বিদায় : ২০১৮ স্বাগত : ২০১৯

53

ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে আবারও চলে এলো আরও একটি নতুন বছর। গতকাল সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিটে সারাবিশ্ব বিদায় জানাল ২০১৮ সালকে। আর বরণ করে নিয়েছে নতুন বছর ২০১৯ সালকে। ২০১৮ সাল ছিল বাংলাদেশের জন্য সুখ ও সমৃদ্ধির বছর। সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে হ্যাটট্রিক বিজয় লাভ করেছে ক্ষমতাসীন মহজোট।
মহাজোট ২৮৮টি আসন লাভ করে পায় নিরঙ্কুশ বিজয়। এছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র সাতটি আসন। এছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণ, জঙ্গি দমন, ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখাসহ সুখ ও সমৃদ্ধির বছর ছিল ২০১৮ সাল।
বাংলাদেশে ২০১৮ সাল ছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্জনের বছর। এই বছর অর্থনীতি, রাজনীতি, কৃষি, তথ্য প্রযুক্তিসহ সব সেক্টরেই আশাতীত সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
জগৎজুড়ে সব দেশে ১ জানুয়ারি উদযাপনের পিছনে মজার-মজার গল্প আছে। কেন হঠাৎ এবং কিভাবে ১ জানুয়ারিটাই ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন হলো, বড় বড় হিসাব কষেও পন্ডিতরা এখনো তা নিয়ে একমত হতে পারেননি। নামে ইংরেজি নববর্ষ হলে কি হবে, মূলত ১ জানুয়ারির ‘জন্ম’ কিন্তু ব্রিটিশ বা মার্কিন মুলুকে নয়, রোম সাম্রাজ্যে।
রোমের লোককথা মতে, রোমে তখন সভ্যতার ছোঁয়া তেমন লাগেনি বললেই চলে। পাথর কেটে মানুষ ঘরবাড়ি বানাতো। খাবার দাবার চলতো শিকার করে- এভাবে বেশ চলছিল। হঠাৎ মোগাস নামে এক মাতব্বর গোছের ব্যক্তি লোকজন ডেকে বললেন, সূর্য উঠে অস্ত যায়, আবার উঠে। এর মাঝের সময়টুকুকে ধর একদিন। আর পাথর দিয়ে পাথরের গায়ে একটা করে দাগ কেটে দিন বানাও; ব্যস, দিন যায়, দাগ বাড়ে। মোগাসের দিন-মাসের কাহিনী বাড়তে থাকে, মূলত মোগাসের নাম থেকে মেঘাস অর্থাৎ জ্ঞানী শব্দটা এসেছে- সেটাও কিন্তু খ্রিস্টের জন্মের ৬০০ বছর পরে।
আরও পাঁচটা রোম-শিশুর মতোই একদা বাল্যকালে বিকালের আলোয় বাগানে বসে গৃহশিক্ষকের কাছে মেঘাসের গল্প শুনছিলেন সিজার। তিনি ইতিহাসে সম্রাট জুলিয়াস সিজার নামে পরিচিত। অস্ত্রে যতটা পাকা, অঙ্কে ততটাই কাঁচা এই রোমান সম্রাট শুধু রাজ্য জয়ই করেননি, তিনি ক্যালেন্ডারের পাতাতেও তার নাম লিখে রেখেছেন। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের জুলাই মাস এসেছে তার নামানুসারেই। তার তৈরি ক্যালেন্ডার অনেকদিন টিকে ছিল। কিন্তু আরও পরে এই ক্যালেন্ডার নিয়েও অনেক সমস্যা দেখা দেয়। তাই জুলিয়াস সিজারের ক্যালেন্ডারও সংশোধনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
অনেক পরে তার ক্যালেন্ডার আবার সংশোধন করেন অ্যালোসিয়াস লিলিয়াস নামীয় এক ডাক্তার। কিন্তু সেই ক্যালেন্ডার সবাইকে ব্যবহার করার কথা বলেন পোপ গ্রেগরি। তিনি ইতিহাসে ১৩ নম্বর পোপ গ্রেগরি হিসেবে পরিচিত। ফাদার গ্রেগরি ছিলেন ইতালির লোক, ধার্মিক ছিলেন কিন্তু সংস্কারবাদী ছিলেন না। যিশু ছাড়া তিনি আর একটি জিনিসই বুঝতেন। তা হলো নিসর্গ। কারণ তার ধারণা ছিল, এ অসীম-অনন্ত প্রকৃতি যিশুর মহত্ত’র দান। তাই তিনি ক্যালেন্ডারের সঙ্গে ধাতুচক্রের ছন্দটাকে মিলান তিনি।
একদিন প্রার্থনা সেরে বেরিয়ে গ্রেগরি অনুভব করেন, এতো বরফ- শীতল হাওয়াটা যেন একটু আঁচ পেয়েছে। গাছের শাখা প্রশাখায় খানিক সবুজের আভা লেগেছে। শীত ঘুম ভেঙে উঠে পাখিরা গান গাইছে, যেমন বসন্তে হয়। গ্রেগরি ভাবলেন, এটাই হতে পারে নতুন দিন। এভাবেই শুরু করা যায় নতুন আবহাওয়ার লীলাখেলা!
নিজের ঘরে ফিরে এসে সিজারের ক্যালেন্ডারকে রেখে গ্রেগরি বসলেন সপ্তাহ, পক্ষ আর মাসের হিসাব মিলাতে। একেবারে শীতের শেষ বা বসন্তের সূচনার জন্য অপেক্ষা করে লাভ নেই। শীত-বসন্তের এ পরিবর্তনের জন্য বরং কিছুটা সময় ধরে রাখা যাক। আজকের দিনটাই হোক বছরের শুরু। সিজারের ক্যালেন্ডার ধরলে এ আবিষ্কারের দিনটা নাকি দাঁড়ায় ১ জানুয়ারি। এখন যে ‘নিউ ইয়ারস ডে’ উৎসব হয়- তা ইংরেজদেরই কীর্তি। কারণ চতুর ইংরেজরা গ্রেগরির যুক্তিবাদী ক্যালেন্ডারটা মেনে নিয়ে ১ জানুয়ারিকে ইংরেজি নববর্ষে পরিণত করেছিল। তার নামেই এই ক্যালেন্ডারের নাম হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। গ্রেগরিয়ান ক্যালন্ডারে জানুয়ারি মাসকে প্রথমে আনা হয়। তারপর থেকেই অর্থাৎ ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকের কোনো একটা সময়ে মূলত ১ জানুয়ারিকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে পালনের রেওয়াজ শুরু হয়। এই হলো ইংরেজি নববর্ষ বা ক্যালেন্ডারের কথা।
এদিকে নববর্ষ উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। খোলা স্থানে নববর্ষ পালন ও কোন ধরনের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করেছে সিএমপি। ঘরোয়াভাবে করলেও অনুমতি নেয়ার কথা জানানো হয়। নগরীতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। একই সাথে টহলও জোরদার করা হয়।