বিএম কন্টেইনার ডিপোর পর এবার পারাবত এক্সপ্রেসে আগুন অগ্নিকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে

15

 

চট্টগ্রাম নগর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে সীতাকুন্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাÐের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির দুঃখ এবং রেশ না কাটতেই শনিবার ঢাকা-সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটেছে। এতে ট্রেনের তিনটি বগি পুড়ে গেছে। আগুন লাগার শুরুতেই ট্রেনটি দাঁড়িয়ে পড়ায় সব যাত্রী ট্রেন থেকে নামতে সক্ষম হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় কয়েক ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পাওয়ার কার থেকে আগুন লেগেছে। ইতোমধ্যে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা আশা করব, দ্রুতই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। এ অগ্নিকান্ডের সঠিক কারণ উদ্ঘাটনের পাশাপাশি এক্ষেত্রে কারও অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। উদ্বেগের বিষয় হল, দেশে অগ্নি দুর্ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এরমধ্যে গত রবিবার রাজশাহী থেকে খুলনাগামী সাগরদাড়ি আন্তঃনগর ট্রেনে আগুন লেগেছে, যদিও দ্রুতই আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বিএম কন্টেইনার যখন আগুণে জ্বলছে তখন পাবনায় আরেকটি কারখানায় আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। একইসময়ে পুরো ঢাকায়ও আগুন লেগেছিল। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জহুর হতার মার্কেটে আগুন লেহেগছল, তবে স্থানীয় জনগণ ও ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত পদক্ষেপে নগরীর ঐতিহ্যবাহী এ মার্কেটটি রক্ষা পায়। বিএম কন্টেইনার সহ সংঘটিত অগ্নিকান্ডগুলোয় ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রাণহানিও ঘটছে। তবে হঠাৎ কেন শিল্প-কারখানায়, ট্রেনে, বাসে আগুন! এনিয়ে চলছে নানা আলাচনা। সম্প্রতি সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এবং সংবাদ বিশ্লেষকদের ধারণা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য অগ্নি দুর্ঘটনা কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। বিশেষ করে আগামী ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মাসেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। দেশের ইতিহাসে এটিই একমাত্র সর্ববৃহৎ ও দীর্ঘতম সেতু, যার সমস্ত ব্যয় দেশের নিজস্ব আর্থিক তহবিল থেকে করা হয়েছে। এসেতু একদিকে বাংলাশের আর্থিক সক্ষমতাকে প্রমাণ করেছে, অপরদিকে বর্তমান সরকারের বড় অর্জনগুলোর একটি এ সেতু। এ বিশাল অর্জনকে ম্লান করার নানা ষড়যন্ত্র অনেক আগে থেকে লক্ষ্য করা গেছে। এখন সেই অর্জন উৎসবকে ধ্বংস করার জন্য আগুন ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা, তা গভীর চিন্তার বিষয়। অতীতেও দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য আগুন সন্ত্রাস হয়েছিল, সরকার কঠোর হাতে তা দমন করেছিল। এবারও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ ক্ষেত্রে নজরদারী বাড়াতে হবে। আগুন যেভাবেই লাগুক বা যারাই এর পেছনে থাকুক, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, দেশে কোনো অগ্নিকান্ডের পর ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে করণীয় নিয়ে নানা আলোচনা হলেও কিছুদিন পর বিষয়টি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। দেশে শিল্প-কারখানা বাড়ছে, বড় বড় হাইলাইটস ভবনের সংখ্যা বাড়ছে। যেহেতু একটি বহুতল ভবনে অনেক মানুষ বসবাস বা অবস্থান করেন, সেহেতু এ ধরনের ভবনে অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করা উচিত হলেও বাস্তবে এর ব্যত্যয় ঘটছে। কর্তৃপক্ষের দুর্বল নজরদারির কারণে শ্রমিকরা ঝুঁকি নিয়েই কোনো কোনো শিল্পকারখানায় কাজ করছেন। কোনো অগ্নিকাÐে সম্পদের যে ক্ষতি হয়, তা একসময় পূরণ করা সম্ভব; কিন্তু কারও জীবনহানি হলে সেই ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়।
মানুষ সতর্ক না হলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। লক্ষ করা যায়, একজন ধূমপায়ী জনসমক্ষে ধূমপান করার পর আগুনসহ সিগারেটের অবশিষ্টাংশ যেখানে সেখানে ফেলছে। এ দৃশ্য কাউকে বিচলিত করছে না; মানুষ যে যার মতো চলাচল করছে; যেন কারোই কোনো দায় নেই। দেশে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের পরিধি যতটা বাড়ছে, সেভাবে মানুষের দায়িত্ববোধে পরিবর্তন আসছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা মতো ন্যুনতম পর্যায়ে থাকবে কি না, এ বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। প্রতিটি অগ্নিকান্ডই মানুষের জন্য সতর্ক বার্তা রেখে যায়। অগ্নিকান্ড এড়াতে প্রথমেই যে বিষয়টির ওপর নজর দেওয়া দরকার, তা হলো, পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া। ব্যক্তিগত পর্যায়ে বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকাই যথেষ্ট নয়, সেসবের ব্যবহার জানা কর্মী এবং তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ থাকাও জরুরি। এছাড়া অগ্নিকান্ডে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরে বার্ন হাসপাতাল নির্মাণ করা এখন সময়ের দাবি।