্রিমিয়াম পাবেন। আর বর্তমানে যেসব বাংলাদেশী শ্রমিক বিদেশে রয়েছেন, তারাও চাইলে তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে বা জীবন বীমা কর্পোরেশনের সাথে যোগাযোগ করে নিজেদের বীমা করাতে পারবেন বলে জানান শেলীনা আফরোজা।
বীমার ভার বহন করা উচিত নিয়োগকারী সংস্থার :
বিদেশগামী শ্রমিকদের বীমা করানো বাধ্যতামূলক করার সরকারি সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেও এই বীমার নিয়মনীতি ও শর্ত পরিবর্তন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম। তিনি মনে করেন শ্রমিকের কাছ থেকে বীমার প্রিমিয়াম না নিয়ে তা শ্রমিকদের নিয়োগকারী সংস্থার কাছ থেকে নেয়া উচিত। যেহেতু ওয়েজ আর্নার বোর্ডকে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক টাকা দিয়েই বিদেশ যাওয়ার অনুমোদন পায় শ্রমিক, তাই তাদের এবং নিয়োগকারী সংস্থার দায়িত্ব বীমার ভার বহন করা। খবর বিবিসি বাংলার
সুমাইয়া ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিকদের ক্ষেত্রে দেখা যায় অধিকাংশই বীমার প্রক্রিয়া, বীমার টাকা পাওয়ার নিয়ম এবং বীমার নীতি সম্পর্কে জানেন না। তাই অনেকসময়ই দেখা যায় শ্রমিকের প্রাপ্য টাকা তার কাছ পর্যন্ত পৌঁছায় না। তবে কিছু কিছু দেশের আইন অনুযায়ী, ঐ দেশের কোনো সংস্থা অভিবাসী শ্রমিকের বীমা করাতে পারেন না। সরকারি পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন সুমাইয়া ইসলাম। পাশাপাশি যেসব কর্মী বিদেশ গিয়ে প্রতারণার শিকার হয় এবং ঠিকমতো বেতন পান না, যেকারণে নিয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দায়বদ্ধতার আওতায় আনার জন্য বীমার টাকা তাদের দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।