বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতের পরও তাপমাত্রা বৃদ্ধির আভাস

124

মৌসুমী বায়ুর প্রভাবজনিত কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হলেও আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দিন ও রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর বর্ধিত পাঁচদিনের আবহাওয়ার অবস্থায় মানে আগামী সপ্তাহে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এখন আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি ঠিক পূর্বাভাস কিংবা অতীত রেকর্ড মেনে চলছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুছ পূর্বদেশকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন আবহাওয়ার ঋতুভিত্তিক স্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যে কারণে মৌসুমী বায়ু দেশের সব অঞ্চলে বিস্তার লাভ করলেও সেভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। আষাঢ়েও তাই আমরা একদিকে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত লক্ষ্য করছি, অন্যদিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতাও প্রতীয়মান হচ্ছে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি বা আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরম অনুভূত হচ্ছে বেশি। কোথাও কোথাও তা স্বস্তির মাত্রাও অতিক্রম করছে। তবে, আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতিতে আগামী সপ্তাহে দেশজুড়ে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী, গতকাল শনিবার সপ্তাহের শুরুতে দেশের সবকটি বিভাগেই কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে, সব অঞ্চলের বৃষ্টিধারা নেমে আসে নি। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগের হাতিয়ায় দেশের সর্বোচ্চ ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া, চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও নোয়াখালী অঞ্চলেও সর্বনি¤œ সাত থেকে সর্বোচ্চ ২০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া, যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৩৫ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য দেয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে বিহার ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। পূর্বভাস অনুযায়ী, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরণের ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
এর আগে গত মে মাসের শেষদিকে প্রতিবেশি ভারতের আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ওয়েদার অব ওয়েস্টবেঙ্গল এবারের বর্ষার নির্ঘন্ট ও অর্ধশত বছরের বর্ষার গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস দিয়েছিল। তাতে বলা হয়, ইন্ডিয়ান ওসিয়ানিক ডাইপোল পজিটিভ হওয়া এবং এল নিনো তীব্রতা কমে যাওয়ায় উত্তর পূর্ব ভারতের অধিকাংশ রাজ্যগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশেও এবারের বর্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেক্ষেত্রে এ বছর বর্ষায় ভারতের আসাম, মেঘালয়, মণিপুর ও ত্রিপুরার মত বাংলাদেশের চট্টগ্রামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে স্বাভাবিকের থেকে অনেকগুণ বেশি বৃষ্টিপাত লক্ষ্য করা যাবে। ওয়েদার অব ওয়েস্টবেঙ্গলের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস অনুযায়ী, বাংলাদেশে এ বছর বর্ষায় যথেষ্ট বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে এবং কোথাও কোথাও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকগুণ বেশি বৃষ্টিপাত হবে। স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকগুণ বেশি বৃষ্টিপাত হবে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলিতে। এর ফলে চট্টগ্রামসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো অতি ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যায় আক্রান্ত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর অর্থাৎ ১৪২৫ বঙ্গাব্দের বৈশাখেই ‘শ্রাবণের উপস্থিতি’ আগাম বর্ষার এক ধরণের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। সেই বছর মধ্য বৈশাখ পর্যন্ত দেশে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, তা গত সাড়ে তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে, এবার কালবৈশাখী মৌসুমের দৈর্ঘ্য বাড়লেও বিদায় নিতে যাওয়া গ্রীষ্মকালজুড়ে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপদাহ বয়ে গেছে। সিলেট, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণাসহ কিছু কিছু অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে কালবৈশাখীর দাপট পরিলক্ষিত হলেও সামগ্রিকভাবে তাপদাহেই পুড়তে হয়েছে বেশিরভাগ এলাকার মানুষকে। একটানা কয়েকবছর দেশে বর্ষাঋতুর দৈর্ঘ্য অনেকটা কমে এসেছিল। আগাম বন্যা ঠাঁই নিতে শুরু করেছিল ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু, ২০১৭ সালে বাঁক বদল ঘটিয়ে স্বমহিমায় আবির্ভূত হয় বর্ষাকাল। ওইবছর দেশে বন্যায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় অর্ধ কোটিরও বেশি বন্যাদুর্গত মানুষকে। বিশেষ করে হাওরাঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়। হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার পানিতে ফসল তলিয়ে যায়। এছাড়া, বন্যাকবলিত অন্তত ৩২টি জেলার বাড়িঘর ও ফসলাদি মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়। দেশের নদ-নদীর পানির ৯৩ শতাংশই আসে উজানের দেশগুলো অর্থাৎ নেপাল, ভারত এবং কিছুটা ভুটান থেকে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং মেঘনা অববাহিকায় বৃষ্টিপাতের ওপরই বাংলাদেশে বন্যা হবে কিনা তা অনেকটাই নির্ভর করে। উজানের পাশাপাশি দেশে অতিবৃষ্টি হলে জুনের শেষ দিক থেকে ক্রমাগতভাবে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। আর নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে দেশের তিনটি নদী অববাহিকার তিনশ’ ৪৩ টি পানি সমতল পর্যবেক্ষণ পয়েন্ট রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান প্রধান নদ-নদীর ৯০টি পয়েন্ট থেকে ৫৪টি পয়েন্টে পানির উচ্চতা পর্যবেক্ষণ করে বন্যার পূর্বাভাস দেয়া হয়।