বিএম ডিপো ট্র্যাজেডি কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি রক্ষা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে

11

সম্প্রতি চট্টগ্রামের সিতাকুণ্ডস্থ বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেকে হতাহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসকর্মীসহ ৬৯জনকে বিএম কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুত আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ করেছেন। ২০ জুন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নিহত ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের প্রত্যেককে ১৫ লক্ষ টাকা, ডিপোর নিহত শ্রমিক ও চালকসহ অন্যান্য নিহতদের ১০ লক্ষ টাকা, অঙ্গ হারানো ব্যক্তির পরিবারকে ছয় লক্ষ টাকা, সাধারণ আহতদের চার লক্ষ টাকা করে প্রদান করা হয়। তা ছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে যাওয়াদেরও ২ লক্ষ টাকা করে দেয়া হয়। বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ দ্রæত সময়ের মধ্যে সর্বমোট হতাহত ৬৯ জনের পরিবারকে ৫ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করেন। বাংলাদেশে অগ্নিকাÐজনিত হতাহতদের জন্য বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সহায়তা প্রদানের যে নেতিচাবক ধারণা রয়েছে তাতে বিএম কন্টেইনার কর্তৃপক্ষ ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো। তাদের প্রতিশ্রæতি প্রদানে যেমন আন্তরিকতা ছিল, মানবিক শ্রেয়বোধ ছিল, তেমনি প্রতিশ্রæতি রক্ষায়ও শতভাগ আন্তারিকতা পরিলক্ষিত হলো। এটি দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা দেখেছি বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষ প্রতিশ্রæতি প্রদান করে মাত্র। অবশেষে তা কার্যকর করে না। মানুষের হাজারো আশ্বাস, আশ্বাস ঘাতকতায় পর্যবাশত হতে দেখেছি। অথচ বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিদুর্ঘটনা চলাকালীন সময়ে কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তিদের ঘটনাস্থল হতে দ্রæত সরিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করানোর জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তার সাথে এগিয়ে আসে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ। দেশে ভয়াবহ বহু অগ্নিকাÐের দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য দেশের সাধারণ মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। বিএম কন্টেইনার ডিপোর দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যার প্রধান কারণ বিএম কন্টেইনার ডিপোর কর্তৃপক্ষ দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ কারণে কাজ করছেন। তার সাথে দেশের বেকার সমস্যা দূরিকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। তারা চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মানুষের সাথে মানবিক আচরণে এবং বিভিন্ন মানুষের বিচিত্র সমস্যা সাধারণে খুবই আন্তারিকতার পরিচয় দিয়েছেন। যার কারণে চট্টগ্রামসহ দেশের সাধারণ মানুষ তাদের সমস্যায় এগিয়ে এসেছে। বিএম কন্টেইনার ডিটোর অগ্নিকাÐে কর্তৃপক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রায় তের হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির খবর আমরা জেনেছি। এতো বড় আর্থিক ক্ষযক্ষতির পরও বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির চিন্তা না করে অগ্নিকাÐে হতাহতদের সহযোগিতায় বিশেষ আন্তারিকতার পরিচয় দিয়ে গেছেন। যাদের লাশ সনাক্ত হয়নি তাদের ডিএনএ টেস্টের পর, তাদের ব্যাপরেও সার্বিক সাহার্য্যরে হাত প্রসারিত করবেন বলে তারা প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এমন প্রবাদ তারা দেশে প্রমাণ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
আমরা জানি বিএম ট্র্যাজেডিতে যারা নিহত হয়েছেন, অঙ্গ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদের ক্ষয় ক্ষতি আর্থিক অনুদানে পুরনীয় নয়। কিন্তু ডিপো কর্তৃপক্ষ তা মেনেই নিহত, আহতদের পরিবার পরিজনের দুর্দশায় সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে দুর্গতদের ক্ষয়ক্ষতির ভাগিদার হচ্ছেন। বিগত ৪ মে ২০২২ বিএম কন্টেইনার ডিটোতে অগ্নিকাÐের দুর্ঘটনা ঘটে। ১৬ দিনের মধ্যে ২০ জুন ২০২২ উক্ত দুর্ঘটনায় হতাহতদের আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন দেশে এই প্রথম। তাই চেক প্রদান অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক বিএম কর্তৃপক্ষের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বিএম কর্তৃপক্ষের উপর স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংগত কারণে আন্তারিক। আমরা আশা করি, বিএম কর্তৃপক্ষ তাদের সকল ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠে পুনরায় বিএম কন্টেইনার ডিপোকে স্বাভাবিক করতে সক্ষম হবে। সরকারের সহযোগিতা, মানুষের দোয়া এবং কর্তৃপক্ষের দৃঢ় প্রচেষ্টায় বিএম ডিপো পুনরায় দেশের কল্যাণে এগিয়ে আসবে এমন ধারণা চট্টগ্রামবাসীসহ সমগ্র দেশের জনসাধারণের।