বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে ‘ন্যায়কুঞ্জ’

9

পূর্বদেশ ডেস্ক

দেশের সর্বোচ্চ আদালতে দূর-দূরান্ত থেকে যারা বিচারের জন্য আসেন, দিনভর তাদের অপেক্ষা করতে হয় আদালত চত্বরে, গাছতলা কিংবা ফুটপাতে। রোদ পুড়ে বা বৃষ্টিতে ভিজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘদিনের সেই ভোগান্তি এবার লাঘব হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত এসব বিচারপ্রার্থীদের জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ন্যায়কুঞ্জ’, যাতে থাকছে বসার জায়গা, টয়লেট, সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং মায়েদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার।
কেবল সুপ্রিম কোর্টই নয়, সারা দেশের জেলা ও দায়রা জজ আদালতেও একই ভোগান্তি কমাতে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। গত জুনে বিষয়টি নিয়ে হাই কোর্ট থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়। খবর বিডিনিউজ।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিশ্রামাগার নির্মাণের কাজ শেষ। এতদিন ধরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিশ্রামাগার না থাকায় যে দুর্দশা ও সমস্যার পড়তে হয়েছে, সেই কথায় বলছিলেন কক্সবাজার সদরের মো. ইলিয়াস মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাক আহমেদ। বিদ্যালয়ের একটি মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কিছুদিন পর পর তাকে হাই কোর্টে আসতে হয়।
মোস্তাক বলেন, আদালত ভবনের ভেতরে বসার কোনো জায়গা নেই, বাইরে অন্তত বসার একটু জায়গা হলে ভালো হত, কিন্তু সেই ব্যবস্থাটিও সেখানে নেই। এখানে মানুষ নিরূপায় হয়েই আসেন, কিন্তু তারা এখানে এসে অনেক কষ্ট করেন।
গত সপ্তাহে ভর দুপুরে আদালত চত্বরের গাছের নিচে বসে ওই শিক্ষক বলছিলেন, এখন যদি বৃষ্টি হয় কী হবে? বারান্দায় দাঁড়াতে দেওয়া হয় না। মানুষগুলো যাবে কোথায়, তাকে তো বৃষ্টিতেই ভিজতে হবে।
গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিচারপ্রার্থীদের এসব ভোগান্তির কথা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলে আসছিলেন প্রধান বিচারপতি। পরে তার নির্দেশনায় সুপ্রিম কের্টের সড়ক ভবন চত্বরে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নামে বিশ্রামাগারে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর নূর দুলাল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট, অধস্তন আদালত হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের জন্য। তাদের জন্য একটি শেডের অপ্রতুলতা ছিল, সেটা করা হয়েছে, এজন্য প্রধান বিচারপতিকে সাধুবাদ জানাই।
সুপ্রিম কোর্টের ‘ন্যায়কুঞ্জের’ মতো দেশের প্রত্যক জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিশ্রামাগারের নির্মাণে গত জুনে যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল সেখানেও বিচারপ্রার্থীদের নানা সমস্যার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, দেশের প্রায় সকল অধস্তন আদালতের এজলাসকক্ষ/বিচারকক্ষের আসন সীমিত হওয়ায় আইনজীবী ব্যতীত বিচারপ্রার্থীদের বসার তেমন কোনো সুযোগ হয় না। ফলে বিচার কার্যক্রম শুরুর আগে ও পরে বিচারপ্রার্থীদের আদালতের বারান্দায় বা যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হন নারী, অসুস্থ ব্যক্তি এবং শিশুদের মায়েরা। এই সমস্যা সমধানে প্রত্যেক জেলায় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বিচারপ্রার্থী-বিশ্রামাগার স্থাপন করা আবশ্যক।
চিঠিতে প্রধান বিচারপতির নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নির্মাণের বিষয়ে বলা হয়, প্রতিটি জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে কমপক্ষে ১০০ জনের এবং চৌকি আদালতে ৪০ থেকে ৫০ জনের বসার উপযোগী বিশ্রামাগার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা প্রধান বিচারপতি অনুধাবন করেছেন।
কী থাকছে ‘ন্যায়কুঞ্জে’ : ১. নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা ইউনিট। ২. ব্রেস্টফিডিংয়ের জন্য মায়েদের আলাদা কক্ষ। ৩. প্রত্যেক ইউনিটে দুটি টয়লেট। ৪. সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও ৫. একটি ছোট স্টেশনারি দোকান।
‘ন্যায়কুঞ্জ’ নির্মাণে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, আইন সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সচিব, সকল জেলা ও দায়রা জজ, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছিল।