বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আনতে চায় আমদানিকারকরা

23

সবুর শুভ

১০ দিন আগেও সব ধরনের পেঁয়াজের দাম ছিল কেজি ৩০-৩৫ টাকার ঘরে। এর তিন দিন পর এক লাফে দাম বেড়ে হল কেজি ৪৫ টাকা। সর্বশেষ লাফে দাম একেবারে ৫৬ টাকার ঘরে। তাও আবার পাইকারী বাজারে। খুচরা বাজারে ভারতের পেঁয়াজ মানভেদে কেজি ৬০-৬১ টাকায় ঠেকেছে। মিয়ানমান পেঁয়াজ মানভেদে কেজি ৫০-৫১ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বাজারে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চলা বন্যায় দেশের পেঁয়াজ বাজারে দাম বৃদ্ধির ঢেউ চলছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে আমদানিকারকরা ভারতমুখিতা থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির দিকে মনোযোগী হতে শুরু করেছেন। সহসা পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভবনা না থাকার বিষয়টি মাথায় রেখে ইতোমধ্যে তুরস্ক, চীন, পাকিস্তান ও মিশরের মতো দেশ থেকে পেয়াঁজ আমদানির দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। এসব দেশ থেকে পেয়াঁজ আসলে দাম বৃদ্ধির খড়গ মানুষের মাথা থেকে নামবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ভোগ্যপণ্যের বাজারে হঠাৎ নিত্য প্রয়োজনীয় মসলা পণ্য পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশ বিপাকে আছে সাধারণ মানুষ। ভারতীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ঘূর্ণিঝড় গুলাব ও বন্যার কারণে। একইসাথে মিয়ানমার থেকে আমদানি ব্যাহত হওয়ায় দেশিয় বাজারে পণ্যটির দাম অতিরিক্ত বেড়ে যায়।
ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে কেজি ৫০-৫৬ টাকায়। ভারতীয় ইন্দুরি জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৫ টাকায়। সাউথ ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫৪ টাকায়। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫২-৫৫ টাকায়। অথচ ১০ দিন আগেও একই বাজারে একই মানের নাসিক পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা, ইন্দুরি পেঁয়াজ ২৯-৩১ টাকা এবং মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে পাহাড়তলী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক নেতা মোহাম্মদ মোজাহের জানান, খুচরা বাজারে ভারতীয় সব ধরনের পেঁয়াজের দাম চলছে ৬০-৬২ টাকা। মিয়ানমারের পেঁয়াজ চলছে কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা পর্যন্ত।
খাতুনগঞ্জের কাঁচা পণ্যের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে ঘাটতি নেই। ভারতীয় বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও মিয়ানমার থেকে আমদানি ব্যাহত হলেও পণ্যের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ৫ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের সত্বাধিকারী বলাই কুমার পোদ্দার বলেন, গত দুই দিনে বাজারে অস্বাভাবিক বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এই সময়ে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। আমদানিকারকরা বাড়তি দামে পেঁয়াজ আমদানি করায় আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রধান পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ ভারতে গত এক সপ্তাহে দাম কেজিতে ৭-১০ রুপি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘূর্ণিঝড় গুলাবের প্রভাবে গত তিন-চার দিন মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি ব্যাহত হয়েছে। এই দুই কারণে দেশিয় বাজারে পণ্যটির দাম হঠাৎ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি অধিদপ্তর ও টিসিবির তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২২-২৩ লাখ মেট্রিক টন। গেল অর্থ বছরে (২০২০-২০২১) দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৩ লাখ টন। এর আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৯ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে সংগ্রহত্তোর অপচয় হিসেবে ২৫ শতাংশ অপচয় এবং আবাদকৃত পেঁয়াজের প্রায় ২ শতাংশ পরবর্তী বছরের বীজের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। সেই হিসেবে, প্রায় প্রতি বছর ৯-১০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। তবে আমদানিকৃত পেঁয়াজের সরবরাহ ও বিপণন পর্যায়ে ৫ শতাংশ অপচয় হয়। বিগত সময়গুলোতে আমদানিকৃত এসব পেঁয়াজের বেশিরভাগই আমদানি করা হতো ভারত থেকে। গেল তিন বছর ধরে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেন দেশের আমদানিকারকরা।
পেঁয়াজের দামে লাগাম টানার উপায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোজাহের বলেন, শুধু ভারতের উপর নির্ভরশীল না থেকে বিকল্প উৎস থেকেও পেঁঁয়াজ আমদানি সব সময় স্বাভাবিক রাখতে হবে।