বিজয় মেলায় ‘শ্বশুর বাড়ির পিঠা’

36

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিসেম্বর জুড়ে বিজয়ের গন্ধ, উৎসবমুখরতা, মেলা, স্মৃতিচারণ। চট্টগ্রাম সব কিছুতেই আগে। বিজয় মেলার ধারণাও চট্টগ্রাম থেকেই জন্ম নিয়েছিলো। বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) তৎকালীন চট্টগ্রাম প্রতিনিধি পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়ার উদ্যোগে সাবেক সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের মাটিতে শুরু হয় বিজয় মেলা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও বিকাশে এ মেলা চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশে পরিণত হয়েছে। বিজয়ের মাসে এ আয়োজনের উল্লেখযোগ্য দিক হলো হরেক রকম পণ্য ও খাবারের দোকান, দোলনার চিরায়ত দোলা, আড্ডা, ঘোরাঘুরি, স্মৃতিচারণে মনোনিবেশ।
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় চট্টগ্রামের বিজয় মেলা প্রাঙ্গণ ছিলো জমজমাট। ছুটির দিনে বেড়াতে যাওয়া লোকজন মেলায় গিয়ে জমেছে আড্ডা, সাক্ষাত ও ঘোরাঘুরিতে। নজরকাড়া একটি খাবারের দোকানে মেলায় আসা লোকজনের ভীড় জমে বেশি। হরেক রকমের বানানো পিঠার এ দোকানের নাম ‘শ্বশুর বাড়ির পিঠা’। শ্বশুরবাড়ি মানে জামাই আদর, সকলের এক প্রিয় জায়গা। অনেক আয়োজনের সাথে থাকে গ্রাম বাংলার নানা ধরনের মজাদার পিঠা। এ দোকানেও পাওয়া গেলো গ্রামীণ ঐতিহ্যের পিঠা পুলি, পাক্কন, পাটিসাপটা, পুয়া, খাজা, রসবরাসহ নানা পিঠার পসরা। খাওয়া-দাওয়া যেমনই হোক এ দোকানের পাশে ভীড় ছিলো কৌত‚হল ছিলো সবার মধ্যে। কেউ কেউ পিঠা খেয়ে গ্রামের শ্বশুরবাড়ির পিঠার স্বাদ নেয়।
ঐ দোকানের বিক্রেতা সুমনের বাড়ি চন্দনাইশ। সে জানায়, ‘শ্বশুর বাড়ির পিঠা’ দোকানটির মালিক দুইজন। একজন শিক্ষার্থী এবং অন্যজন ব্যবসায়ী। তাদের ধারণা মেলায় এ ধরণের গ্রামীণ পিঠা ভালোই চলবে। দোকানে সুমনসহ আরো ৪ জন কর্মচারী রয়েছে। বেচা-বিক্রি ভালো হওয়ায় তারা খুশি। পিঠার দামও খুব একটা বেশি নয়। ক্রেতারা পিঠার নাম দেখেই খুশি। পিঠার স্বাদ যেমনই হোক গ্রামীণ আমেজ পেয়ে তারা তৃপ্ত।
সাঈদা নামের এক নারী মেলায় এসেছেন তার ব্যাংকার স্বামীর সাথে। তিনি জানান, সাংসারিক ঝামেলায় ঘর ছেড়ে খুব একটা বের হতে পারেন না। বিজয় মেলায় এসে গ্রামের বাড়ির পিঠার স্বাদ পেয়ে তিনি আনন্দিত।
তিনি জানান, অনেকদিন হলো গ্রামে যেতে পারছিনা। ওকে (স্বামীকে) নিয়ে এ দোকানে এলাম। এ দোকানের পিঠা খাচ্ছিল এমনভাবে, দেখে মনে হচ্ছিল শ্বশুড় বাড়ির পিঠা খাচ্ছে। এতো খুব মজার ব্যাপার। তাছাড়া আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি আমাদের জন্য এ মেলাই আমাদের একাত্তর, আমাদের বিজয় এবং আমাদের গৌরব।
এভাবেই এই বিজয় মেলা গত তিন দশক ধরে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, গ্রামীণ ঐতিহ্য ও চেতনার বিকাশ ঘটাচ্ছে বলে মনে করেন সাঈদার মতো অনেকেই।