বিএনপি ভবিষ্যতে ‘হামাগুঁড়ি’ কর্মসূচি পালন করবে

9

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় করার ঘোষণা দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর হাঁটা কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। এখন দম ফুরিয়ে যাওয়ায় মিছিলের পরিবর্তে হাঁটা শুরু করেছে। ভবিষ্যতে বিএনপি হামাগুঁড়ি কর্মসূচি পালন করবে। মূলত এসব কর্মসূচি দিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চায় দলটি। সারাদেশের আটটি জায়গায় সমাবেশের ডাক দেয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি।
গতকাল আন্দরকিল্লা মোড়ে শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কথিত সরকার উৎখাত আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত চক্রের অরাজকতা সৃষ্টি ও অপতৎপরতার বিরুদ্ধে জনগণের জানমাল রক্ষায় এ সমাবেশের আয়োজন করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ।
মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পুরো বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টার অংশ হিসেবে বিএনপি এবং তাদের জোট ধারাবাহিকভাবে নানা কর্মসূচি পালন করছে। তারা ঘোষণা দিয়েছিল ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় করে দিবে। আর আগ বাড়িয়ে আবার ঘোষণা দিয়েছিল ১০ তারিখের পর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নাকি দেশ চলবে। ঘোষণা দিল, তারা ১০ লক্ষ মানুষের সমাবেশ করবেন। উনারা নয়া পল্টনের অফিসের সামনে সমাবেশ করবেন বলেছেন। নয়াপল্টনের এক কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে বসলেও মানুষ হবে ৩০ হাজার। কোনোভাবেই নয়াপল্টন থেকে সরবে না, শেষ পর্যন্ত গরুর হাট যেখানে বসে সেখানে সমাবেশ করলো। তাদের অফিসে পাওয়া গেল তাজা বোমা, পানির বোতল ও কয়েক টন চাল। তাদের পরিকল্পনা ছিল ঢাকা শহরে বোমাবাজি করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা। আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম সতর্ক থাকবো। ঢাকা শহরজুড়ে সতর্ক পাহারায় ছিলাম। যে মাঠে সভা করেছে সেখানে ৪০ হাজার লোকের সমাবেশ করলো। ঘোড়ায় তিনটি ডিম পেড়েছে। ঘোড়ার উপর লিখে দিয়েছে বিএনপি। ১০ তারিখ তারা দশ লক্ষ মানুষের সমাবেশ বলে ঘোড়ার ডিম পেড়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ রাজপথের দল। আমাদের নেতাকর্মীদের খোঁচা দিলে জ্বলে উঠে। তারা আমাদের খোঁচা দিয়েছে। দিয়াশলাই কাঠিতে যেমন খোঁচা দিলে জ্বলে উঠে তেমনি আওয়ামী লীগকেও খোঁচা দিলে জ্বলে উঠে। আমরা জ্বলে উঠেছি। আমরা রাজপথে নেমেছি। আগামী নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনা ছাড়া আমরা ঘরে ফিরে যাব না।
বিএনপি এখন লাইনে এসেছে জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মির্জা আব্বাস, মির্জা ফখরুল সাহেব জেলে যাওয়ার আগে বক্তৃতা করেছেন সরকারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবেন। আওয়ামী লীগের ভীত বহু গভীরে প্রোথিত। আওয়ামী লীগকে কেউ ধাক্কা দিতে গেলে নিজে পড়ে যায়। তারাও আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিতে গিয়ে নিজেরা পড়ে গেছে। মির্জা আব্বাস ও মির্জা ফখরুল সাহেব বক্তৃতা করলেন আমরা কাউকে ধাক্কা দিতে চাই না। আসলে ধাক্কা দিতে গিয়েছিলেন। গিয়ে যখন পড়ে গেলেন এখন বলছেন আমরা কাউকে ধাক্কা দিতে চাই না।
বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহবান জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, আপনারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সমগ্র পৃথিবীতে স্বীকৃত ও প্রশংসিত নির্বাচন হচ্ছে ২০০৮ সালের নির্বাচন। বিএনপি পূর্ণশক্তি নিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আসন পেয়েছিল ২৯টি। উপ-নির্বাচনে আরও ২-৩টি পেয়ে ৩০টি অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ডান, বাম অতিবাম, তালেবান সবাইকে নিয়ে ঐক্য করে আসন পেয়েছিল ৬টি। তাই তারা বুঝতে পেরেছে আগামী নির্বাচনেও কোনো সম্ভাবনা নেই। সমগ্র পৃথিবী, বিশ্ব সম্প্রদায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করছে। একবার বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জাতীয় সরকার, আরেকবার বলে আরেকরকমের সরকার। দুনিয়ার কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। আছে কেবল পাকিস্তানে। আমাদের দেশকে তারা অনুকরণ করতে পারেন। বাংলাদেশ পাকিস্তানকে অনুকরণ করে না। পাকিস্তান বাংলাদেশকে অনুকরণ করে। বাংলাদেশে বিশ্বের সমস্ত গণতান্ত্রিক দেশে যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তারা নির্বাচনকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করে। আমাদের দেশেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবেন, উনার অধীনেই নির্বাচন হবে। জনগণ মেনে নিলে আমাদের আপত্তি নেই।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনের ট্রেনে তোলার দায়িত্ব আমাদের নয়। ২০১৪ সালে উঠে নাই, ২০১৮ সালে ট্রেনে চড়েছিল। তারা চায়, ‘ভাতর গরাস মুখে তুলে দিয়ে গিলেও দিতে হবে’। সেই দায়িত্ব সরকারের নয়। এ দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনাই জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হবেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আওয়ামী লীগ পরপর চতুর্থবার সরকার গঠন করে ক্ষমতা গ্রহণ করবে। পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় বসবে। নির্বাচনে বিএনপির কোনো সম্ভাবনা নেই। বিএনপি অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। নাশকতা করার ষড়যন্ত্র করেছে, বিশৃঙ্খলা করার ষড়যন্ত্র করেছে। আন্দোলনের বাহানা করছে। সুযোগ পেলেই আবার নাশকতা করবে, সুযোগ পেলেই জনগণকে ছোবল মারবে। সতর্ক থাকতে হবে। রাজপথে নেমেছি, নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থাকবো। কাউকে এই বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায় তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিহত করতে হবে।
শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, এই বাংলাদেশে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি। আজকে বিএনপি বিভাগীয় সম্মেলনে বহু লোককে প্যাকেটে প্যাকেটে বিরিয়ানি দিয়ে ডাকা হয়েছে। আওয়ামী লীগের শান্তি সম্মেলনে শান্তির উদ্দেশ্যে এসেছি। কিন্তু কাউকে এক কাপ চাও খাওয়াতে হয়নি। জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে আসলে নিরাপত্তার অনেক কঠোরতা সত্তে¡ও তৃণমূল পর্যায়ের সকল নেতাকর্মী তৃঞ্চাকে উপেক্ষা করে হাজির ছিলাম। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিরিয়ানির রাজনীতি করে না। বিরিয়ানির রাজনীতি করে তারেক রহমান।
তিনি বলেন, প্রত্যেক নেতাকর্মীকে সাধারণ মানুষকে একটি কথা বলতে হবে, তারেক রহমান নিজের দলের নেতাকর্মীর সাথেও বেঈমানি করছে। যে সন্তান মায়ের কোনো খবর নেয় না সেই সন্তানকে এই পৃথিবীতে কেউ বিশ্বাস করবে না। খালেদা জিয়া বিদেশে গেছেন, তাকে ঘরেও আনেনি তারেক রহমান। আজকে তারেকের মা শেখ হাসিনার দয়ায় নিজের ঘরে চিকিৎসা নিতে পারছেন। আমরা জানি খালেদা জিয়া তার ঘনিষ্ঠজনদের বলছেন, আমার ছেলের কাছে আমাকে আর পাঠাইওনা সে রাতারাতি আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে পারে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আজকে একঠি কঠিন সময় আমরা অতিবাহিত করছি। একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অন্যদিকে কোভিড-১৯ এর কারণে বৈশ্বিক অবস্থা টালমাটাল। একটি রাজনৈতিক দল অবৈধ উপায়ে বন্দুকের নলের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিল। সু² কারচুপির মাধ্যমে এ দেশে সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল। একাধিকবার তারা দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু তারা মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেননি। তারা সবসময় ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত করে এ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করেননি। তাদের সংক্রান্ত প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ সবসময় সতর্ক অবস্থানে আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ দেশের মানুষের পাশে থাকার জন্য বলেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় শান্তি সমাবেশ করেছি।
মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনীর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, খোরশেদ আলম সুজন, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলতাফ হোসেন বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, তথ্য সম্পাদক চন্দন ধর, আইন সম্পাদক শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, রোটারিয়ান ইলিয়াছ, আব্দুল লতিফ টিপু, মোহাম্মদ হোসেন, আবু তাহের, ইকবাল হাসান, মুজাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।